E-Paper

আমেরিকার শুল্কের ধাক্কা সামলাতে চোখ কেন্দ্রের পদক্ষেপের দিকে

পরিস্থিতি সামাল দিতে চিন, জাপান এবং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিল্প, বাণিজ্য সংক্রান্ত যাবতীয় মন্ত্রক, দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষ উদয়াস্ত পরিশ্রম করছে পরিস্থিতি সামাল দিতে।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৩৫

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

শেষ পর্যন্ত ভারতীয় পণ্যের উপরে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক চাপিয়েই দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সব মিলিয়ে তা গিয়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশে। অর্থনীতির উপরে এই শুল্কের বিরূপ প্রভাব আশঙ্কা করে ইতিমধ্যেই ভারতীয় শেয়ার বাজার প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা খুইয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চিন, জাপান এবং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিল্প, বাণিজ্য সংক্রান্ত যাবতীয় মন্ত্রক, দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষ উদয়াস্ত পরিশ্রম করছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট, ট্রাম্প-শুল্কের যে প্রভাব ভারতীয় রফতানিতে পড়তে চলেছে, তার দ্রুত সমাধান পাওয়া শক্ত।

ভারতের সামনে প্রতিকূলতা—

  • আমেরিকায় ভারতের বার্ষিক রফতানির পরিমাণ ৭৯০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুল্কের ধাক্কা লাগতে পারে ৪৫০০ কোটি ডলারের (প্রায় ৩.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা) পণ্যে। ফলে বাজার হারাবে বেশ কিছু শিল্প।
  • তাদের কমাতে হবে উৎপাদন। পুরোপুরি আমেরিকা নির্ভর কিছু কারখানা বন্ধই হয়ে যেতে পারে। আঘাত আসবে অনুসারী শিল্পে। কাজ হারাতে পারেন বহু মানুষ।
  • ভারতের ডলার বাবদ আয় কমবে। টাকার দাম পড়বে। এরই মধ্যে ডলার ৮৮ টাকা ছাড়িয়েছে। ফলে আমদানির খরচও বাড়বে। তার প্রভাব পড়তে পারে মূল্যবৃদ্ধিতে। সঙ্কুচিত হতে পারে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার। রাশিয়ার তেল কিনে ভারত যে সাশ্রয় করেছে তার অনেকটাই বেরিয়ে যেতে পারে।
  • যে সব দেশে কম শুল্ক চেপেছে অনেক ভারতীয় সংস্থা সেখানে পাড়ি দিতে পারে। দুর্বল হতে পারে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগান।
  • জিডিপি বৃদ্ধির হার কমতে পারে ১ শতাংশ বিন্দু পর্যন্ত। আর অর্থনীতি শ্লথ হলে বিদেশি লগ্নিতেও টান পড়বে। তাতে ভারতীয় মুদ্রার নিরিখে ডলার আরও শক্তিশালী হবে।
  • আমেরিকার কাজের বাজারে ভারতীয়দের নিয়োগের ব্যাপারে ট্রাম্পের আপত্তি তো আছেই। তা ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবেও কাজ হারাতে পারেন বহু মানুষ। ফলে আগামী দিনে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হতে পারে।
  • আঘাত পাওয়া শিল্প ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে মোটা টাকা খরচ করতে হতে পারে।

এখন প্রশ্ন, এত বড় সমস্যা কী ভাবে সামলাতে চাইছে সরকার। এই সমস্যার মধ্যে কোনও ইতিবাচক দিক আছে কি? এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী সক্রিয় হয়েছেন। জাপানের পরে চিনের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনা করছেন তিনি। স্বাভাবিক কারণে রাশিয়াও ভারতের পাশে। কয়েকটি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। সরকারের দাবি, আমেরিকার সঙ্গেও আলোচনার দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে এ সবের তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যাবে না। কিছুটা নমনীয় ভারতকেও হতে হবে।

জাতীয় অর্থনীতির যে সমস্ত ভাল দিক দেখা যাচ্ছে—

  • এপ্রিল-জুনে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৮%। উৎপাদন (৫৯.১) ক্ষেত্রের পিএমআই সূচক ১৬ মাসের সর্বোচ্চ, পরিষেবায় (৬০.৫) ১১ মাসের।
  • ভাল বর্ষা।
  • চলতি সপ্তাহে জিএসটি-র স্তর ও হার ছাঁটাই নিয়ে সিদ্ধান্ত হলে তা শিল্পের পক্ষে সহায়ক হবে।

ফলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের নেই এমনটা বলা যাবে না। তবে প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনা নিয়ে যে বিবাদ, তাতে ভারতের কতটা লাভ হয়েছে? ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পশ্চিমের দেশগুলি যখন মস্কোকে একঘরে করেছিল তখন তাদের থেকে তেল কেনা কতটা মানবিক হয়েছিল? সিএলএসএ-র এক সমীক্ষায় দাবি, প্রথমে যতটা আর্থিক লাভ হবে মনে করা হচ্ছিল বাস্তবে হয়েছে তার চেয়ে কম। আর রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা হলেও দেশের বাজারে তা বিক্রি হয়েছে চড়া দামেই। সাধারণ মানুষ নয়, লাভ ঘরে তুলেছে তেল সংস্থাগুলি। জুনে এইচপিসিএল, বিপিসিএল এবং ইন্ডিয়ান অয়েল মোটা লাভ ঘরে তুলেছে। আর এখন তো দাম কমার প্রশ্নই নেই।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

US Tariff Tariff War

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy