প্রতীকী ছবি
সপ্তাহটা শুরু হয়েছিল বেশ আশা জাগিয়ে। টানা সাত দিন নাগাড়ে উঠেছিল বাজার। কিন্তু তার পরেই নামে পতনের খাঁড়া। বৃহস্পতিবার অল্প পড়লেও, শুক্রবার এক ধাক্কায় ৬৯০ পয়েন্ট নামে সেনসেক্স। নিফ্টি ১৯৮। যার কারণ মূলত বিশ্ব অর্থনীতিতে দুর্বলতার আশঙ্কা। তবে এ বারেও ঢাল হয়েছে দেশীয় মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলির লগ্নি। যারা আরও বেশি পতন রুখে দিয়েছে দ্রুত। ঠিক যে ভাবে এর আগে বার বার ফান্ডের মাধ্যমে নিয়মিত আসা বড় পুঁজি বাজারকে বড় আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করেছে।
পরিসংখ্যান জানিয়েছে, বৃদ্ধির হার কমতে পারে বিশ্বের বড় কয়েকটি অর্থনীতির। এতেই আচমকা দুশ্চিন্তা গ্রাস করে বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারকে। তার উপরে সামনে বড়দিন। লম্বা ছুটির মরসুম পশ্চিমি দুনিয়ায়। একে চিন-আমেরিকার মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ এখনও মেটার লক্ষণ নেই। তার উপরে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগত ওঠানামা করছে অশোধিত তেলের দাম। এই অনিশ্চিত অবস্থায় লম্বা ছুটির মরসুমে হাতে সব শেয়ার রেখে দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাননি বিদেশি লগ্নিকারীরা। বিশেষত ফান্ড-সহ আর্থিক সংস্থাগুলি। আসলে এমনিতেই প্রতি বছর এই সময় ফান্ড সংস্থাগুলির মধ্যে হাতের শেয়ার কিছুটা খালি করার প্রবণতা থাকে। এ বার বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে অনিশ্চয়তার মেঘ থাকায় তা আরও বেশি। মার্কিন মুলুক-সহ পশ্চিমি দেশগুলিতে বাজারে পতনের এটি অন্যতম কারণ। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রভাব আছড়ে পড়েছে সেনসেক্স, নিফ্টির উপরেও।
তবে ভারতে লোকসভা ভোট পর্যন্ত বাজার এমনিতেই কিছুটা অনিশ্চিত থাকতে পারে। আর অনিশ্চিত বাজারের ধর্মই হল, শেয়ারের দাম কিছুটা বাড়লে তা তুলে নিতে চান লগ্নিকারীরা। ভারতের বাজারেও এখন সেই প্রবণতা জাঁকিয়ে বসেছে। ফলে কিছুটা ওঠার পরে সংশোধন এসেছে প্রত্যাশিত নিয়মেই।
তবে কিছু সদর্থক খবরও পেয়েছে দেশ। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) দাম নেমেছে ৫৩ ডলারের আশেপাশে। যা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের পরে সব থেকে কম।। শুধু তা-ই নয়, তেলের দাম এতটা কমায় বেশ খানিকটা বেড়েছে টাকার দাম। গত শুক্রবার এক ডলার দাঁড়িয়েছে ৭০.১৮ টাকা। এই দুইয়ের কারণে ভারতের আমদানি খাতে খরচ কমবে। দেশেও সস্তা হবে তেলের দর।
এসআইপি পথে লগ্নি মাস বছর ২০১৭-১৮ ২০১৮-১৯ • এপ্রিল ৪২৬৯ ৬৬৯০ • মে ৪৫৮৪ ৭৩০৪ • জুন ৪৭৪৪ ৭৫৫৪ • জুলাই ৪৯৪৭ ৭৫৫৪ • অগস্ট ৫২০৬ ৭৬৫৮ • সেপ্টেম্বর ৫৫১৬ ৭৭২৭ • অক্টোবর ৫৬২১ ৭৯৮৫ • নভেম্বর ৫৮৯৩ ৭৯৮৫ তহবিলের হিসেব কোটি টাকায়
ডিসেম্বরে ঋণনীতিতে আরবিআই সুদ না কমালেও, খুচরো ও পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা নেমে আসার কারণে আগামী দিনে সুদ কমানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে অর্থনীতির পরিস্থিতি এমন অনুকূল হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলি ফের ভারতের বাজারে দেখা দিয়েছে লগ্নি ঝুলি নিয়ে। ডিসেম্বরে এ পর্যন্ত তারা ৩,০০০ কোটি টাকার বেশি ঢেলেছে।
তবে সব থেকে নিশ্চিন্ত করেছে দেশীয় ফান্ডগুলি। নভেম্বরে এসআইপি-র মাধ্যমে সেগুলিতে লগ্নি এসেছে ৭,৯৮৫ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। বিভিন্ন ফান্ডের মোট এসআইপি-র সংখ্যা এখন ২.৫২ কোটি। ফান্ডের মাধ্যমে নিয়মিত বড় লগ্নি অনেক বার বাজারকে বড় পতন থেকে রক্ষা করেছে। মনে করা হচ্ছে অনিশ্চয়তা যতই থাকুক, দেশের অন্দরে সদর্থক খবরগুলিই বাজারকে ফের উপরে ওঠার শক্তি জোগাবে।
জরিমানা খাতে আদায় ব্যাঙ্ক ২০১৭-১৮ ২০১৮-১৯* • স্টেট ব্যাঙ্ক ২৪৩৪ ৪৬০ • পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ১৫২ ১১২ • সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ১৮১ ৫৫ • ব্যাঙ্ক অব বরোদা ৮৯ ৬৭ • ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক ৯৮ ৩৮ অব কমার্স • ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক ৮৮ ৭৫ • কানাড়া ব্যাঙ্ক ৯১ ৩৬ • আইডিবিআই ব্যাঙ্ক ৮১ ২৫ • ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক ২ ১
কিছু দিন হল ভাটা পড়েছে ইকুইটি শেয়ারের নতুন ইস্যুতে। সামনেই লোকসভা ভোট। ফলাফল না দেখে অনেক সংস্থাই বাজারে নতুন শেয়ার ছাড়তে চাইছে না। তবে দেখা যেতে পারে কয়েকটি বন্ড ও ডিবেঞ্চারের পাবলিক ইস্যু।
*(সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) **সেভিংস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালান্স জমা না রাখলে যে জরিমানা গুনতে হয় সেই খাতে ২০১৭-১৮ সালে বেশ কিছু অর্থ এসেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ঝুলিতে। পরবর্তীকালে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক জরিমানার শর্ত শিথিল করে। ফলে চলতি বছরে সেই অঙ্ক অনেকখানি কমেছে। ***জরিমানার হিসেব কোটি টাকায়
এ দিকে, সেভিংস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালান্স না রাখায় জরিমানা খাতে গত অর্থবর্ষে মোটা টাকা তুলেছিল কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। স্টেট ব্যাঙ্ক ২০১৭-১৮ সালে এই খাতে সংগ্রহ করেছিল ২,৪৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে অনেকেই ফের শিথিল করেছে এই নিয়ম। ফলে নেমেছে জরিমানা বাবদ আদায়ও। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে স্টেট ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ওই সংগ্রহ নেমেছে ৪৬০ কোটি টাকায়।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy