দুনিয়া জুড়ে ইস্পাত শিল্পের সঙ্কটের শিকড় অনেক গভীরে। শুধু বাণিজ্যের পথে শুল্কের দেওয়াল তুলে তার সমাধান সম্ভব হবে না বলে দাবি করল বেজিং।
চিনের সস্তা ইস্পাতে দেশ ছেয়ে যাওয়া রুখতে শনিবারই কিছু পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ওই একই পথে হেঁটেছে ভারত ও মার্কিন মুলুক। ব্রিটেনে এই সমস্যায় জেরবার টাটা স্টিল ব্যবসা বিক্রির কথা ঘোষণা করার পরে তোলপাড় ইউরোপও। এই অবস্থায় বেজিংয়ের পাল্টা দাবিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সকলে।
সোমবার চিনের বাণিজ্য মন্ত্রকের দাবি, ইস্পাতের সরবরাহ এই মুহূর্তে উপচে পড়ার কারণ বিশ্ব অর্থনীতির ঢিমেতালে বৃদ্ধি এবং তার জেরে চাহিদায় মন্দা। তাই শুধুমাত্র শুল্ক বসিয়ে চিনা ইস্পাত আমদানির রাস্তা রুখে সেই সমস্যার সমাধান অসম্ভব বলে তাদের ধারণা।
২০০৮ সাল থেকেই সারা বিশ্বে ইস্পাতের চাহিদা তলানিতে। অথচ সেখানে উপচে পড়ছে জোগান। অভিযোগ, দেশের বাজারে চাহিদা কম থাকায় দুনিয়া জুড়ে কার্যত জলের দরে ইস্পাত পণ্য রফতানি করছে চিনা সংস্থাগুলি। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, সদ্য এই কারণে ব্রিটেনে ব্যবসা বিক্রির কথা জানিয়েছে টাটা স্টিল। মুনাফার মুখ দেখতে খাবি খাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাতা আর্সেলর-মিত্তল। ইস্পাত শিল্পের হাল ফেরাতে তার উৎপাদন ছাঁটাইয়ের গতি বাড়ানোর জন্য চিনের কাছে সম্প্রতি আর্জি পর্যন্ত জানিয়েছে ব্রিটেন। পাঁচ বছরে ইস্পাত উৎপাদন ধাপে ধাপে কিছুটা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেজিংও। কিন্তু যে ভাবে সারা পৃথিবীর ইস্পাত শিল্পের সঙ্কটের জন্য শুধু তাদের দিকেই আঙুল উঠছে, তা আটকাতে চিন এ বার ‘পাল্টা আক্রমণ’-এর পথে হাঁটল বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ইস্পাত তৈরি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আমেরিকা, ইউরোপ-সহ সারা দুনিয়ার তোপের মুখে পড়ছে বেজিং। বারবার দাবি উঠছে তাদের পণ্যের উপর অনেক বেশি চড়া হারে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি (উৎপাদন খরচের থেকেও কম দামে পণ্য বিক্রির জন্য তার উপর বসানো শাস্তিমূলক শুল্ক) বসানোর। মূলত এই ‘চিনা আক্রমণের কারণ’-এই ৩০ মার্চ ব্রিটেনে নিজেদের ব্যবসা বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানায় টাটা স্টিল। চিনের সস্তা পণ্যের সঙ্গে দামের লড়াইয়ে পাল্লা দিতে না-পেরে এর আগেও কর্মী ছাঁটাইয়ে বাধ্য হয়েছে তারা। ওই রাস্তায় হাঁটতে হয়েছে ইস্পাত শিল্পের আঁতুড়-ঘর ব্রিটেন-সহ ইউরোপের আরও ইস্পাত সংস্থাকে। সস্তার চিনা পণ্য নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে উন্নত দুনিয়ার প্রায় সর্বত্র। বেশির ভাগ দেশই অভিযোগ এনেছে চিনা বাজারে তেমন চাহিদা না-থাকায়, সারা দুনিয়ায় ইস্পাত বাজার ছেয়ে গিয়েছে ড্রাগনের দেশের সংস্থাগুলির সস্তা পণ্যে।
পরিস্থিতি এমনই যে, ধারের বিপুল বোঝা কমাতে খাবি খাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাতা আর্সেলর-মিত্তলও। সংস্থার কর্ণধার লক্ষ্ণী মিত্তল সম্প্রতি মেনে নিয়েছেন, আমেরিকা ও ইউরোপে চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু বিশ্ব বাজারের চাহিদার তুলনায় ঢের বেশি ইস্পাত উৎপাদন করছে চিনা সংস্থাগুলি। সারা পৃথিবীতে জলের দরে তা বিক্রি করছে তারা। তাই দাম নেমে এসেছে তলানিতে। কঠিন হচ্ছে মুনাফার মুখ দেখা।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর অর্ধেক ইস্পাতই তৈরি হয় চিনে। ২০১৫ সালে রেকর্ড ১১.২০ কোটি টন রফতানি করেছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy