পাঁচশো কোটি টাকার বেশি ধার নিয়েছে অথচ সময়ে শোধ দেয়নি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে এ বার এমন সব সংস্থার তালিকা চাইল সুপ্রিম কোর্ট। তা ছাড়া, যে সব সংস্থার ঋণ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে গত কয়েক বছরে ঢেলে সাজা (ডেট রিস্ট্রাকচারিং) হয়েছে, দেড় মাসের মধ্যে তাদের নামও জানাতে বলল তারা।
মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুখবন্ধ খামে ঋণখেলাপিদের তালিকা জমা দিতে হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। ঠাকুর, ইউ ইউ ললিত এবং আর ভানুমতিকে নিয়ে গড়া ওই বেঞ্চ জানতে চেয়েছে, কী ভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না-করে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে এই বিপুল অঙ্ক ধার দিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান? ঋণের সেই টাকা আদায়ের পদ্ধতিও তাদের গোড়া থেকে জানা ছিল কি? যাঁরা ধারের মোটা টাকা শোধ দেননি কিন্তু অঢেল বিলাসে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেই বা কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভেবেছে সরকার? এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্ককে বেঞ্চ বলে, ‘‘আপনাদের কাছে এমন প্রধান ঋণখেলাপিদের তালিকা আছে, যাঁরা (ব্যবসা) সাম্রাজ্য চালান কিন্তু ধার শোধ করতে পারেন না।’’ ওই সব নামই এ দিন চেয়ে পাঠিয়েছেন তাঁরা।
অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা সামাল দিতে এখন নাভিশ্বাস রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই সমস্যা কার্পেটের তলায় চেপে না রেখে বরং তা সামনে এনে নিজেদের হিসেবের খাতা (ব্যালান্স শিট) পরিষ্কার করে ফেলার। আর তা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। যে সব ঋণ ফেরত আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তার জন্য টাকা সংস্থান করতে গিয়ে ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে স্টেট ব্যাঙ্কের সার্বিক নিট মুনাফা কমেছে ৬৭%। ব্যাঙ্ক অব বরোদার লোকসান হয়েছে ৩,৩৪২ কোটি।
ওই একই কারণে খারাপ ফলের তালিকায় নাম লিখিয়েছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অব কমার্স ইত্যাদিও। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক যে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি অনাদায়ী ঋণের বোঝায় ডুবে যাচ্ছে বলে আতঙ্ক ছড়াতে নিষেধ করতে হয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনকে। শেয়ার বাজার ও দেশের অর্থনীতির উপর থেকে এই সমস্যার কালো ছায়া সরাতে নিয়ম করে বিবৃতি দিতে বাধ্য হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এ বার অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল শীর্ষ আদালতও।
২০০৫ সালে হাডকোর (হাউসিং অ্যান্ড আর্বান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন) কয়েকটি সংস্থাকে ঋণ দেওয়া নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে একটি অসরকারি সংস্থা। সেই শুনানির পরিপ্রেক্ষিতেই অনুৎপাদক সম্পদ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে এই নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
মঙ্গলবারই স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে (মার্চ ত্রৈমাসিক) তাদের মুনাফার হাল আরও খারাপ হতে পারে। কারণ সেই অনুৎপাদক সম্পদ। উল্লেখ্য, ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্কটিরই অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২,৭৯১.৭৩ কোটি টাকা।
হিসেবের খাতা সাফ করতে ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১ লক্ষ ১৪ হাজার কোটি টাকার ধার স্রেফ মুছে ফেলতে বাধ্য হয়েছে ২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। অনুৎপাদক সম্পদের কথা বলতে গিয়ে এ দিন সংবাদপত্র থেকে তা উল্লেখ করেছে বেঞ্চ। একই সঙ্গে বিস্ময় প্রকাশ করেছে এত দিনে তা আদায় করার জন্য কোনও কড়া পদক্ষেপ না করার কারণেও।
এ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘কোন অনুৎপাদক সম্পদকে ইচ্ছাকৃত ভাবে শোধ না-করা ধারের তালিকায় ফেলা হবে, তা ঠিক হয় শীর্ষ ব্যাঙ্কের নীতি মেনে। তাদের রীতি মেনেই ওই ঋণগ্রহীতার নাম প্রকাশ করে না ব্যাঙ্কগুলি। এ বার সুপ্রিম কোর্ট আমজনতার সামনে তা বার করবে কি না, জানি না। তবে তা বাঞ্ছনীয়। তাতে ধার শোধের জন্য সামাজিক চাপ বাড়বে।’’ রাজন অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, ঋণখেলাপিদের নাম প্রকাশের রীতি নেই। নইলে তা প্রকাশ করতে আপত্তি নেই তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy