দেশ ঢুকে পড়েছে কম সুদের জমানায়। ঋণে তার হার কমছে। সুদ নামতে শুরু করেছে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের আমানতেও। সাম্প্রতিক কালে হাত পড়েনি শুধু স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে। ডিসেম্বরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট (যে সুদে তারা ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) ছাঁটার পরে দেশ জুড়ে আশঙ্কা, মোট ১২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমার প্রভাব আমানতে পড়লে স্বল্প সঞ্চয় পার পাবে কি? এগুলিতে সুদের হার এখনও অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক জমার তুলনায় বেশি। সেই কারণেও তা ছাঁটা হতে পারে কি না, তাই নিয়ে জল্পনা চড়ছে।
আর কিছু দিন পরেই আগামী তিন মাসে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে কয়েকটি প্রকল্পে তা বদলেছিল। তার পর থেকে স্থির। বেশ কিছু দিন ধরে ধারাবাহিক ভাবে সুদের হার কমিয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এখনও যার প্রভাব স্বল্প সঞ্চয়ে পড়েনি। ফলে চিন্তা বাড়ছে। বিশেষত প্রবীণ নাগরিক-সহ সুদনির্ভর মানুষদের। কারণ, সুদ কমে যাওয়া মানে তাঁদের আয়ে কোপ পড়া।
এই নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কোনও ইঙ্গিত নেই। তবে অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এ বারও সম্ভবত সুদের হার অপরিবর্তিত থাকবে। খুব বড় কিছু না হলে তার পরিবর্তনের আশঙ্কা কম। বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁদের মতে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সুদ মেলে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা এবং সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে, ৮.২%। পিপিএফে পাওয়া যায় ৭.১%। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক যে ভাবে সুদ কমাচ্ছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমানো অস্বাভাবিক নয়। না হলে বেশির ভাগ পুঁজি ব্যাঙ্ক আমানত ছেড়ে স্বল্প সঞ্চয়ে সরতে পারে। সরকারকে এটাও মাথায় রাখতে হয়।
ডাক বিভাগের কলকাতা অঞ্চলের এক কর্তার মতে, সামনে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। ব্যাঙ্কের আমানতে সুদ ক্রমশ কমছে। ফলে এখনই স্বল্প সঞ্চয়ের আয় কমানোর ঝুঁকি না-ও নিতে পারে মোদী সরকার। কারণ, বেশি ও নিশ্চিত রিটার্নের জন্য এখনও বহু মানুষের কাছে এগুলির কদর বেশি। তবে তিনি মেনেছেন, বছর পাঁচেক আগেও এগুলির যে আকর্ষণ ছিল, তা এখন অনেকটা কম। আগামী দিনে হয়তো আরও কমবে। তার উপরে ঋণ নেওয়ার জন্য রাজ্যগুলির এই আমানতে নির্ভরশীলতা কমেছে।
বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের অর্থনীতি ও ব্যাঙ্কিং বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান স্মরজিৎ মিত্রেরও ধারণা, এ বারও সুদের হার পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। বরং এই সব প্রকল্প থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হতে পারে।
অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী মনে করেন, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ধারাবাহিক ভাবে রেপো কমাতে থাকলে ও ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ কমলে স্বল্প সঞ্চয়ে তা অপরিবর্তিত রাখা কঠিন। কিন্তু এগুলি সরাসরি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলে এবং এই গ্রাহকদের বড় অংশ প্রবীণ ও চাকরিজীবী। তাই এখনই সুদ বদলের সম্ভাবনা কম। কারণ, এখন সব কিছুর সুদ কমেছে। এই ক্ষেত্রেও কমালে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। তাই হয়তো সরকার এ বারও সুদের হার অপরিবর্তিতই রাখবে। আর কিছু দিন স্বস্তিতে থাকবেন মানুষ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)