Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Budget 2020

ছাড় ছেড়ে দিলে কম আয়করের হাতছানি

ট্রেজারি বেঞ্চের হাততালির মধ্যে আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ঘোষণা, যাঁদের বার্ষিক আয় পাঁচ থেকে ১৫ লক্ষের মধ্যে, তাঁদের জন্য আয়করের হার কমিয়ে নতুন বিকল্প খুলে দিচ্ছে সরকার।

সংসদে অর্থমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

সংসদে অর্থমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০২
Share: Save:

কর-প্রস্তাবের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বললেন, মধ্যবিত্তের ঘাড়ে চেপে থাকা আয়করের বোঝা হালকা করতে চান তিনি। সরল করতে চান তার হিসেব-নিকেশ। যাতে রিটার্ন জমার জন্য ছুটতে না-হয় পেশাদারের কাছে। শনিবার দীর্ঘতম বাজেট বক্তৃতায় সব থেকে আশার মুহূর্ত বোধ হয় তৈরি হল তখনই। কিন্তু করের হারের নতুন বিকল্প (সবিস্তার সঙ্গের সারণিতে) আর তা পেতে ছাড়ের সুবিধা ছাড়ার শর্ত জানার পরে ধন্দে অধিকাংশ মানুষ। অনেকেরই প্রশ্ন, সত্যিই কি করের পরিমাণ কমবে নতুন নিয়মে? নাকি কম হারে কর গোনার লোভে ছাড়ের সুবিধা হাতছাড়া করে মাথা চাপড়াতে হবে শেষ পর্যন্ত?

ট্রেজারি বেঞ্চের হাততালির মধ্যে আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ঘোষণা, যাঁদের বার্ষিক আয় পাঁচ থেকে ১৫ লক্ষের মধ্যে, তাঁদের জন্য আয়করের হার কমিয়ে নতুন বিকল্প খুলে দিচ্ছে সরকার। যেমন, আয় পাঁচ থেকে ৭.৫ লক্ষ টাকা হলে এখন যেখানে ২০% হারে কর দিতে হয়, সেখানে নয়া নিয়মে দিতে হবে ১০%।

তা হলে ধন্দ কোথায়?

উত্তর, শর্তে। নির্মলা জানিয়েছেন, এখন একশোটি ক্ষেত্রে আয়করে ছাড় মেলে। কিন্তু নতুন নিয়মে কম হারে কর দিলে তার মধ্যে ৭০টিরই সুযোগ আর নেওয়া যাবে না। পর্যালোচনা চলছে বাকি ৩০টি নিয়েও। তাই ভেবে কূল পাচ্ছে না আমজনতা। দুই বিকল্পের মধ্যে কার পাল্লা ভারী, সেই হিসেব স্পষ্ট নয়। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘আয়করে সত্যিই কতটা স্বস্তি মিলল কিংবা আদৌ মিলল কি না, তা স্পষ্ট হবে খোয়াতে হওয়া ছাড়ের বিষয়টি

খোলসা হওয়ার পরে।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার দাবি, অনেক ক্ষেত্রে উল্টে বেশি কর গুনতে হবে নতুন নিয়মে।

উপদেষ্টা সংস্থা অ্যাকুই ল-এর পার্টনার এবং কর বিভাগের প্রধান রাজর্ষি দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘কার বার্ষিক আয় কত (অর্থাৎ, কোন করের হারের আওতায় পড়েন) এবং তিনি কী কী ছাড়ের সুবিধা নেন, তার উপরে নির্ভর করবে, নতুন করের হার তাঁর পক্ষে ভাল কি না।’’ অর্থাৎ, আয় বদলানোর সঙ্গে পাল্টাতে পারে সেই সমীকরণ।

সম্ভবত এই কারণেই নতুন নিয়মে নিজের নিট সুবিধা চট করে হিসেব করে উঠতে পারেননি অধিকাংশ করদাতাই। প্রথমত, বেড়ানোর ভাতা (লিভ ট্র্যাভেল অ্যালাউন্স বা এলটিএ), বাড়ি ভাড়ার ভাতা (এইচআরএ), পেশা কর (প্রফেশনাল ট্যাক্স) ইত্যাদি সমেত বেশ কিছু ছাড়ের সুবিধা যে নতুন নিয়মে নেই, তা স্পষ্ট। কিন্তু উবে যাওয়া ৭০টি সুবিধার মধ্যে আর কী কী রয়েছে, তন্ন তন্ন করে তার খোঁজে নেমেছেন বিশেষজ্ঞরা।

একই সঙ্গে দানা বাঁধছে এক গুচ্ছ প্রশ্নও। যেমন—

• ৮০সি, ৮০সিসি ইত্যাদি ধারায় কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ), জীবনবিমায় লগ্নি, পিপিএফে টাকা ঢালা ইত্যাদিতে করছাড়ের যে সুবিধা মেলে, ধাপে ধাপে তা উঠে

যাবে না তো?

• এখন না হয় পুরনো হারে কর দিলে করছাড়ের সুবিধা পাওয়ার বিকল্প খোলা। কিন্তু আগামী দিনে সকলের জন্যই তা তুলে দেবে না

তো কেন্দ্র?

• অর্থমন্ত্রীর দাবি, নতুন নিয়ম এত সরল যে, দরকার হবে না পেশাদারের পিছনে ছোটার। কিন্তু দুই বিকল্পের মধ্যে কার জন্য কোনটি ভাল, তার চুলচেরা বিচার করতে আরও বেশি করে পরামর্শের প্রয়োজন হবে বলেএ তো মনে হচ্ছে!

• প্রত্যক্ষ কর বিধিতে পুরো ব্যবস্থা আরও সরল হওয়ার কথা ছিল। এতে করের হারের সংখ্যা আরও বাড়ল

না কি?

রাজর্ষির দাবি, আয়করের বোঝা কমানোর কথা নির্মলা বলেছেন ঠিকই। কিন্তু উল্টে ডিভিডেন্ডে কর মেটানোর দায় সংস্থার কাঁধ থেকে নিয়ে লগ্নিকারীদের উপরে চাপিয়েছেন তিনি। সংস্থাকে সারচার্জ ও সেস-সহ তা গুনতে হত ১৭.৬৫% হারে। সেখানে লগ্নিকারীকে তা দিতে হবে নিজের আয়ের ভিত্তিতে। অর্থাৎ, যাঁরা ২০-২৫-৩০ শতাংশ আয়করের বন্ধনীতে পড়েন, ডিভিডেন্ড বাবদ তাঁদের কর গুনতে হবে অনেক বেশি চড়া হারে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, ‘‘সরল করার পরিবর্তে আসলে আয়কর আরও জটিল করেছে কেন্দ্র। বেড়েছে বিভ্রান্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE