E-Paper

বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীর নথিভুক্ত সংস্থার শেয়ারে বিনিয়োগ, ফের ধাক্কা শেয়ারে

আদানিদের মন্তব্য, পুরনো অভিযোগ নতুন করে তোলা হয়েছে এই রিপোর্টে। এটা জর্জ সোরসের অর্থে গড়ে ওঠা সংস্থাটির নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আনা অভিযোগ, যা কিছু বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের সমর্থন পাচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৬
Gautam Adani.

—প্রতীকী ছবি।

আমেরিকার শেয়ার সংক্রান্ত গবেষণাকারী হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ শেয়ার দরে প্রতারণা এবং বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ তোলার পরে ১৫,০০০ কোটি ডলারের (প্রায় ১২,১৫,০০০ কোটি টাকা) শেয়ার সম্পদ হারিয়েছিল আদানিরা। প্রায় সাত মাস পরে বৃহস্পতিবার গোটা দেশ ফের উত্তাল হল আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণার নতুন অভিযোগ সামনে আসায়। এ দিন ফের প্রায় ৪% পর্যন্ত পড়ে গেল তাদের সমস্ত সংস্থার শেয়ার দর। রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে অর্গানাইজ়ড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)। বিশ্ব জুড়ে অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকদের নিয়ে তৈরি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এটি।

গত জানুয়ারিতে হিন্ডেনবার্গ যা বলেছিল, খানিকটা সেই সুরেই বেআইনি ভাবে আদানিদের শেয়ার দর অল্প সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে ফুলেফেঁপে ওঠার কথা বলেছে ওসিসিআরপি। যদিও গত বারের মতো এ দফাতেও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে আদানি গোষ্ঠী। তবে রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি ফের আদানিদের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠনের দাবি তুলেছে। চেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। কেন শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি এবং সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ কমিটি এই সব প্রতারণার সন্ধান পেল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান ব্যবসায়ী জর্জ সোরোস এবং রকেফেলার ব্রাদার্সের মতো সংস্থার অর্থে গড়ে ওঠা ওসিসিআরপি-র অভিযোগ, মরিশাসের একাধিক অস্বচ্ছ লগ্নি তহবিলের মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীর নথিভুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ারে কোটি কোটি ডলার ঢালা হয়েছে। লগ্নি করেছে আদানি পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দুই ব্যক্তি। একে তো তাঁদের আড়াল করার জন্য ওই সব অস্বচ্ছ লগ্নি সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে। তার উপর এ ভাবে ভারতীয় নথিভুক্ত সংস্থায় প্রোমোটার গোষ্ঠীর সম্পর্কযুক্ত কারও লগ্নির ঊর্ধ্বসীমার বিধিও ভাঙা হয়েছে। তাঁরা ভুয়ো লগ্নি সংস্থা তৈরি করেও ভারতের বাজারে পুঁজি ঢেলেছে বলে অভিযোগ।

ওসিসিআরপি জানিয়েছে, আদানিদের কিছু অভ্যন্তরীণ ই-মেল এবং মরিশাসের কিছু নথি খতিয়ে দেখার ভিত্তিতে করা তদন্তে দেখা গিয়েছে যে, অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে মরিশাসের ‘রহস্যময়’ লগ্নিকারীরা ওই সব ‘অস্বচ্ছ’ সংস্থাগুলির মাধ্যমে আদানিদের সংস্থার শেয়ারে লেনদেন করেছে। সংস্থাগুলি পরিচালিত হত আদানি গোষ্ঠীর প্রোমোটারদের সহযোগীদের দ্বারা। তারা টানা কয়েক বছর ধরে আদানিদের সংস্থাগুলির শেয়ার কেনাবেচা করে তার দাম বাড়িয়ে দেয়। ওই লগ্নি হয় ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। আদানিদের শেয়ার সম্পদ বিপুল বাড়ে এবং ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী হওয়ার তকমা পায় তারা।

এ ব্যাপারে দু’জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে ওসিসিআরপি। আরব আমিরশাহীর নাসের আলি শাবান আহলি এবং তাইওয়ানের চ্যাং চুং লিং। সংস্থাটির দাবি, আদানিদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ওই দুই ব্যক্তির ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা গৌতম আদানির বড় ভাই বিনোদ আদানির সংস্থায় ডিরেক্টর এবং শেয়ারহোল্ডার হিসাবে কাজও করেছে। তারা মরি‌শাসের দু’টি লগ্নি সংস্থার মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নি করেছে এবং প্রভূত মুনাফা করেছে। ওই দুই লগ্নি সংস্থার দেখাশোনার দায়িত্বে দুবাইয়ের যে সংস্থাটি ছিল, তার মালিক ছিলেন বিনোদের এক প্রাক্তন কর্মী। আদানিরা অবশ্য ওসিসিআরপির ওই দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ওসিসিআরপির প্রশ্ন, তা হলে কি আহলি এবং চ্যাং প্রোমোটারদের হয়েই কাজ করেছে? তা যদি হয়, তবে তো নিজেদের গোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশের বেশি শেয়ার আদানিদের নিজেদের দখলেই ছিল। নথিভুক্ত সংস্থা হিসাবে যা আইনত বৈধ নয়। ওসিসিআরপি অবশ্য বলেছে, এর কোনও প্রমাণ নেই যে, চ্যাং এবং আহলি যে টাকা লগ্নি করেছে তা আদানিদের কাছ থেকেই পাওয়া। তবে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, ওই দু’জনের লেনদেন আদানি পরিবারের সদস্যদের যোগসাজসেই হয়েছে।

আদানিদের মন্তব্য, পুরনো অভিযোগ নতুন করে তোলা হয়েছে এই রিপোর্টে। এটা জর্জ সোরসের অর্থে গড়ে ওঠা সংস্থাটির নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আনা অভিযোগ, যা কিছু বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের সমর্থন পাচ্ছে। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টকে ফের চাগিয়ে তোলাই উদ্দেশ্য। এটি এক দশক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া মামলার ভিত্তিতে তোলা হয়েছে। অভিযোগগুলি নিয়ে আগেই ডিরেক্টর অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স তদন্ত করেছে। একটি বিচারবিভাগীয় কর্তৃপক্ষ এবং একটি ট্রাইবুনাল উভয়েই জানিয়েছে যে, কোনও অনিয়ম হয়নি।

তবে আদানিরা যাই বলুক ওসিসিআরপির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদানিদের বেআইনি আর্থিক লেনদেন নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠনের দাবি ফের তুলেছে কংগ্রেস। বলেছে, একমাত্র জেপিসির তদন্তই পারবে সত্য প্রকাশ করতে। আদানিদের সঙ্গে যুক্ত ভুয়ো সংস্থা নিয়ে তদন্তের ব্যাপারে সেবির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। সিপিএমের তোপ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সম্পর্কের খাতিরেই গুজরাত ভিত্তিক শিল্প সংস্থাটির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে দাবি করেছে তারা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Adani Group Stock Market Gautam Adani

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy