তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটে কর্মসংস্থান এবং গ্রামোন্নয়নে বিপুল খরচের প্রস্তাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকারি খরচকে কেন্দ্র যে জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়েছে, তাতে ধারের বোঝাও গিয়েছে বেড়ে। তা সত্বর কমানো প্রয়োজন। কেন্দ্র সেই কাজ করছে ঠিকই, তবে তার গতি আরও বাড়াতে হবে। আর এক অংশের সতর্কবার্তা, আর্থিক বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু তার জন্য জমি এবং শ্রম ক্ষেত্রের সংস্কার প্রয়োজন। লগ্নি ও কল-কারখানা স্থাপন তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। বাজেটে কিন্তু সেই সংস্কারের ইঙ্গিত নেই। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতা অতিক্রম করে কেন্দ্র এই ধরনের পদক্ষেপ কতটা করতে পারবে সেটাই দেখার। বিশেষত শ্রম সংস্কারের মতো বিষয়ে কর্মী সংগঠনগুলি যেখানে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে।
লোকসভা ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটে চলতি অর্থবর্ষের (২০২৪-২৫) রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৫.১ শতাংশে বেঁধেছিলেন নির্মলা। যদিও মঙ্গলবারের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে তা আরও কমিয়েছেন তিনি (৪.৯%)। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে তা জিডিপির ৪.৫ শতাংশে নামাতে চাইছে কেন্দ্র। বাজেটে ঘোষণা, এ বছর ঘাটতি পূরণের জন্য ১৪.০১ লক্ষ কোটি টাকা ধার করতে চলেছে সরকার। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১২,০০০ কোটি কম। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, সরকার এ বার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে বিপুল ডিভিডেন্ড পেয়েছে। ফলে ধার আরও কম হবে বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। যদিও কেন্দ্র সেই ঝুঁকি নেয়নি। বরং খরচ বাড়িয়েছে।
মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ় রেটিংসের ঋণ সংক্রান্ত শাখার অ্যাসোসিয়েট এমডি জেন ফ্যাং বলেছেন, ‘‘ভারত আরও আগ্রাসী ভাবে ধার কমানোয় জোর দিলে নিশ্চিত ভাবেই মূল্যায়নের উন্নতি হবে।’’ এই প্রসঙ্গে অনেকে মনে করাচ্ছেন, গত বছরের অগস্টে ভারতের মূল্যায়ন ঋণযোগ্যতার শেষ ধাপে (Baa3) স্থির রাখে মুডি’জ়। একই পথে হাঁটে অন্যান্য মূল্যায়ন সংস্থাও। সেই সময়ে তারা বলে, দু’এক বছরে সংস্কারকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে মূল্যায়নের উন্নতি ঘটাবে তারা। মূল্যায়ন বাড়লে কম সুদে ঋণের জোগান সহজ হয়। আজ কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক সচিব অজয় শেঠ অদূর ভবিষ্যতে ঋণ কমানোর দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত অর্থবর্ষে জিডিপির নিরিখে ভারতের সরকারি ঋণের অনুপাত প্রায় ৮২%।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)