E-Paper

সোনা বেড়েছে ৬৩ শতাংশ, রুপো ৭২ শতাংশ! সম্বতের হিসাবে শেয়ারের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে শেষ করল দুই ধাতু

দাম চড়লেও সোনার চাহিদা কমেনি। ধনতেরসের সন্ধ্যায় তা কেনার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। অনেকেই ভাবছেন, দাম যা-ই হোক, বড় মেয়াদে সোনায় লোকসান নেই।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:৫৮

—প্রতীকী চিত্র।

এমন দৌড় শেয়ার বাজারেও তেমন দেখা যায় না। ২০৮১ সম্বতে তাকে গোহারান হারিয়েছে সোনা। দোসর হয়েছে রুপো। তার গতি যেন আরও বেশি। তুলনায় ম্লান লাগছে শেয়ারকে। সোনা-রুপোর এমআরপি হয় না। তাই বাধাহীনভাবে উপরে উঠতে সমস্যা নেই। গত দু’মাসে নাটকীয় ভাবে চড়েছে সোনার দাম। অগস্টে ১০ গ্রাম পাকা সোনার বার (২৪ ক্যারাট) ছিল ৯৮,৫০০ টাকা। ধনতেরসের প্রথম দিনে তা বিকিয়েছে ১,২৮,৬০০ টাকায়। পাকা খুচরো সোনা পৌঁছেছে ১,২৯,২৫০ টাকায়। শনিবার রুপোর কেজি ছিল ১.৭০ লক্ষ টাকারও বেশি। গত এক বছরে সোনা বেড়েছে ৬৩%, রুপো ৭২%। আগামী সম্বতের শেষে কোথায় পৌঁছবে, সেটাই চর্চার বিষয়।

দাম চড়লেও সোনার চাহিদা কমেনি। ধনতেরসের সন্ধ্যায় তা কেনার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। অনেকেই ভাবছেন, দাম যা-ই হোক, বড় মেয়াদে সোনায় লোকসান নেই। এ ছাড়া ব্যাঙ্কের সুদ যেখানে নেমেছে, তাতে কোনও জমা দ্বিগুণ হতে ১৪ বছর লেগে যেতে পারে। তুলনায় দ্রুত গতিতে বাড়বে সোনা। দাম নাগালে রাখতে কম ক্যারাটের গয়না এসেছে। তাতে ২২ এবং ১৮ ক্যারাট ছাড়াও রয়েছে ১৪ এবং ৯ ক্যারাট। পুরনো গয়না ভেঙে নতুন গড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। সোনা বন্ধক দিয়ে এখন ধারও পাওয়া যাচ্ছে বেশি।

এখন প্রশ্ন হল হঠাৎ সোনা এমন গতিতে বাড়ছে কেন? বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে যে মানুষ সব ফেলে সোনা কেনে এবং তাতে যে দাম বাড়ে, এ কথা সবার জানা। কিন্তু অতীতের অনেক সঙ্কটে সোনাকে এমন ভাবে চড়তে দেখা যায়নি। জবাব হল— বিশ্বের নানা অঞ্চলে যুদ্ধ চলছে। ভবিষ্যতে আরও বড় অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে পৃথিবী। অন্য দিকে আমেরিকার শুল্ক নীতিতে রুষ্ট অনেক দেশ। ডলারের মাধ্যমে লেনদেন করতে চাইছে না। ভাবছে, কোন দেশের ভান্ডারে কত সোনা আছে সেটাই অর্থনীতির মানদণ্ড হোক, ডলার নয়। তাই সোনা কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। দ্রুত দাম বাড়ায় ভারতে সোনার তাহবিলের মূল্য এই প্রথম ১০,০০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। সোনা কিনছে চিন, রাশিয়াও। ফলে তুঙ্গে উঠেছে তার চাহিদা। কিন্তু জোগান তো সীমিত। এতেই যা হওয়ার হচ্ছে। লাগামহীন ভাবে বাড়ছে দাম।

পাল্লা দিয়ে চড়ছে রুপোও। সোনা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় অনেকে রুপোর দিকে ঝুঁকেছেন গয়না এবং লগ্নির জায়গা হিসেবে। এ ছাড়া সৌর বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং বৈদ্যুতিন পণ্য তৈরির মতো শিল্পেও রুপোর ব্যবহার বাড়ছে দ্রুত। তুলনায় জোগান বৃদ্ধি মন্থর। বেশির ভাগ রুপো পাওয়া যায় তামা এবং দস্তার (জিঙ্ক) উপজাত পণ্য হিসাবে। সেগুলির উৎপাদন ভাল না বাড়লে রুপোর জোগানও চাহিদার তুলনায় কম হয়। রুপোর চাহিদা ১০% বাড়লে জোগান হয়তো বাড়ছে বড়জোর ৪%। এই ফারাক না কমলে রুপোর মাথা নামানো মুুশকিল।

যাঁরা গত কয়েক বছরে প্রকৃত সোনা, গোল্ড বন্ড, গোল্ড ইটিএফ এবং গোল্ড ফান্ডে লগ্নি করেছেন, তাঁরা লাভের মুখ দেখছেন। উল্টো হয়েছে ভারত সরকারের জন্যে। আগের কয়েক বছরে অনেকটা কম দামে যত গোল্ড বন্ড ইসু হয়েছে, তা মেয়াদ শেষে সরকারকে শোধ করতে হবে সেই সময়ের বাজার দর অনুযায়ী। প্রশ্ন হল, আগামী দিনে সোনা কেমন থাকবে। গয়নার সোনা সাধারণত খুব বেশি বিক্রি করা হয় না। তবে এত চড়া দামে লগ্নি করা সোনা বেচে কেউ কেউ হয়তো লাভ ঘরে তুলতে চাইবেন। দিওয়ালি, বিয়ের মরসুম শেষ হলে দাম কিছুটা নামতে পারে। বিভিন্ন দেশ সোনা সংগ্রহ চালিয়ে গেলে দামের মাথা নামানো নিয়ে সন্দেহ থাকছেই। ছোট মেয়াদে সংশোধন হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সোনার মুখ অবশ্য উপরের দিকেই থাকবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Stock Market Gold Price Silver Price

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy