মাঝে কয়েক দিনের বিরতি। তার পরেই ফের নজির গড়ল সোনার দাম। বুধবার কলকাতায় এক ধাক্কায় খুচরো পাকা সোনা (২৪ ক্যারাট, ১০ গ্রাম) পৌঁছে গেল ৮৭,২০০ টাকায়। মঙ্গলবারের তুলনায় ৮৫০ টাকা বেশি। গয়নার সোনার (২২ ক্যারাট, ১০ গ্রাম) দামও ৮০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৮২,৮৫০ টাকা। জিএসটি যোগ করে দুই দাম যথাক্রমে ৮৯,৮১৬ টাকা এবং ৮৫,৩৩৫.৫ টাকা। মূলত বাণিজ্য যুদ্ধ ঘিরে আশঙ্কার মধ্যে বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধির কারণেই দেশে তার দরের এই গতি দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে স্বর্ণ শিল্পমহল। এর জেরে মাথায় হাত পড়েছে দেশে গয়নার ক্রেতা-বিক্রেতাদের। বরাত কমার আশঙ্কায় ভুগছেন কারিগরেরাও।
আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপরে শুল্ক চাপাচ্ছেন। অন্যান্য দেশও তার পাল্টা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ফলে বাণিজ্য যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। অস্থির বাজারে পড়ে চলেছে শেয়ার সূচক। এই অবস্থায় নিরাপদ লগ্নির গন্তব্য হিসেবে বরাবরই সোনার চাহিদা থাকে। আর সেই চাহিদার হাত ধরেই বিশ্ব বাজারে বাড়ছে সোনার দাম। যার প্রভাব পড়ছে ভারতে।
অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর সমর দে বলছেন, ‘‘সোনায় লগ্নি বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে তার দাম প্রায় রোজই বাড়ছে। ফলে সব দেশে হলুদ ধাতুটির দর চড়ছে। তবে ভারতে দাম বৃদ্ধির গতি তুলনামূলক ভাবে বেশি।’’ এর কারণ হিসেবে ডলারের নিরিখে টাকার দামের পতনকেই দায়ী করছেন তিনি। ডলার ৮৭ টাকার কাছে পৌঁছনোয় সোনা আমদানির খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে প্রভাব পড়েছে দেশের দামে। বুধবার বিশ্ব বাজারে আউন্সে সোনা ছিল ২৯৪০ ডলার। মঙ্গলবারের থেকে তা প্রায় ৩১ ডলার বেশি। দাম ৩০০০ ডলার ছোঁয়া এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সোনার দামের ঊর্ধ্বগতিতে লগ্নিকারীদের খুশি হলেও, চিন্তায় সাধারণ মানুষ তথা বিক্রেতারা। বিয়ের মরসুম চলায় অনেকে এখন বাধ্য হয়ে গয়না কিনছেন ঠিকই। কিন্তু মরসুম শেষে ব্যবসার হাল কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন গয়না ব্যবসায়ীরা। বিশেষত চিন্তায় ছোট দোকানিরা। পাশাপাশি,গয়নার বরাত কমায় রোজগারে টান পড়েছে কারিগরদের। এই অবস্থায় দামের গতি কী হয়, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)