গত ৩১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে আর্থিক সমীক্ষা পেশ করেছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, স্বাধীনতার শতবর্ষ ২০৪৭-এ ‘বিকশিত ভারত’ বা উন্নত অর্থনীতির লক্ষ্যে পৌঁছতে আগামী দু’এক দশক ধরে লাগাতার গড়ে ৮% হারে আর্থিক বৃদ্ধি প্রয়োজন।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য নিয়ে বৈঠকে ব্যস্ত, তখন মোদী সরকারেরই অন্দরমহলে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়ে কপালে ভাঁজ। কারণ, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) বৃদ্ধির হার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছচ্ছে না বলে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা আশঙ্কা করছেন। তাঁদের মতে, গত অর্থবর্ষে সেই হার ৬.৫% ছোঁবে কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। বিকশিত ভারতের জন্য যেখানে ৮% আর্থিক বৃদ্ধি প্রয়োজন, সেখানে তা ৬.৫ শতাংশের কম হলে বিরোধীরা অস্ত্র পেয়ে যাবে। আগামী ৯ জুন তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির আগে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকেও অস্বস্তির মুখে পড়তে হবে। কারণ, ৩০ মে জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিক এবং ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বৃদ্ধির হার প্রকাশ করবে পরিসংখ্যান মন্ত্রক।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে, ২০২৪-২৫-এর শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) অর্থনীতির হাল কিছুটা শুধরেছে। কিন্তু তাতে গোটা বছরের বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে পৌঁছনো কঠিন। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ওই তিন মাসে বৃদ্ধির হার ৬.৪%-৭.২% মধ্যে থাকবে। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল-জুনে বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫%। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা কমে ৫.৮% হয়েছিল। তার পরে অক্টোবর-ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৬.২ শতাংশে পৌঁছয়। সেই তুলনায় জানুয়ারি-মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৪-৭.২ শতাংশের মধ্যে থাকলে তাকে কিছুটা হলেও উন্নতি বলা যাবে। কিন্তু মোদী সরকারের চিন্তার জায়গা হল, এতে গোটা অর্থবর্ষের বৃদ্ধির হার অন্তত ৬.৫% হবে বলে পরিসংখ্যান মন্ত্রকের যে অনুমান ছিল, তা পূরণ হবে না। কারণ, তার জন্য জানুয়ারি-মার্চে ৭.৬% আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রয়োজন। ফলে গোটা অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৬.৩-৬.৪ শতাংশের মধ্যে আটকে যাবে। কৃষি ক্ষেত্রের ছবি উজ্জ্বল হলেও কারখানার উৎপাদন, বাজারে কেনাকাটা ও নতুন লগ্নির গতি এখনও শ্লথ।
এই ৭% বৃদ্ধির হার দিয়েও ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যপূরণ হবে কি?
নীতি আয়োগের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বিশ্ব ব্যাঙ্কের মাপকাঠি অনুযায়ী, বছরে মাথা পিছু আয় ১৪,০০০ ডলার হলে তবেই তাকে উন্নত অর্থনীতি বলা যায়। এখন ভারতের মাথা পিছু আয় মাত্র ২৫৭০ ডলার। আগামী ২২-২৩ বছরে ১৪,০০০ ডলারে পৌঁছতে ৭ শতাংশের বেশি আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রয়োজন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)