E-Paper

বিদেশি লগ্নিকারীদের বিক্রি করে দেওয়া শেয়ারের সমপরিমাণ শেয়ার কিনেও আটকানো যাচ্ছে না পতন

বহু দিন ধরে নাগাড়ে শেয়ার বেচছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। তাদের বিক্রীত শেয়ারের প্রায় সম-পরিমাণে দেশীয় আর্থিক সংস্থার লগ্নিও পতন ঠেকাতে পারছে না।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ০৮:৪১
গত শুক্রবার সেনসেক্স খুইয়েছে একলপ্তে ১৪১৪ পয়েন্ট।

গত শুক্রবার সেনসেক্স খুইয়েছে একলপ্তে ১৪১৪ পয়েন্ট। —প্রতীকী চিত্র।

লগ্নিকারীরা দিশাহারা। পড়েই চলেছে শেয়ার বাজার। সূচক কোন তলানিতে ঠেকার পরে ঘুরে দাঁড়াবে, তার হদিশ দিতে পারছেন না কেউ। আতঙ্কিত মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিকারীরাও। তার মধ্যেই গত শুক্রবার সেনসেক্স খুইয়েছে একলপ্তে ১৪১৪ পয়েন্ট। ৯ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ মুছেছে লগ্নিকারীদের খাতা থেকে। সাধারণত বাজার পড়ার জন্য অনেকে অপেক্ষা করে থাকেন। পড়লেই লগ্নির ঝুলি নিয়ে ঝাঁপান। কিন্তু এখন সূচক এত নীচে নামা সত্ত্বেও বহু মানুষ নতুন করে লগ্নি করতে সাহস পাচ্ছেন না।

বহু দিন ধরে নাগাড়ে শেয়ার বেচছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। তাদের বিক্রীত শেয়ারের প্রায় সম-পরিমাণে দেশীয় আর্থিক সংস্থার লগ্নিও পতন ঠেকাতে পারছে না। যেমন, শুক্রবার বিদেশি লগ্নিকারীরা যখন ১১,৬৩৯ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে, তখন দেশীয় সংস্থাগুলি কিনেছে ১২,৩০৯ কোটির। আগের দিনগুলিতেও এই ভাবে পতন রোখার বিফল চেষ্টা করেছে তারা। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে। ছোট লগ্নিকারীরা ঢুকতে সাহস পাচ্ছেন না। উল্টে লোকসান কমাতে অনেকে শেয়ার বিক্রি করছেন।

সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে পতন শুরু হলেও, ডিসেম্বর পর্যন্ত ফান্ডে লগ্নি তেমন কমেনি। তবে এর পরে কী হবে বলা যাচ্ছে না। কারণ, শেয়ার ভিত্তিক বেশির ভাগ ফান্ডের ন্যাভ কমছে চোখে পড়ার মতো। এতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে,
বিশেষত ছোট (স্মল ক্যাপ) ও মাঝারি সংস্থাগুলি (মিড ক্যাপ) ঘিরে। যাঁরা শেয়ারে সরাসরি লগ্নি করেন না, তাঁদের অনেকের খাতাতেও লোকসান ঢুকেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা সংস্থার এলআইসি-র মোটা টাকা খাটে শেয়ারে। পেনশন প্রকল্প এনপিএস ও প্রভিডেন্ট ফান্ডেরও একাংশ লগ্নি হয়। সেপ্টেম্বরের আগের দু’বছর এখান থেকে ভাল রিটার্ন এলেও, পরের পাঁচ মাসে তা অনেকটা চুপসে গিয়েছে।

গত এক মাস ধরে বাজার পড়ার প্রধান কারণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বন্ধু বলেও যিনি ভারতের সমহারে ভারতীয় পণ্যে আমদানি শুল্ক বসানোর পক্ষপাতী। কানাডা, মেক্সিকো ও চিনা পণ্যে তা বসিয়েওছেন। চালু হবে কয়েক দিনের মধ্যে। ইতিমধ্যে এর পাল্টা পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারিও এসেছে। অন্য দিকে আবার আমেরিকার নীতিকে অনুসরণ করে ইউরোপের কিছু দেশ শুল্ক বাড়ানোর কথা ভাবছে। অর্থাৎ বিশ্ব জুড়ে ফের শুরু হতে চলেছে শুল্ক যুদ্ধ। ফলে প্রমাদ গুনছে ভারতীয় রফতানি নির্ভর সংস্থাগুলি। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি উন্মুক্ত অর্থনীতির উপরে বড় আঘাত। জল কত দূর গড়াবে বোঝা যাচ্ছে না। তাই মানুষ শেয়ার থেকে দূরে থাকতে চাইছেন। অনিশ্চয়তা যুঝতে সোনা কেনা বাড়ছে। সেই চাহিদা ঠেলে তুলছে দাম। বেশ কিছু সংস্থার নতুন শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল। তারা দিন পিছোচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম এনএসডিএল।

এ বার পাঁচ মাসে নিফ্‌টি পড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি। ১৯৯৬-এ জুলাই-নভেম্বর, পাঁচ মাসে নেমেছিল ২৬%। ১৯৯৮-এর মে-অগস্টে পড়ে ২৬.৪৪%। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে বিশ্ব মন্দার কবলে পড়া বাজারে ধস নামে ৩৬.৮০%। বড় পতন হয় ২০২০ সালে, অতিমারি শুরুর বছরও। সূচক প্রতিবারই পতন কাটিয়ে উঠেছে। সেটাই এখন ভরসা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Share Market Stock Market

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy