Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাম্পের রোষে অস্বস্তিতে দিল্লি, বিশেষ সুবিধা তুলে নিচ্ছে আমেরিকা

ট্রাম্পের ফতোয়ায় মোদী সরকারকে রাজনৈতিক আক্রমণও সামলাতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের সঙ্গে শুল্ক লড়াইয়ের সুর চড়াল আমেরিকা।

ভারতের সঙ্গে শুল্ক লড়াইয়ের সুর চড়াল আমেরিকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:২১
Share: Save:

চিন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধে সন্ধির ইঙ্গিত মেলার সময়েই ভারতের সঙ্গে শুল্ক লড়াইয়ের সুর চড়াল আমেরিকা। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের পাঠানো চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যে যে বিশেষ সুবিধা (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড ট্রিটমেন্ট) ভারত দীর্ঘ দিন ভোগ করে আসছে, তাতে দাঁড়ি টানতে চলেছে তাঁর প্রশাসন। যার দরুন আমেরিকার মাটিতে ৫৬০ কোটি ডলার (প্রায় ৩৯,৭৬০ কোটি টাকা) পর্যন্ত মূল্যের রফতানি বিনা শুল্কে করার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে দিল্লি।

ভোটের মুখে এ নিয়ে বিরোধীরা আক্রমণ শানাতে পারে আঁচ করে, তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া দিয়েছে কেন্দ্র। বাণিজ্য সচিব অনুপ ওয়াধওয়ানের দাবি, এ দেশের রফতানিতে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব হবে সীমিত। কারণ, এই প্রকল্পে পাওয়া সুবিধার অঙ্ক মেরেকেটে ১৯ কোটি ডলার (প্রায় ১,৩৪৯ কোটি টাকা)। দু’দেশের সুসম্পর্কের কথা মাথায় রেখে ভারত এখনই পাল্টা শুল্কের কথা ভাবছে না বলেও জানান তিনি।

যদিও রফতানিকারীদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন্সের (ফিয়ো) ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সহায়ের আশঙ্কা, ‘‘এতে ধাক্কা খাবে কৃষিপণ্য, সামুদ্রিক পণ্য, হস্তশিল্প ইত্যাদি। যাতে কাজ করেন বহু কর্মী।’’ সেই ক্ষতি পূরণে কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সুবিধার আর্জি জানিয়েছে ফিয়ো।

বাণিজ্যে দেওয়াল

• জেনারেলাইজ়ড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) প্রকল্পে ভারত থেকে রফতানি হওয়া কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় তুলে নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।
• এতে আমেরিকার মাটিতে ৫৬০ কোটি ডলার (প্রায় ৩৯,৭৬০ কোটি টাকা) পর্যন্ত মূল্যের রফতানি বিনা শুল্কে করার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে দিল্লি।

জিএসপি কী?
• এই প্রকল্পে উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে প্রায় ৩,৭০০টি পণ্য মার্কিন মুলুকে ঢুকলে, তাতে শুল্ক বসে না। ১৯৭৬ সালে এই সুবিধা অানে আমেরিকা।
• এর আওতায় ১,৯০০টি পণ্য সে দেশে রফতানি করে ভারত।

দিল্লির দাবি
• সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভারতের রফতানিতে তার প্রভাব হবে সীমিত।
• কার্যকর হতে লাগে ৬০ দিন। তখনই রফার চেষ্টা হবে।
• তবে মার্কিন পণ্যে উঁচু আমদানি শুল্কের অভিযোগ ঠিক নয়। কর স্থির হয় ডব্লিউটিও-র নীতি মেনেই।

ট্রাম্পের ফতোয়ায় মোদী সরকারকে রাজনৈতিক আক্রমণও সামলাতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের যুক্তি, মোদী জমানায় বিশ্ব মঞ্চে ভারতের গুরুত্ব বহু গুণ বেড়েছে বলে প্রায়ই দাবি করা হয়। প্রচার করা হয় আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক অনেক বেশি পোক্ত হওয়ার কথা। এই অবস্থায় ভোটের আগে এই ঘোষণা অস্বস্তিতে ফেলবে তাদের। প্রশ্ন উঠবে, যে ট্রাম্পকে নরেন্দ্র মোদীর জড়িয়ে ধরার ছবি এক সময় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল, সম্প্রতি বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে মোদীকে বার বার বিঁধেছেন সেই ট্রাম্পই। রাজি হননি প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হতে। আর এ বার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যেও দেওয়াল তুলছেন তিনি।

অনেকে মনে করাচ্ছেন, পুলওয়ামায় জঙ্গিহানার পরে পাকিস্তানের থেকে বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া দেশের তকমা (মোস্ট ফেভার্ড নেশন) ফিরিয়েছিল ভারত। ইসলামাবাদ তখন দাবি করেছিল, এতে সামান্যই ক্ষতি হবে তাদের। কিন্তু তা মানতে রাজি হয়নি দিল্লি। অথচ এখন ওয়াশিংটন রফতানির সুবিধা কেড়ে নেওয়ার কথা বলার পরে একই ভাবে কম ক্ষতির কথা বলতে হচ্ছে দিল্লিকে।

এমনিতে ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারতকে বাণিজ্যে যে সুবিধা তাঁরা দেন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজার খোলে না ভারত। ২০১৭ সালে তাই এ দেশের সঙ্গে তাঁদের পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২,৭৩০ কোটি ডলার। বহু বার বলার পরেও পরিস্থিতি না পাল্টানোতেই এই কড়া পদক্ষেপ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সম্পর্কে আমেরিকায় ক্ষোভের মেঘ জমেছে নানা বিষয় ঘিরে। তার মধ্যে মার্কিন পণ্যে চড়া শুল্ক যেমন রয়েছে, তেমনই আছে কেন্দ্রের ই-কমার্স নীতি। যা খুশি করেনি অ্যামাজন, ওয়ালমার্টের মতো সংস্থাকে। ভিসা, মাস্টারকার্ডের মতো পেমেন্ট গেটওয়ে সংস্থাকে সব তথ্য (ডেটা) ভারতের সার্ভারে রাখতে বলা, ওযুধের দাম বেঁধে দেওয়া, স্মার্টফোন-সহ নানা বৈদ্যুতিন পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তেও অখুশি মার্কিন প্রশাসন। অনেকের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত তারই ফলশ্রুতি।

ভারতের অবশ্য দাবি, আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব পোক্ত। সম্প্রতি তাদের থেকে তেল, গ্যাস ইত্যাদির আমদানি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে মার্কিন মুলুকের। দিল্লি মনে করিয়েছে, গুগ্‌ল, ফেসবুক, উব্‌র, অ্যামাজনের মতো মার্কিন সংস্থার এ দেশে চুটিয়ে ব্যবসা করার কথাও। সব মিলিয়ে আলোচনার টেবিলেই সমস্যা মেটাতে চাইছে তারা।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রেও খবর, ওই নির্দেশ কার্যকর হতে যে ৬০ দিন লাগে, তার মধ্যে কথার মাধ্যমে সমাধানের খোঁজ করতে চায় তারা। তাই ভাবনায় নেই পাল্টা শুল্কের চিন্তাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান নিয়ে উত্তপ্ত আবহে আসলে আমেরিকাকে চটাতে চায় না ভারত। আবার ওয়াশিংটনের সঙ্গে কথা বলে বাণিজ্য-কূটনীতিতেও মান বাঁচাতে মরিয়া তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Export Import Duty United States India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE