Advertisement
E-Paper

আদানিদের ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা, উপকরণ তৈরি, এ ভাবে কি ফিরে আসা যায়?

চাল-ডাল-নুন-তেল মজুত করে ফেলেছেন গৌতম আদানি। কিন্তু রান্না কি শেষমেশ ঠিকঠাক হবে? আদানিদের ফিরে আসার নতুন রুটম্যাপে নিয়ে অধীর আগ্রহে নজর রাখছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪৭
 Gautam Adani ready with strategy to fight back.

ইতিমধ্যেই ঋণ শোধ করে নিজেদের দায়িত্ববান বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে আদানিরা। ফাইল চিত্র।

একে একে সব প্রয়োজনীয় উপকরণ মজুত করে ফেলেছেন গৌতম আদানি। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যা যা প্রয়োজন, তার লম্বা ফর্দে একটা একটা করে পড়ছে লাল কালির দাগ। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের পর গৌতম আদানি সাম্রাজ্যের ১৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার লহমায় মুছে গিয়েছিল বাজার থেকে। তবে তাতে হাল না ছেড়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আদানিরা। শুধু গত দিন দশেকের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বেরনো রিপোর্টে অন্তত তেমনই দাবি করেছেন শেয়ার দুনিয়ার অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, আদানিদের রণকৌশলের অভিমুখ তৈরি। এখন শুধু কার্যকরণের অপেক্ষা। ফর্মুলা মিলে গেলে সাফল্য আসা খুব বিস্ময়কর নয়।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্টের কথাই ধরা যাক। তারা জানিয়েছে, খুব সম্প্রতিই একটি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া কয়লাখনি কেনার চুক্তি শেষমুহূর্তে বাতিল করে দিয়েছে আদানিরা। বাজারে এখন বিপুল দেনা আদানিদের। লগ্নিকারীদের বিশ্বাসও হোঁচট খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন খরচ না বাড়িয়ে আদানিরা ভালই করেছেন বলে মত দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।

আরও একটি রিপোর্ট বলছে, আদানিরা নিজেদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টাও শুরু করেছে। এক আন্তর্জাতিক নামী জনসংযোগ সংস্থাকে এ ব্যাপারে নিয়োগ করা হয়েছে আদানিদের তরফে। কেক্সট সিএনসি নামে ওই সংস্থা আগেও বহু নাম ডুবে যাওয়া সংস্থাকে টেনে তুলতে সফল হয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে এ ব্যাপারে বেশ নামও করেছে নিউ ইয়র্ক এবং মিউনিখে দফতর চালানো এই সংস্থা। তারাই এখনও আদানিদের ‘ভাবমূর্তি উদ্ধারের’ দায়িত্বে। বেশ কড়া হাতেই সেই কাজ নাকি শুরুও করে দিয়েছে কেক্সট। তবে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় এ সংক্রান্ত রিপোর্ট বেরোলেও কেক্সট বা আদানিদের তরফে কিছু জানানো হয়নি।

ইতিমধ্যেই ঋণ শোধ করে নিজেদের দায়িত্ববান বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে আদানিরা। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের একাংশ মিটিয়ে দিয়ে তাঁরা বুঝিয়েছে তাঁরা বিশ্বস্ত ঋণগ্রাহীতা। ঋণের অর্থ না মিটিয়ে ঋণদাতাদের বিপদে ফেলবে না। এ ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় তারা বৈঠকও করেছেন বলে খবর।

পাশাপাশিই, হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে মামলা লড়ার জন্য সেরা আইনজীবীদের সংস্থাকেও নিয়োগ করেছে তারা। আমেরিকার আইনজীবী সংস্থা ওয়াচটেল, লিপটন, রসেন অ্যান্ড ক্যাটজকে বরাত দেওয়া হয়েছে আদানিদের হয়ে মামলা লড়ার। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা আদানিদের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এর ২টি ভাল দিক আছে। প্রথমত, আদানিরা বুঝিয়ে দিল তারা এখনও সেরা সংস্থাকে নিয়োগ করার মতো আর্থিক ক্ষমতার অধিকারী। দ্বিতীয়ত, এতে হিন্ডেনবার্গের দাবিকে ভুল প্রমাণ করে মামলা জিতে বিশ্বাস অর্জনের সম্ভাবনাও বাড়বে।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আদানিরা কখনওই হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ মেনে নেয়নি। গত ২৪ জানুয়ারি যে শর্ট সেলার রিপোর্টে আদানিদের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা প্রথম থেকেই নাকচ করে এসেছে আদানিরা। বন্দর থেকে বিদ্যুৎ-এর বিচরণ ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক বছরে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল যে আদানিরা, তাদের বিরুদ্ধে সংস্থার শেয়ারের বাজারদরকে প্রভাবিত করে অতিরিক্ত বৃদ্ধি করার অভিযোগ করেছিল হিন্ডেনবার্গ। আদানিরা সেই অভিযোগের কাছে নতিস্বীকার না করে আইনি পথে বিরোধিতার হুমকি দেয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পাল্টা জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্তই আদানিকে আরও বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। যদিও আদানিরা শুধু সেখানেই থেমে থাকেনি। এর পর একের পর এক পদক্ষেপ করেছে তারা। চলছে সংস্থাকে টেনে দাঁড় করানোর নিরন্তর চেষ্টা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন আদানিরা যে পথে এগোচ্ছে, তাতে এমন দিন খুব দূরে নয়, যে খানে আবার তারা বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ফিরে পেতে পারে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বলে পরিচিত আদানি। মোদীর রাজ্য গুজরাতেই রয়েছে আদানিদের সবচেয়ে বড় বন্দর। আবার মোদী জমানায় গত ৪ বছরেই উল্কাগতিতে উত্থান হয়েছে আদানিদের। কিন্তু হিন্ডেনবার্গের একটি রিপোর্টেই সেই উন্নতি মুখ থুবড়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি আদানিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না তার অনেকটাই নির্ভর করছে লগ্নিকারীদের বিশ্বাসের উপর। স্বাভাবিক ভাবেই লগ্নিকারীরাও নজর রাখছেন, কী ভাবে আদানিরা বাজারে তাদের নিজেদের শেয়ারের দাম ধরে রাখতে পারেন এবং বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারেন। আদানিরা সেই বিষয়েও নজর রাখছেন। বৃহস্পতিবার আদানিরা তাদের অংশীদারদের জানিয়েছেন, তারা তাদের মোট আয় এবং ঋণের অনুপাত কমানোর চেষ্টা করছেন।

Gautam Adani Hindenburg Report
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy