মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, বেসরকারি সংস্থা বাগান চালাতে না- পারলে রাজ্য তা অধিগ্রহণ করবে। উত্তরবঙ্গে বন্ধ ও রুগ্ণ চা বাগানের দুর্দশার সুরাহা করতেই মুখ্যমন্ত্রী এই দাওয়াই বাতলেছিলেন। কিন্তু চা বাগানের পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য গড়া রাজ্যের মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে শুক্রবার কার্যত সেই সমাধানসূত্রের আইনি সমস্যার বিষয়টিই প্রকাশ্যে এল।
সরকারি সূত্রের খবর, বেশ কিছু বাগান নিজেদের রুগ্ণ প্রমাণ করতে ‘বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশান (বিআইএফআর)-এর দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু সেখানে এখনও আবেদনের নিষ্পত্তি না-হওয়ায় বাগানগুলি সম্পর্কে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত অসুবিধা রয়েছে বলেই মনে করছে মন্ত্রিগোষ্ঠী। দুর্দশাগ্রস্ত বাগানের শ্রমিকদের সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অবশ্য বন্ধ বাগান খোলার বিষয়ে কার্যত কোনও দিশা মেলেনি এ দিন। রাজ্যের তরফে অবশ্য যুক্তিও দেওয়া হয়েছে যে, বাগান খোলা এ দিন মন্ত্রিগোষ্ঠীর আলোচ্য বিষয় ছিল না। চা বাগানগুলির খারাপ পরিস্থিতি ও সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কী ভাবে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারে, সেটা পর্যালোচনা করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
ডানকান গোষ্ঠীর উত্তরবঙ্গ-সহ বেশ কিছু বাগানে দীর্ঘদিন ধরেই অচলাবস্থা চলছে। অনেক বাগান বন্ধও। সমস্যার কথা মানলেও ডানকান গোষ্ঠীর অবশ্য দাবি ছিল, তাদের বাগানগুলি চালু রয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন বাগানের বেশ কয়েক জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শুধু চা শিল্পই নয়, বঙ্গ রাজনীতিতেও তোলপাড় শুরু হয়। রাজ্যের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় সম্প্রতি তাঁর উত্তরবঙ্গ সফরে এ নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রীও। কিন্তু তাঁর বাগান অধিগ্রহণের ভাবনার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ আইনি জটিলতায় এর আগেও এ ধরনের উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। পাশাপাশি বেসকারি মালিকের দায় কেন জনগণের করের টাকায় রাজ্য নেবে, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন অনেকেই। বিআইএফআর-এ আর্জিগুলির ফয়সলা না-হওয়া পর্যন্ত বাগানগুলি নিয়ে কোনও স্পষ্ট পরিকল্পনা নেওয়ায় আইনগত অসুবিধা রয়েছে বলেই মনে করেন মন্ত্রীরা।
রাজ্য সরকার অবশ্য এ দিনও বাগানের দুর্দশার দায় মালিকদের উপরই চাপিয়েছে। কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ‘‘যেখানে মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে, সেখানে সরকার তার দায় অস্বীকার করে না। কিন্তু দীর্ঘকাল এই সব বাগানের মালিকেরা শ্রমিকদের খাদ্য, চিকিৎসার মতো জরুরি বিষয়গুলি উপেক্ষা করার জন্যই ব্যাপক অপুষ্টির জেরে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের গড় আয়ুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে।’’
মন্ত্রিগোষ্ঠীর অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আইন থাকলেও তারা হাত গুটিয়ে বসে। যদিও কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক ও তার অধীন টি বোর্ডের পাল্টা যুক্তি, বাগান লিজে দেয় রাজ্য। শ্রমিক কল্যাণের বিষয়গুলিও রাজ্যেরই এক্তিয়ার। কোনও বাগান তা লঙ্ঘন করলে আগে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে রাজ্যই।
এ দিনের বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং স্বরাষ্ট্র, জনস্বাস্থ্য-কারিগরি, পূর্ত, জলসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য, স্বাস্থ্য-সহ ১২টি দফতরের সচিবরাও ছিলেন। অর্থমন্ত্রী জানান, আপৎকালীন প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ডানকান গোষ্ঠী-সহ উত্তরবঙ্গের আরও ৩০টি ‘রুগ্ণ’ বাগানে বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে ভর্তুকিতে খাদ্য, ওষুধপত্র দেওয়া, শিশু-বিকাশ, গরম পোশাক ইত্যাদি বিলির ব্যবস্থা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে, কোন বাগানের কী ধরনের ও কতটা সাহায্য প্রয়োজন, তা সমীক্ষা করে দেখতে একটি টাস্ক ফোর্সও তৈরি হবে। এ ছাড়া, ২০৯টি বাগানের শ্রমিকদের বাড়িতে ভর্তুকির হারে সরাসরি বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দীপাবলির আগে আরও ২৫টি বাগানে এই ব্যবস্থা চালু হবে। বাগানগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিগোষ্ঠীর তরফে বিভিন্ন সুপারিশ জানিয়ে একটি ২০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়। সেই রিপোর্টের অগ্রগতি নিয়েও এ দিন আলোচনা হয়।
তবে, এ দিন জলপাইগুড়ি থেকে চা শ্রমিক সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটির নেতা জিয়াউর আলমের দাবি, কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়েই এক সঙ্গে উদ্যোগী না-হলে এই শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাম আমলে রাজ্য-কেন্দ্র যৌথ ভাবে উদ্যোগী হলেও গত চার বছরে তৃণমূল সরকার সেই পথে হাঁটেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy