E-Paper

বাড়ছে জোগান, কমছে চাহিদা, সঙ্কট বেড়েই চলেছে চা শিল্পের

এই পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদিত এবং আমদানি করা চা মিলিয়ে তার জোগান মাথা তুললেও, চাহিদা বাড়ছে না।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫২
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP

এক দিকে চায়ের চাহিদা কমছে, কিন্তু উৎপাদন বাড়ছে। অন্য দিকে তার আমদানি অব্যাহত থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে দাম তো বাড়ছেই না, উল্টে বহু ক্ষেত্রে কমেছে। এই সমস্ত কারণে সঙ্কটে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের চা শিল্প। আশঙ্কা, অবস্থা না বদলালে কমতে পারে চা শ্রমিকদেকর আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা। এই পরিস্থিতিতে থেকে বার হতে আপাতত কেন্দ্রের সহযোগিতার দিকেই তাকিয়ে তারা।

টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি জেনারাল প্রবীর ভট্টাচার্যের দাবি, চলতি বছরে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ১১৩.৩৪ কোটি কেজিরও বেশি চা। আশা, বছর শেষে তা পৌঁছবে ১৩৪.২০ কোটিতে। এ দিকে তাঁদের হিসাবে ২০২৪ সালে দেশে চা আমদানি হয়েছিল ৪.৫ কোটি টন। ছোট বাগানগুলির সংগঠন সিস্টার সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তীর মতে, চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসেই গত বছরের তুলনায় ৪৫% বেশি আমদানি হয়েছে। ভারতে মূলত চা আমদানি হয় নেপাল ও কেনিয়া থেকে। তাঁরা দু’জনেই জানাচ্ছেন, ইন্দো-নেপাল চুক্তির সুবাদে পড়শি দেশ থেকে আমদানি করা চায়ে কোনও শুল্ক বসে না। অথচ এখানকার চা নেপালে গেলে শুল্ক চাপে।

এই পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদিত এবং আমদানি করা চা মিলিয়ে তার জোগান মাথা তুললেও, চাহিদা বাড়ছে না। বরং ভারতে চা পানের অভ্যাস ক্রমশ কমছে বলেই দাবি প্রবীরের। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে বছরে মাথাপিছু ৮০০-৮৫০ গ্রাম। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চায়ের কাপে চুমুকের অভ্যাসই তৈরি হচ্ছে না। ফলে বিক্রি বৃদ্ধি না পাওয়ায় উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না উৎপাদনকারীরা। তিনি বলেন, ‘‘অতিমারির পর থেকে চার বছর ধরেই দেশে চায়ের দাম এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। বরং চলতি বছরে গড় দাম কেজিতে ১২.২৫ টাকা কমেছে।’’ বিজয়ের দাবি, ‘‘এখন চায়ের যা দাম, তাতে উৎপাদন খরচই উঠছে না। অবস্থা না বদলালে চা উৎপাদনের ব্যবসায় টিকে থাকাই মুশকিল।’’

ক্রেতার বদলে যাওয়া অভ্যাসের ফলে সঙ্কটে পড়ছেন চা শ্রমিকেরাও। চা শিল্পের হালই খারাপ হতে থাকলে তাঁদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা। প্রবীরের দাব, এমন চললে মজুরি ঠিক মতো দেওয়া, পিএফ, গ্র্যাচুইটি মেটানোয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। কমতে পারে কাজের দিন। ফলে ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তার উপরে চা গাছের পুনর্বপণ, চা পাতা তোলা, কারখানার উন্নয়নের গতি কমার আশঙ্কা থাকছে বলে জানিয়ে বিজয়ের আরও বক্তব্য, তাতে ক্ষতি হবে চা শিল্পেরই। যে কারণে কেন্দ্রকে এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা দু’জনেই। তাঁদের দাবি, বিশেষ করে চা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। নিম্নমানের চা যাতে ভারতে ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রকে।

তবে এত সমস্যার মধ্যেও রুপোলি রেখা হল ভারত থেকে চা রফতানি বৃদ্ধি পাওয়া। চলতি বছরে অক্টোবর পর্যন্ত গত বছরের এই সময়ের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ৬%। এ বাবদ আয়ও মাথা তুলেছে ১৮%।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tea Garden tea estate

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy