E-Paper

ঋণের চাহিদা বাড়লেও, বাড়ছে না ব্যাঙ্কগুলিতে নগদের জোগান, জমায় ফের সুদ বাড়বে কি!

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাব, ২৩ জানুয়ারির হিসাবে ব্যাঙ্কগুলিতে নগদের ঘাটতি ৩.৪ লক্ষ কোটি টাকা। এ মাসের শুরুতে থাকা ঘাটতির তিন গুণ। সমস্যা মেটাতে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে পদক্ষেপ করতে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৮
An image of Loan

—প্রতীকী চিত্র।

ঋণের চাহিদা বাড়লেও, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে নগদের জোগান। সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরই পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এই ছবি। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এতে এক দিকে মাথা তুলেছে উদ্বেগ। কারণ, ঋণ সরবরাহ বাড়াতে না পারলে আটকে যাবে শিল্প বৃদ্ধি। হোঁচট খেতে পারে জিডিপি বৃদ্ধির হার। অন্য দিকে, তৈরি হয়েছে ব্যাঙ্কে জমা টাকায় সুদের হার বৃদ্ধির আশা। কারণ, ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের হাতে পুঁজির জোগান নিশ্চিত করার অন্যতম পথ সাধারণ মানুষদের আমানত টানা। সে জন্য সুদ বাড়িয়ে তাঁদের তহবিল পাওয়ার প্রতিযোগিতা চালায় ব্যাঙ্কগুলি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, দ্রুত নগদের অভাব মেটাতে তেমন করা যেতে পারে। তবে এটা করা কঠিন। নগদের জোগানে বেশি নজর দিতে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধি যেন আরও চড়ে না যায়। অন্য অংশের অবশ্য দাবি, নগদের অভাব সাময়িক। আমানতে সুদ বৃদ্ধির প্রশ্নই নেই।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরই হিসাব, ২৩ জানুয়ারির হিসাবে ব্যাঙ্কগুলিতে নগদের ঘাটতি ৩.৪ লক্ষ কোটি টাকা। যা এ মাসের শুরুতে থাকা ঘাটতির তিন গুণ। সমস্যা মেটাতে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে পদক্ষেপ করতে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তার উপর ঋণের চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে। মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার রিপোর্ট বলেছে, চলতি অর্থবর্ষে গড়ে ব্যাঙ্কগুলিতে ১৫% হারে ঋণের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা। টাকার অঙ্কে তা পৌঁছতে পারে ২০-২১ লক্ষ কোটিতে। ফলে এত চাহিদা মেটানোর পুঁজি তারা কোথা থেকে পাবে, উঠেছে প্রশ্ন। ইক্রার বক্তব্য, এই অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে বাজার থেকে তুলে নেওয়া ২০০০ টাকার নোট জমা পড়ার কারণে ব্যাঙ্কে নগদের জোগান বেড়েছিল। কিন্তু আগামী দিনে তার অভাব পিছু টেনে ধরতে পারে ঋণকে। যা মেটাতে আমানত বৃদ্ধির দিকে মন দিতেই হবে ব্যাঙ্কিং শিল্পকে। পাশাপাশি, নজর ঘোরাতে হতে পারে মূলধনী বাজার এবং স্বল্প মেয়াদে ঋণ নেওয়ার দিকেও।

পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের বক্তব্য, নগদের অভাব মেটাতে ব্যাঙ্কিং শিল্প আমানতে সুদ বাড়িয়ে তা জোগাড়ের পথে হাঁটতে পারে। না হলে সমস্যা তৈরি হবে। কিন্তু শীর্ষ ব্যাঙ্কের পক্ষে কাজটা কঠিন। কারণ নগদের জোগান বেশি বাড়লে তা মূল্যবৃদ্ধিকে ঠেলে তুলতে পারে। এমনিতেই জিনিসপত্রের চড়া দামে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা সাধারণ মানুষের। তার উপরে সাধারণত ভোটের সময়ে কেন্দ্র-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বেশি খরচ করে। ফলে বাজারে নগদ এমনিতেই বাড়ে। সে ক্ষেত্রে দামকে আয়ত্তে রাখা আরবিআই-এর সামনে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

আইসিআইসিআই সিকিয়োরিটিজ় প্রাইমারি ডিলারশিপের গবেষণা বিভাগের প্রধান এ প্রসন্ন বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই কর বাবদ বেশি টাকা দিতে হওয়া এবং সরকারি খরচে রাশ ব্যাঙ্কগুলির নগদের সমস্যা বাড়িয়েছে। যা কাটিয়ে উঠতে ধাপে ধাপে বাজারে তার জোগান বাড়াতে থাকবে আরবিআই। যখন ঘাটতি থাকবে না, তখন সুদ কমানোর কথা ভাবতে পারে তারা।

তবে চিন্তার কিছু দেখছেন না আইসিএআইয়ের প্রাক্তন কর্তা অনির্বাণ দত্ত। তাঁর মতে, নগদের অভাব সাময়িক। গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে সরকারের ঘরে কর বাবদ অনেকটা অর্থ গিয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ বাকি সরকারের। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণে তারা খরচ বাড়বে। ফলে ব্যাঙ্কের ঘরে বেশি টাকা ঢুকবে। আরবিআই ২.৫ লক্ষ কোটি জোগানোর কথাও বলেছে। ফলে বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bank Loans Bank Interest financial crisis India Reserve Bank of India (RBI) Banks Cash crisis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy