বাস্তবে লগ্নি এবং কর্মসংস্থান কেমন হয়েছে, তা শিল্প মহলের মুখ দিয়েই বলানোর কৌশল নিল রাজ্য। সে জন্য বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের (বিজিবিএস) পরে, এ বার ১৮ ডিসেম্বর ‘বিজ়নেস ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’-এর আয়োজন করতে চলেছে তারা। সেখানে লগ্নিকারীরা নিজেরাই পেশ করবেন লগ্নি ও কাজের হিসাব। যদিও এই পরিকল্পনা আখেরে কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উঠেছে প্রশ্ন।
বিজিবিএসে প্রতি বারই লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব এসেছে বলে দাবি করে রাজ্য। সেই সঙ্গে এটাও দাবি থাকে, বাংলায় কর্মসংস্থান দ্রুত গতিতে বাড়ছে। তবে বিরোধীদের বরাবরের অভিযোগ— ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে এই সব পরিসংখ্যান। বরং বাস্তবে রাজ্যে চলছে লগ্নির খরা। বহু সংস্থা ছেড়ে চলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের জমি। এই পরিস্থিতিতে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে লগ্নিকারীদের মুখ থেকে বিনিয়োগ-কাজের বাস্তব অবস্থা বলিয়ে নিতে এমন এক সম্মেলনের আসন্ন আসরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ।
শুক্রবার নবান্নে শিল্প সংক্রান্ত সিনার্জি কমিটির বৈঠক হয়। তার পরে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থ দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা অমিত মিত্র জানান, ১৮ ডিসেম্বর ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে ‘বিজ়নেস ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, বিজিবিএস এবং উত্তরবঙ্গে শিল্প সম্মেলনের সাফল্যগুলি তুলে ধরা হবে এটির মাধ্যমে। যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের মুখ দিয়েই বলানো হবে এ রাজ্যে শিল্পের প্রকৃত অগ্রগতির কথা। লগ্নির পরিমাণ, কর্মসংস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলিও সকলের সামনে মেলে ধরবেন তাঁরা।
দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে নতুন এই সম্মেলনকে। প্রথমটি উন্নয়নমুখী ও বৃদ্ধিকেন্দ্রীক। কর্মসংস্থান, রফতানি, প্রাকৃতিক ও রাজস্ব আদায়কে কেন্দ্র করে শিল্পগুলিকে ভাগ করা হয়েছে সেখানে। দ্বিতীয়টি, প্রকল্পমুখী। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করার পরে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কী লক্ষ্য রয়েছে সংস্থাগুলির, তা শোনা।
রাজ্যের বক্তব্য, এটি শীর্ষ সম্মেলন(সামিট) নয়, সম্মেলন (কনক্লেভ)। তাই এখানে সাফল্যের স্বাদ পাওয়া শিল্প মহলের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা শোনা হবে। অমিত বলেন, “উদ্দেশ্য, সাফল্যের উদাহরণ তুলে ধরা হবে। সংস্থাগুলির মুখ থেকেই শোনা হবে কত বিনিয়োগ, রফতানি ও কর্মসংস্থান হয়েছে। উৎপাদন ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কি না বা আরও কী করে বিনিয়োগ টানা যায়, ভবিষ্যতের সেই রূপরেখাও শোনার লক্ষ্য থাকবে।”
কর্মসূচিতে কারা থাকবেন, এটা স্পষ্ট না করলেও রাজ্য বলেছে, শিল্পের থেকেই জানা যাবে কারা সেখানে যোগ দেবেন। তবে বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, অতীতেও এক বার সব লগ্নির মোট অঙ্ক শ্বেতপত্রের আকারে প্রকাশের চেষ্টা করেছিল তৃণমূল সরকার। কিন্তু তা এখনও সামনে আসেনি। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, শিল্পকে আর্থিক উৎসাহ দিতে সুনির্দিষ্ট নীতি (ইনসেন্টিভ পলিসি) নেই রাজ্যে। ফলে এই ধরনের উদ্যোগ সত্যি কতটাবাস্তবায়িত হবে, সেই সন্দেহ থাকে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)