Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক নিয়ে ফের বিপাকে রাজ্য

বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে (সেজ) তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক নিয়ে ফের সমস্যায় পড়ল রাজ্য সরকার। শুক্রবার বানতলা চর্মনগরীর লাগোয়া তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক নিয়ে স্থিতাবস্থা জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে এখন নতুন করে কোনও সংস্থাকে সেখানে জমি বরাদ্দ করতে পারবে না রাজ্য। শুধু তা-ই নয়, আগে বরাদ্দ করা জমি ব্যবহার না হয়ে থাকলে, প্রয়োজনে তা চর্মশিল্পের জন্য নিয়ে নেওয়া যেতে পারে বলেও জানিয়ে দিল আদালত।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০০
Share: Save:

বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে (সেজ) তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক নিয়ে ফের সমস্যায় পড়ল রাজ্য সরকার।

শুক্রবার বানতলা চর্মনগরীর লাগোয়া তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক নিয়ে স্থিতাবস্থা জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে এখন নতুন করে কোনও সংস্থাকে সেখানে জমি বরাদ্দ করতে পারবে না রাজ্য। শুধু তা-ই নয়, আগে বরাদ্দ করা জমি ব্যবহার না হয়ে থাকলে, প্রয়োজনে তা চর্মশিল্পের জন্য নিয়ে নেওয়া যেতে পারে বলেও জানিয়ে দিল আদালত।

এই তথ্যপ্রযুক্তি পার্ককে ঘিরে চর্মশিল্প বনাম রাজ্যের লড়াই চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। বানতলায় চর্ম ব্যবসায়ীদের সংগঠন কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা থেকে সরে গিয়েছিল নির্মাতা সংস্থা এম এল ডালমিয়া অ্যান্ড কোম্পানি। চর্মশিল্পের জন্য নেওয়া জমি বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে চড়া দরে বিক্রি করেছিল তারা। চর্মশিল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি অন্য কাজে ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছিল রাজ্যও।

এই অভিযোগ নিয়েই একাধিক বার আদালতের দ্বারস্থ হন চর্ম ব্যবসায়ীরা। এ বছর তাঁদের দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বানতলা সেজ-এ কোথায় কোন জমি কী কারণে রাজ্য বরাদ্দ করেছে, তার রিপোর্ট চায় আদালত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সেই রিপোর্ট জমা দেয়নি রাজ্য। এ দিন সেই মামলার সূত্রেই স্থিতাবস্থা বজায়ের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

গোড়া থেকেই বারবার সমস্যার মুখে পড়েছে বানতলায় ১৩০ একরে তৈরি তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। প্রকল্প চালু না-হলে, বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা হারাতে হতে পারে বলে মার্চ মাসেই বাণিজ্য মন্ত্রকের হুঁশিয়ারির মুখে পড়েছে পার্কের নির্মাতা সংস্থাগুলি। এ বার সমস্যা আরও গভীর হল আদালতের এই রায়ে। পার্কের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির অভিযোগ, নির্মাতা সংস্থা, রাজ্য ও চর্ম ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী লড়াইয়ে আগাগোড়া মার খাচ্ছে তারা।

মূলত রাজ্যে জমি সমস্যার কারণেই তৈরি হয়েছিল বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। সেক্টর ফাইভ ও রাজারহাটে জমির অভাব। থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। এই সমস্যার কিছুটা সুরাহা করেছিল ওই পার্ক। ১৮টি সংস্থা জমি নিয়েছে সেখানে। বাজার দরে জমি কিনেছে কগনিজ্যান্ট, টেক মহীন্দ্রার মতো সংস্থা। কিন্তু সেক্টর ফাইভ বা রাজারহাটের পাশে বানতলা এখনও ‘দুয়োরানি’ থেকে গিয়েছে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষোভ। দূষণে সমস্যা তো আছেই। সঙ্গে রয়েছে বেহাল পরিকাঠামো। রাস্তাঘাট, আলো, নিকাশি ব্যবস্থা— ক্ষোভ সব নিয়েই।

রাজ্যে উৎপাদন ও বড় শিল্পের মতো তথ্যপ্রযুক্তিতেও নতুন লগ্নি নেহাতই কম। আর সেই লগ্নির খরায় বানতলা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে জমির চাহিদা এমনিতেই তলানিতে। ফলে প্রকল্প শেষ করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনির্দিষ্ট কাল বাড়তি টাকা গুনে যেতে চাইছে না নির্মাণ সংস্থাগুলি।

তার উপর দূষণের কারণে এখানে প্রকল্প শেষ করতে পারেনি টেক মহীন্দ্রা। কারণ, প্রকল্পের কাজ চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নির্মাণ কর্মীরা। পরে প্রকল্প চালু করতে আগ্রহ দেখালেও, কাজ শুরু হয়নি এখনও। দূষণের জেরে ধনসেরি ও ফোরাম প্রজেক্টসের দু’টি বড় বাড়ি প্রায় তৈরি হয়ে গেলেও, তা বিপণন করা যাচ্ছে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে এখানে অফিস তৈরির জন্য লিজ বা ভাড়ায় জায়গা নিতে এগোচ্ছে না কোনও সংস্থা।

এই সব কিছুর পরে এ বার আদালতের এই নির্দেশের জেরে তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়ায়, সে দিকেই নজর সকলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE