Advertisement
E-Paper

জাগতে রহো

হ্যাকারের হানা। এটিএমে ফাঁদ। কার্ডে প্রতারণা। নেট লেনদেনে বিপদ যেন ওত পেতে রয়েছে। একটু সতর্ক থাকলে কিন্তু তার অনেকটাই এড়ানো সম্ভবএটিএমে টাকা তোলা হোক বা ক্রেডিট কার্ডে বিবাহবার্ষিকীর কেনাকাটা। কিংবা হয়তো নিছক অনলাইনে টাকা মেটানো। বিপদ কোথায়, আর তা এড়ানোর উপায়ই বা কী, চলুন নজর রাখি।

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ১৩:১৭

প্রতারণার ফাঁদ পাতা নেটের ভুবনে। তা সে এটিএমে টাকা তোলা হোক বা ক্রেডিট কার্ডে বিবাহবার্ষিকীর কেনাকাটা। কিংবা হয়তো নিছক অনলাইনে টাকা মেটানো। বিপদ কোথায়, আর তা এড়ানোর উপায়ই বা কী, চলুন নজর রাখি।

জালিয়াতির রকমফের

• কার্ডে জালিয়াতি বিভিন্ন ভাবে করা সম্ভব। যেমন, অনেক সময় এটিএম মেশিনে যেখানে কার্ড ঢোকাই, সেখানে ‘ডুপ্লিকেট কার্ড রিডার’ লাগিয়ে রাখে প্রতারকরা। চেষ্টা করে তার মাধ্যমে কার্ডের পিন নম্বর-সহ যাবতীয় তথ্য হাতানোর। হয়তো দেখা গেল, কার্ড রিডারটি লাগিয়ে এটিএমের বাইরেই অপেক্ষা করছে সে। গ্রাহক বেরিয়ে যেতেই ভিতরে ঢুকে বার করে নিয়ে যাচ্ছে রিডারটি

• এটিএম বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার (সোয়াইপ) করে জিনিসপত্র কেনাকাটার সময়েও তথ্য হাতানোর চেষ্টা হতে পারে একই ভাবে

• ডুপ্লিকেট কার্ড রিডারের মতো ব্যবহার করা হতে পারে নকল পিন প্যাডও। যেখানে পিন নম্বর বা টাকার অঙ্ক লেখার বোতাম থাকে, নকল বা ডুপ্লিকেট পিন প্যাড লাগানো থাকে তার উপরেই। এটিএমের মেশিনে ছোট ক্যামেরা (যার মুখ নম্বরের বোতামের দিকে) লাগিয়েও আপনার পিন নম্বর দেখে ফেলা সম্ভব

• নেট লেনদেনে আসলের মতো দেখতে ব্যাঙ্কের নকল ওয়েবসাইট তৈরি করেও গ্রাহকদের আইডি, পাসওয়ার্ড হাতানোর মতো ঘটনা ঘটে

• অনেক সময়ে ই-মেল পাঠিয়ে জানার চেষ্টা করা হয় ব্যাঙ্কের তথ্য

কী করবেন?

এক এক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ হবে এক এক রকম। তাই মাথায় রাখুন—

কার্ডে—

• ‘অ্যালার্ট’ পেতে অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মোবাইল নম্বর ও ই-মেল যুক্ত করুন

• খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চেনা এটিএম থেকেই টাকা তুলুন

• এটিএমে ঢোকার আগে দেখুন, কেউ পিছু নিচ্ছে কিনা। টাকা তোলার সময় কেউ ‘পিন-প্যাড’-এর দিকে তাকিয়ে নেই তো

• খেয়াল রাখুন, মেশিনে যেখানে পিন নম্বর দিচ্ছেন (পিন-প্যাড), তার উপরের দিকে কোনও ছোট ক্যামেরা লাগানো আছে কি না

• মেশিনে কার্ড ঢোকানোর জায়গায় ডুপ্লিকেট কার্ড রিডার লাগানো নেই তো? বাড়তি কিছু আছে বলে সন্দেহ হলে, তা একটু নেড়েচেড়ে দেখুন

• ঘরে একটিই এটিএম থাকলে, টাকা তোলার সময়ে সেখানে দ্বিতীয় কেউ ঢুকতে চাইলে বাধা দিন। একাধিক এটিএম থাকলে এবং আপনি থাকাকালীন অন্য কেউ তা ব্যবহার করলে, একটু বাড়তি সতর্ক থাকুন। পিন নম্বর টাইপ করার সময়ে অন্য হাত দিয়ে তা ঢেকে রাখুন

• মাঝেমধ্যেই পিন নম্বর বদলান। অন্য কেউ জেনে থাকতে পারে বলে মনে হলে, তা সঙ্গে সঙ্গে করা জরুরি

• নিয়মিত ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে নজর রাখুন। আপনি করেননি, এমন কোনও লেনদেনের উল্লেখ সেখানে থাকলে অবিলম্বে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে জানান

• কোনও ভাবে এটিএম কার্ড চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ‘হেল্পলাইন’ বা কাস্টমার কেয়ারে ফোন করুন। নিশ্চিত করুন যাতে ওই কার্ড আর কেউ ব্যবহার করতে না-পারে

• কোনও এটিএমে সুরক্ষার অভাব রয়েছে বলে মনে হলে তা এড়িয়ে চলুন। ভিড় বেশি থাকলেও অন্য এটিএমের খোঁজ করা ভাল

• ডেবিট কার্ডে লেনদেন-সীমা বাঁধুন

• পিন নম্বর লেখার সময়ে মেশিনের পর্দায় তা দেখা যাওয়ার কথা নয়। তার বদলে সেখানে ‘XXXX’ ফুটে ওঠার কথা। তেমনটা না-হলে, পুরো নম্বর লিখবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই সমস্যার কথা ব্যাঙ্ককে জানান

• মেশিনে কাজ শেষে কার্ড বেরোতেই সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবেন না। ফের সেখানে পর্দায় (স্ক্রিন) ‘ওয়েলকাম’ ভেসে উঠতে দিন। বেরোনোর আগে ‘ক্যান্সেল’ বোতাম টিপে আসা ভাল

• ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড হারালে সেই মুহূর্তে ব্যাঙ্ককে জানিয়ে ওই কার্ডটি ব্লক করান। যত দিন না নতুন র্কাড পেয়ে সেটি ব্যবহার করছেন তত দিন পুরনো কার্ডটি যেন আটকানো থাকে

নেটে—

• নিজের ব্যাঙ্কের নাম ব্রাউজার বার (নেট খুললে সবচেয়ে উপরে যে ফাঁকা জায়গাটি থাকে)-এ টাইপ করুন

• ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইট বন্ধ করার সময়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলুন

• নিয়মিত কম্পিউটার ও স্মার্ট ফোনকে অ্যান্টি ভাইরাস বা অ্যান্টি ম্যালওয়্যার দিয়ে পরিষ্কার করুন

• শুধুমাত্র সুরক্ষা-চিহ্ন যুক্ত ওয়েবসাইটগুলির মাধ্যমে টাকা পাঠান। সেগুলি ‘https://’ দিয়ে শুরু কি-না দেখে নেবেন। ‘http://’ থাকলে সেখান থেকে টাকা না পাঠানোই উচিত। এ ক্ষেত্রে ‘s’-এর মানে সিকিওরড অর্থাৎ সুরক্ষিত

• ব্যাঙ্কের আসল সাইট চিনে রাখুন। অনেক সময়ে আসলের মতো দেখতে, কিন্তু নকল ওয়েবসাইটও থাকে। যা তথ্য চুরির কাজে ব্যবহার করা হয়

• যে-কোনও অ্যাপ ব্যবহারের আগে যাচাই করুন

• অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য সবসময় ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন

• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মোবাইল নম্বর নথিভুক্ত করুন। যাতে অ্যাকাউন্টে লেনদেন হলেই আপনার কাছে এসএমএসে খবর চলে যায়। এসএমএস না-পেলে তা ব্যাঙ্কের নজরে আনুন। ফোন নম্বর পরিবর্তন হলেও সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যাঙ্কে জানান

কী করবেন না

কার্ডের ক্ষেত্রে—

• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর, পিন, সিভিভি (কার্ডের পিছনে থাকা তিন সংখ্যার নম্বর, যা নেট-লেনদেনে কাজে লাগে), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড কাউকে দেবেন না

• এমনকী ব্যাঙ্কের শাখায় বসে কোনও কর্মী চাইলেও নয়

• অনেক সময়ে ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও বিশ্বস্ত সংস্থার নাম করে ফোন, ই-মেল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতারক কার্ডের পিন নম্বর জানার চেষ্টা করে। ভুলেও সেই ফাঁদে পা দেবেন না

• কার্ড ব্যবহারে অপরিচিতের সাহায্য নেবেন না

• কার্ডে জিনিসপত্র কেনাকাটার সময়ে সাবধান থাকুন। দোকানে কেনাকাটা বা রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ার পরে কার্ড সোয়াইপ করানোর জন্য তা অন্য কারও হাতে দেবেন না

• এটিএম ব্যবহারের পর ‘ট্রানজাকশন স্লিপ’ ঘরের মধ্যে ফেলবেন না। পরে একটু দূরে কোথাও তা কুচিয়ে ছিঁড়ে ফেলুন

নেটের জন্য—

• নেট ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সময়ে এক সঙ্গে একাধিক ওয়েবসাইট খুলে রাখবেন না

• ইউজার আইডি (যে নাম বা পরিচায় ব্যবহার করে নেটে লেনদেন করেন), পাস ওয়ার্ড, জন্মের তারিখ, ক্রেডিট/ ডেবিট কার্ডের নম্বর, সিভিভি, পিন কখনও কোনও ‘পপ-আপ’ (ওয়াবসাইটে ভেসে ওঠা অন্য পেজ) সাইটে দেবেন না

• ব্যাঙ্কের সাইট খোলার সময়ে খেয়াল রাখুন ‘পপ-আপ’ আছে কি-না। তথ্য চুরির ক্ষেত্রে অনেক সময় তার ভূমিকা হয় মারাত্মক

• সাইবার কাফে বা একাধিক লোক একই কম্পিউটার ব্যবহার করেন, এমন স্থান থেকে টাকা পাঠাবেন না

• অজানা লোকের থেকে (অনেক সময়ে ব্যাঙ্কও) পাঠানো ই-মেল বা স্প্যাম ভুলেও খুলবেন না। অনেক ক্ষেত্রে তা এমন ভাবে প্রোগ্রাম করা থাকে, যাতে সহজেই তথ্য চুরি হয়

• অচেনা লোকের থেকে পাঠানো চাকরির প্রস্তাব, বিদেশ ভ্রমণ, লটারি বা টাকা জেতা সংক্রান্ত কোনও ই-মেল, এসএমএস বা ফোনের উত্তরে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কার্ড বা পিন নম্বর দেবেন না

• অনলাইন সমীক্ষার নামে অথবা নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গিয়েছে জানিয়ে, নতুন করে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়। তা দেবেন না

• ফেসবুক বা ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য দেবেন না

• অজানা ওয়েবসাইট থেকে কোনও সফটওয়্যার ডাউনলোড করবেন না। সেখানে অনেক সময়ে ভাইরাস থাকে

যদি কয়েকটি সাধারণ বিষয় মাথায় রাখলে কষ্টের টাকা চুরি যাওয়া থেকে বাঁচানো যায়, তবে সেটুকু মেনে চলতে ক্ষতি কী?

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

ATM fraud Net Transaction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy