বিশ্ব জুড়ে নানা অশান্তি এবং অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও গত কয়েক দিনে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরেছে ভারতীয় শেয়ার বাজারে। টানা নামার পরে গত সপ্তাহে ১২৯৪ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স ফের ৮২,৫০০ পার করেছে। নিফ্টি পৌঁছেছে ২৫,২৮৫-তে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক এ দেশের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৩% থেকে বাড়িয়ে ৬.৫% করেছে। লাগাতার বিক্রির পরে, অল্প হলেও ভারতের বাজারে ফের শেয়ার কিনতে শুরু করেছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। গত সপ্তাহের শেষ চার দিনে যার অঙ্ক ছিল প্রায় ৩২৯০ কোটি টাকা।
বাজার ওঠায় স্বস্তি ফিরেছে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিকারীদের মনে। তেজি নতুন ইসুর বাজারও। শেয়ার বাজার মাঝেমধ্যে একটু ঝিমিয়ে পড়লেও, নতুন ইসু অর্থাৎ আইপিও (বাজারে সংস্থার প্রথমবার ছাড়া শেয়ার) নিয়ে উন্মাদনায় কমতি নেই। ছোট হোক বা বড়, কোনওটাই বিফল হচ্ছে না। গত সপ্তাহে টাটা ক্যাপিটাল বাজারে এনেছিল ১৫,৫১১ কোটি টাকার ইসু। কেনার আবেদন জমা পড়ে দ্বিগুণ। এলজি ইলেকট্রনিক্স শেয়ার ছেড়েছিল ১১.৬০৭ কোটি টাকার। আবেদন পেয়েছে প্রায় ৫৪ গুণ, ১৭ বছরে সর্বাধিক। আজ বাজারে নথিবদ্ধ হবে টাটা ক্যাপিটালের শেয়ার। আবেদনকারীদের নজর থাকবে দুই শেয়ারেরই প্রথম কেনাবেচা শুরুর দামে। নতুন ইসুর প্রতি লগ্নিকারীদের খিদে এতটাই বেশি যে, নাগাড়ে আইপিও আসা সত্ত্বেও প্রায় সবই ভাল ভাবে উৎরে যাচ্ছে। সেগুলিতে পুঁজি ঢালছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাও। এত নতুন সংস্থা নথিবদ্ধ হতে থাকায় ভারতীয় শেয়ার বাজারও কলেবরে বাড়ছে। সেনসেক্স সর্বোচ্চ জায়গা থেকে ৩০০০ পয়েন্ট পিছনে থাকলেও, বিএসই-তে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট দাম ছুঁয়েছে ৪৬২.০৮ লক্ষ কোটি টাকা। নথিবদ্ধ লগ্নিকারী ২২.৯৬ কোটি। ৫০০০-এরও বেশি সংস্থা নথিবদ্ধ।
লগ্নি আসছে ফান্ডেও। শেয়ার বাজারের অনিশ্চয়তা সেপ্টেম্বরে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নি কমিয়েছিল ৯%। তবু তা ছোঁয় ৩০,৪২২ কোটি টাকা। মোটা লগ্নি জারি এসআইপি পথে। গত মাসে ঢুকেছে ২৯,৩৬১ কোটি টাকা। আগের মাসের তুলনায় ১০০০ কোটিরও বেশি। সব ফান্ডের মোট পরিচালিত সম্পদের পরিমাণ ৭৫.৬১ লক্ষ কোটি টাকা। মোট ফোলিও ছাড়িয়েছে ২৫ কোটি। ব্যাঙ্কে সুদ কমায় এবং শেয়ার-ফান্ডে কর সংক্রান্ত সুবিধা বেশি থাকায় এখন অনেকেই শেয়ার এবং ফান্ডে বেশি করে টাকা লগ্নি করছেন।
গত সপ্তাহে শুরু হয়েছে সংস্থাগুলির জুলাই-সেপ্টেম্বরের আর্থিক ফল প্রকাশের পালা। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস-এর বিক্রি ২.৪% বেড়ে পৌঁছেছে ৬৫,৭৯৯ কোটি টাকায়। নিট লাভ ১.৪% বেড়ে হয়েছে ১২,০৭৫ কোটি। শেয়ার পিছু ১১ টাকা অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ডও ঘোষণা করেছে। চলতি সপ্তাহে রিলায়্যান্স, ইনফোসিস, টেক মাহিন্দ্রা, উইপ্রো, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, নেসলে, এইচসিএল টেক ইত্যাদির ফল পপ্রখা। সব মিলিয়ে আগামী কয়েক দিন চঞ্চল থাকতে পারে বাজার।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)