E-Paper

নজিরের মধ্যেই আশঙ্কা ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি

গত সোমবার সেনসেক্স এবং নিফ্‌টি নতুন উচ্চতায় পৌঁছয়। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকটি লেনদেনের মধ্যবর্তী সময়ে প্রথম বার ৭৫,০০০ পার করলেও দিনের শেষে নেমে আসে। বুধবার শেষ বেলায় তা ৭৫,০৩৮ পয়েন্টে থিতু হয়।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫১
Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

অপেক্ষা ছিল সংশোধনের। অথচ গত সোমবার থেকে ভারতীয় শেয়ার বাজারের সূচক একের পর এক মাইলফলক পার করতে থাকল। নামমাত্র সংশোধন এল শুক্রবার। তবে এরই মধ্যে ইজ়রায়েলের উপরে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে ইরান। অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজারের উপরে তার কী প্রভাব পড়ে, সে দিকেই এখন তাকিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহল।

গত সোমবার সেনসেক্স এবং নিফ্‌টি নতুন উচ্চতায় পৌঁছয়। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকটি লেনদেনের মধ্যবর্তী সময়ে প্রথম বার ৭৫,০০০ পার করলেও দিনের শেষে নেমে আসে। বুধবার শেষ বেলায় তা ৭৫,০৩৮ পয়েন্টে থিতু হয়। সোমবার বিএসই-তে নথিভুক্ত সমস্ত শেয়ারের মোট মূল্য প্রথম বার ৪০০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছয়। ৩০০ লক্ষ কোটি (৫ জুলাই ২০২৩) থেকে এই উচ্চতায় উঠতে সময় লেগেছে মাত্র ন’মাস। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি সেনসেক্স ৫০,০০০-এ পা রেখেছিল। সেখান থেকে ৫০% বেড়েছে মাত্র তিন বছর আড়াই মাসে। এক বছর আগে সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ৫৯,৮৪৭। অর্থাৎ, মাত্র ১২ মাসে সূচকটি ২৫.৩৮% মাথা তুলেছে। শুধু বড় মাপের শেয়ারই (লার্জ ক্যাপ) নয়, এই সময়ে অত্যন্ত চড়া হারে বেড়েছে অসংখ্য মাঝারি (মিড ক্যাপ) এবং ছোট শেয়ারও (স্মল ক্যাপ)। সব ধরনের শেয়ার এতটা ওঠায় প্রত্যেকটি মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প আকর্ষণীয় হারে লাভের সন্ধান দিয়েছে।

এতটা মাথা তোলার পরে গত শুক্রবার সেনসেক্স ৭৯৩ পয়েন্ট খোয়ায়। বিক্রির চাপে নিফ্‌টিও নামে ২৩৪ পয়েন্ট। তবে দুই সূচকের উচ্চতা নয়, এই পতনের মূল কারণ ছিল আমেরিকায় পূর্বাভাসের (৩.২%) তুলনায় বেশি মূল্যবৃদ্ধি (৩.৫%)। সে দেশে যত দ্রুত সুদ কমানো হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছিল, এর ফলে তা না-ও হতে পারে মনে ধরে নেন লগ্নিকারীরা। ভারতের সুদের হার আরও কি‌ছু দিন চড়া থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা উদয় কোটাক। তবে যে কারণেই হোক, এত উঁচু বাজারে সংশোধন আসায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন বিশেষজ্ঞেরা। সে দিন বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজার থেকে নিট ৮০২৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল। বাজার আরও পড়ত যদি না দেশীয় সংস্থাগুলি ৬৩৪২ কোটি টাকার পুঁজি ঢালত।

এর বাইরেও কিছু শর্ত তৈরি হয়েছে যা বাজারকে চাপে রাখতে পারে। শনিবার গভীর রাত থেকে ইজ়রায়েলের উপরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু করেছে ইরান। যা নতুন করে অশোধিত তেল ও অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করতে পারে। সম্প্রতি বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি ৯০ ডলার পার করেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, ইরান-ইজ়রায়েলের সমস্যা সুদূরপ্রসারী হলে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে। যা ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশের পক্ষে ভাল খবর নয়। আবার উল্টো দিকে মার্চে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.০৯% থেকে নেমে এসেছে ৪.৮৫ শতাংশে। এই খবর আশঙ্কার দিকগুলিকে কতটা প্রতিহত করতে পারে সে দিকে নজর থাকবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের আশা, জুলাই-সেপ্টেম্বরে মূল্যবৃদ্ধির হার নামতে পারে ৩.৮ শতাংশে। ফলে বাজার মনে করছে আমেরিকার আগেই সুদ কমানোর কথা ভাবতে পারে ভারত।

প্রথা মেনে বড় সংস্থাগুলির মধ্যে এ বারও প্রথম আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস। গত জানুয়ারি-মার্চে তাদের আয় দাঁড়িয়েছে ৬১,২৩৭ কোটি টাকা। নিট মুনাফা ৯.১% বেড়ে ১২,৪৩৪ কোটি টাকা হয়েছে। শেয়ার প্রতি ২৪ টাকা করে চূড়ান্ত ডিভিডেন্ডের সুপারিশ করেছে তারা। টিসিএসের ভাল ফলের জন্য অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ফলও প্রভাবিত হতে পারে।

আর চার দিনের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হচ্ছে। অন্য দিকে, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে বাজার কিছুটা অস্থির থাকবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Iran-Israel Conflict BSE Sensex

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy