ভারতে নিট হিসাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) কমা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই কলকাতায় নিযুক্ত আমেরিকার কনসাল জেনারালের সঙ্গে সম্প্রতি বাংলায় সে দেশের লগ্নির পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, রাজ্যের পক্ষ থেকে বিদেশি লগ্নি টানতে একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিদেশে রোড শো, বিদেশি প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ, শিল্প সম্মেলন প্রভৃতি সবই এর অঙ্গ। কিন্তু এই সমস্ত উদ্যোগ যে খুব একটা কাজে আসেনি, তা মোটামুটি স্পষ্ট বাণিজ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। সেখান দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি টানায় দেশের প্রথম দশ রাজ্যের তালিকায় নেই বাংলা। শুধু তা-ই নয়। এই দৌড়ে পশ্চিমবঙ্গকে টপকে গিয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা, কেরলের মতো ছোট রাজ্যগুলি। মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাডু বা উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্য তো বেশ কয়েক যোজন এগিয়ে।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রকের তৈরি এই রিপোর্ট বলছে, গত বছর রাজ্যে মোট বিদেশি লগ্নি এসেছে ২৫৩৪ কোটি টাকার। ক্রমতালিকায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান একাদশ। গত বছরও একই স্থানে ছিল রাজ্য। সেখানে প্রথম স্থানে থাকা মহারাষ্ট্রে এসেছে প্রায় ১.৬৫ লক্ষ কোটি টাকার এফডিআই। তার পরে কর্নাটক ও দিল্লিতে এসেছে যথাক্রমে ৫৬,০০০ কোটি এবং ৫১,৫৪০ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গের আগে এই তালিকায় রয়েছে হরিয়ানা (২৬,৬০০ কোটি টাকা), কেরল (৩৩৩০ কোটি), রাজস্থান (৩১৭০ কোটি)। আর পিছনে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (১৯৫৭ কোটি), ছত্তীসগঢ় (৬২ কোটি), মধ্যপ্রদেশের (৫০২ কোটি টাকা) মতো রাজ্য। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, বিদেশি লগ্নি মূলত সেই রাজ্যগুলিতেই যায় যেখানে লগ্নির সুষ্ঠু পরিবেশ যেমন রয়েছে, তেমনই আছে সংস্থার নিরাপত্তা ও শান্তি। সে দিক থেকে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু এমনকী হরিয়ানাও বাংলার চেয়ে এগিয়ে।
রাজ্যের এক শিল্প-কর্তার কথায়, ‘‘সরকার প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির আনতে চেষ্টা করছে। কিন্তু জমি নীতি থেকে আইন-শৃঙ্খলা বা তোলাবাজি— এ সবের যে অভিযোগ প্রায়শই ওঠে, তার প্রভাব তো থাকবেই। তার উপরে এখন সব রকম ভাতা ও প্রকল্প বন্ধ রেখেছে রাজ্য। তারও নেতিবাচক প্রভাব থাকে বিদেশি লগ্নিতে।’’ বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের সভাপতি অমিত সারোগির বক্তব্য, বিদেশি লগ্নির জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সেই ক্ষেত্রে শুল্ক যুদ্ধের প্রভাবও এর উপরে পড়ছে। তবে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে যতটা বিদেশি লগ্নি এসেছে তা ইতিবাচক। এই অঙ্ক বাড়াতে সব রকম পদক্ষেপ করছে সরকার। তবে গত বছরের তুলনায় রাজ্যের স্থান নিচে নামেনি। কিন্তু ভবিষ্যতে বিদেশি লগ্নি আরও ভাল হবে বলে আমি নিশ্চিত।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)