সংসদে প্রশ্ন উঠেছিল, ভারতের নাগরিকদের মাথাপিছু ঋণ কত? মোদী সরকারের তরফে উত্তর এল গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী ১,৩২,০৫৯.৬৬ টাকা। যা শুনে চমকে গিয়েছে দেশ। সোমবার লোকসভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী অবশ্য দাবি করেছেন, ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে জিডিপি-র নিরিখে দেশের ঋণের বোঝা ৫০ শতাংশের কাছে নামানোই লক্ষ্য। যা ২০২৪-এ ছিল ৮১.২৯%। এ বছর ৮০ শতাংশে নামতে পারে। তবে সেটা কী ভাবে সম্ভব বা তাঁদের এ সংক্রান্ত কোনও পরিকল্পনা আছে কি না, বিশদে জানাননি তিনি।
এ দিন পঙ্কজের দেওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, সরকারের ঋণ খাতে গত তিন বছর ধরে সুদের অঙ্ক লাফিয়ে বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে খরচ হয়েছে ৯.২৯ লক্ষ কোটি টাকা। পরের দুই অর্থবর্ষে যথাক্রমে ১০.৬৪ লক্ষ কোটি এবং ১১.১৮ লক্ষ কোটি টাকা। এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে অনুমান, তা দাঁড়াবে ১২.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা।
কী ভাবে দেশবাসীর মাথাপিছু ঋণের বোঝা কমবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে পঙ্কজ শুধু দাবি করেছেন, রাজকোষ ঘাটতি কমিয়েই দায় কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্র। গত অর্থবর্ষে জিডিপির প্রেক্ষিতে ঘাটতি ছিল ৪.৮%। এ বছরের বাজেটে ৪.৪ শতাংশে বাঁধার লক্ষ্য। সরকারের মোট ঋণের হার ২০৩১-এর ৩১ মার্চের মধ্যে জিডিপি-র ৫০ শতাংশের আশেপাশে নিয়ে আসাই লক্ষ্য।
ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘সরকারের ঘাড় থেকে ঋণের ভার কমবে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য কেন্দ্রের তা কমিয়ে আনার পরিকল্পনাটি জানা জরুরি। সরকার দেশের বাজার, বিদেশ থেকে কত ঋণ নিয়েছে, তা-ও খোলসা করা প্রয়োজন। সব থেকে চিন্তার বিষয়, জনগণের বাহবা পেতে দান-খয়রাতি চলতে থাকলে, ঋণ শোধের অর্থ সরকারের হাতে কী ভাবে আসবে, সেটা বড় প্রশ্ন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ঋণ নিয়ে সরকার পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো উন্নয়নমূলক কাজ করে। তা দেশের পক্ষে ভাল। কিন্তু সেটা মেনে নিয়েও অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‘সরকারের ঋণের বহর বাড়তে থাকালে বেশ কিছু ঝুঁকির আশঙ্কা মাথা তোলে। সরকার দেশের বাজার থেকে বেশি ঋণ নিলে সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ে। বেসরকারি ক্ষেত্রের পক্ষে ঋণ পাওয়াও কঠিন হয়ে ওঠে। ঋণের বোঝা কমানোর জন্য দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারকেও ঠেলে উপরে তোলার ব্যবস্থা জরুরি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)