দেশে লাফিয়ে বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন। আর তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠছে ইউপিআই (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস)। কম বা বেশি, যে কোনও খরচই নিমেষে সারা হয়ে যাচ্ছে মুঠো ফোনে আঙুল ছুঁয়ে। সমীক্ষা বলছে, এতটাই দ্রুত এবং সহজ সেই লেনদেন যে, তা ঢুকে পড়েছে গৃহস্থের মাসকাবারির খাতায়। রোজকার সংসার চালাতে প্রয়োজনীয় মুদিপণ্য কেনার জন্য অনেকেরই ভরসা হয়ে উঠছে ইউপিআই স্ক্যানার বা দোকানির মোবাইল নম্বর। সরাসরি বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। একাংশের মতে, নেট বাজারে কেনাকাটা বেড়ে যাওয়াও এর কারণ।
ইউপিআই-এর নিয়ন্ত্রক এনপিসিআই-এর তথ্যের উপর ভিত্তি করে সমীক্ষাটি চালিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। সেখানে প্রকাশ, গত মাসে দেশবাসী ইউপিআই মারফত সব থেকে বেশি টাকা মিটিয়েছেন মুদিবাজারের কেনাকাটায়। ছোট-বড় সব দোকানে একই ছবি। তবে এই শীর্ষ স্থান ইউপিআই ব্যবহারের নিরিখে। টাকার অঙ্কে প্রথম ঋণের টাকা শোধ।
বস্তুত, ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার যত বেড়েছে, ততই দেশে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ইউপিআই-এর ব্যবহার। এতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিতে হয় না। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, শুধু মোবাইল নম্বর বা নাম ব্যবহার করে ফোনের সাহায্যে লেনদেন করা যায় বলে এর জনপ্রিয়তা বেশি। যে কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে ক্রেডিট, ডেবিট কার্ড বা নেট ও মোবাইল ব্যাঙ্কিং।
কোন ক্ষেত্রে এবং কোন রাজ্যে কত ইউপিআই লেনদেন হচ্ছে, জুলাই থেকেই প্রথমবার তার হিসাব জানাতে শুরু করেছে এনপিসিআই। দেখা গিয়েছে, গত মাসে মোট ৩০৩ কোটির বেশি লেনদেন হয়েছে মুদি এবং বড় বিপণিতে (সুপার মার্কেট) নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের কেনাকাটায়। যা মোট ইউপিআই লেনদেনের ২৪.৫%। টাকার অঙ্কে প্রায় ৬৫,০০০ কোটি। গড়ে প্রতিটি লেনদেন ২১৪ টাকার।অন্য দিকে, ইউপিআই দিয়ে ঋণ শোধ হয়েছে প্রায় ৯৪,০০০ কোটি টাকা। মোট লেনদেনের প্রায় ১৩%। এই খাতে গড়ে প্রতিটি লেনদেনের অঙ্ক ৫৮১৭ টাকা।হোটেল-রেস্তরাঁয় খাওয়ার খরচ খাতে ইউপিআই ব্যবহৃত হয়েছে ২৪০ কোটি। যা মোট লেনদেনের ১৯.২%। ৩২,০০০ কোটি টাকারও বেশি। গড়ে প্রতিটি লেনদেন প্রায় ১৩৬ টাকার।
স্টেট ব্যাঙ্কের দাবি, দৈনন্দিন কাজে ইউপিআইয়ের ব্যবহার যে বাড়ছে, তা স্পষ্ট। যে কারণে মুদিপণ্য ও হোটেল-রেস্তরাঁ মিলিয়ে লেনদেন প্রায় ৫৫০ কোটি। সিংহভাগই হয়েছে দক্ষিণ ও পশ্চিমের রাজ্যে। প্রথম মহারাষ্ট্র। লেনদেন সংখ্যা ১৯০ কোটির বেশি (মোট লেনদেনের ১০%)। টাকার অঙ্কে ২.৩ লক্ষ কোটি। তার পরে যথাক্রমে কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, তেলঙ্গানা। পশ্চিমবঙ্গ দশে। গত মাসে রাজ্যে মোট লেনদেন হয়েছে ৪.২ কোটি, যা ৬২,০০০ কোটি টাকার বেশি। তবে দেশের মাত্র ২.২% অংশীদারি বাংলার। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো শহরে তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই মোবাইল নির্ভর। তারই প্রতিফলন ইউপিআই লেনদেনের ছবিতে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)