Advertisement
E-Paper

দ্রাখমা নয়, স্ক্রিপ-ই কি হতে চলেছে গ্রিসের অন্তর্বর্তী মুদ্রা?

সফোক্লিস বেঁচে থাকলে কী লিখতেন বলা মুশকিল। কিন্তু এটাও ঠিক যে, গ্রিকদের বোধহয় হাজার খানেক বছর আগের গৌরব অ্যাক্রোপলিস বা সক্রেটিস কিংবা প্লেটোর নাম জপে দিন কাটাতে হবে না। না কি হবে?

সুপর্ণ পাঠক

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ১৩:২৭
গ্রিসের পথে প্রতিবাদ। ছবি: এএফপি।

গ্রিসের পথে প্রতিবাদ। ছবি: এএফপি।

সফোক্লিস বেঁচে থাকলে কী লিখতেন বলা মুশকিল। কিন্তু এটাও ঠিক যে, গ্রিকদের বোধহয় হাজার খানেক বছর আগের গৌরব অ্যাক্রোপলিস বা সক্রেটিস কিংবা প্লেটোর নাম জপে দিন কাটাতে হবে না। না কি হবে? না কি শেষ পর্যন্ত স্ক্রিপকেই বেছে নিতে হবে মধ্যবর্তী সমাধান হিসাবে?

এর উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে নাটকের পরবর্তী অঙ্কের জন্য।

২০১০ সালে যখন শূন্য কোষাগার, বলা চলে ভিক্ষাপাত্র সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন গ্রিক সোশ্যালিস্ট প্রধানমন্ত্রী পাপান্দ্রু ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তখন তাঁর উপদেষ্টা ছিলেন সদ্য প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ভেরুফাকিস। তিনি সেই ঋণের বিপক্ষে ছিলেন। তখন গ্রিসের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে ওই ঋণের শর্ত ভবিষ্যতে গলার ফাঁস হয়ে উঠবে বলে মনে করেছিলেন তিনি। ভুল কিছু ভাবেননি। আজ যখন গ্রিস নিয়ে ডামোডোল, তখন আস্তে আস্তে ঝুলি থেকে বেড়াল উঁকি দিতে শুরু করেছে। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের (আইএমএফ) অন্দরমহলে অনেকেই বলেছিলেন, শর্ত মেনে ২০ বছরের মধ্যে গ্রিসের পক্ষে সংস্কার শেষ করে, নিয়মিত ঋণ চোকানো সম্ভব হবে না। কারণ ওই অল্প সময়ের মধ্যে কর চাপিয়ে, খরচ কমিয়ে কোষাগার ভর্তি করে ঋণের টাকা শোধ করলে মারা পড়বে গ্রিক অর্থনীতি। ভারতও পারেনি। ঘরের রাজনীতি সামলে সংস্কারের কাজ এদেশে এখনও বহাল।

অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ এবং পল ক্রুগম্যান গ্রিক ঋণের শর্তকে সরাসরি গণতন্ত্র বিরোধী বলেই আখ্যা দিয়েছেন। একেই অর্থনীতি নড়বড়ে, তার উপরে ক্রমবধর্মান করের বোঝা বাজারের বারোটা বাজানোর আদর্শ ওষুধ বলে রায় দিয়েছিলেন ঋণ বিরোধীরা। সংস্কার শুরুর পরে-পরে ঠিকই চলছিল। কিন্তু ২০১২ সালের মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জোড় ফোপড়া গ্রিক অর্থনীতির কোমরে ছিল না। এখন নতুন করে কর বসিয়ে, পেনশন আরও ছেঁটে ঋণ পাওয়ার শর্ত নিয়ে নতুন কৃচ্ছ্বসাধনের নীতি গ্রিক জনগণ মানতে নারাজ।

এটা আমরা জেনে গিয়েছি। আমরা এও জানি যে, গ্রিক অর্থনীতি সঙ্কুচিত হচ্ছে। কমছে আয়। এই অবস্থায় জার্মানির রাজনীতি বলছে, গ্রিস যদি শর্ত না-মানে তাহলে তাদের ইউরো থেকে বিদায় দেওয়া হোক। অর্থাৎ গ্রিস বাঁচুক তার অ্যাক্রোপলিস, সক্রেটিস বা প্লেটো নিয়ে। গ্রিসের জনগণ তা মানতে নারাজ। তারা ইউরোপের অংশ হয়েই থাকতে চায়। এবং উন্নত দুনিয়ার পরিচয় নিয়েই। ভুললে চলবে না গ্রিস সেদিনও প্রথম ৫০টি বড়লোক দেশের মধ্যে ছিল। কিন্তু রবিবারের মধ্যে গ্রিস যদি জার্মানিকে খুশি করার মতো নতুন ঋণ শোধের প্রকল্প জমা দিতে না পারে?

জার্মানির অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গ্রিসের ইউরো অঞ্চল থেকে বিদায় অভিপ্রেত নয়। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, তবে শর্ত তো মানতেই হবে। আবার সে দেশের সংবাদ মাধ্যম চ্যান্সেলর মার্কেলকে লৌহমানবী হিসেবে দেখতে চাইছে। অর্থাৎ, গ্রিস যদি জার্মানির শর্ত না-মানে, তাহলে ইউরো থেকে বিদায় জানাও। কিন্তু মার্কেল কি পারবেন?

গ্রিক প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস ফারেন্ডামের পরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাশিয়া জানিয়েছে আলোচনা হয়েছে যৌথ বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু সংবাদ মাধ্যম তা বিশ্বাস করতে নারাজ। ও দিকে চিন যা বলছে, তার মানে দাঁড়ায়, জার্মানি যদি বেশি চাপ দেয়, তাহলে তারা সহায়তার কথা ভেবে দেখতে রাজি। একই সঙ্গে রয়েছে তুরস্কের কুর্দ নিয়ে সমস্যা। আইসিস আতঙ্কে দলে দলে কুর্দ গ্রিসে পালাচ্ছে সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়ে। গ্রিসের সমস্যা যদি সীমা ছাড়ায়, তাহলে ইউরোপের অন্য দেশে গিয়ে হাজির হবে তারা। এই সমস্যা এখনও সোচ্চার নয়। তবে আস্তে আস্তে তা-ও আলোচনায় আসছে। তাই অর্থনীতি পেরিয়ে গ্রিসের সমস্যা বৃহত্তর রাজনৈতিক চরিত্র নিতে শুরু করেছে।

পুতিনের পরে বারাক ওবামা সিপ্রাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। পশ্চিমী দুনিয়া চাইবে না গ্রিসকে বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তি বৃদ্ধির ব্যাপারে আগ্রাসী চিন বা রাশিয়ার বলয়ে হারিয়ে যেতে দিতে। গ্রিসের ৮০ শতাংশ নাগরিকও চায় ইউরোপের সঙ্গেই নিজেদের ভাগ্যকে জড়িয়ে রাখতে। কিন্তু সিপ্রাসের মতো মার্কেলকেও মেনে নিতে হবে ঘরের রাজনৈতিক চাপকে। তা হলে?

আলোচনা চলুক। কিন্তু কোষাগার শূন্য হলে দেশ চলবে কী করে? আপৎকালীন অন্তর্বর্তী ঋণ দেওয়াতেও তো নারাজ ইইউ। জার্মানির চাপেই। তাই উঠে এসেছে আপৎকালীন মুদ্রা হিসাবে 'স্ক্রিপ'-এর নাম। কোষাগারে টান পড়ায় ১৬৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য মাসাচুসেটস বাজারে ছেড়েছিল 'ট্যাক্স অ্যান্টিসিপেশন নোট'। করের টাকা কোষাগারে এলে তা ভাঙিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ক্যালিফোর্নিয়াও এই সে দিন, ২০০৯ সালে, ছেড়েছিল রেজিস্টার্ড ওয়ারেন্ট। কোষাগারে টান পড়েছিল বলেই। উভয় ক্ষেত্রেই বাজারে লেনদেনের জন্য ব্যবহার হয়েছে এই বদলি মুদ্রা।

গ্রিসেও এই বদলি মুদ্রা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসাবে চালু করার কথা জল্পনায় জায়গা করে নিয়েছে। অ্যাক্রোপলিসের ছায়া এখন আর অত বিস্তৃত নয়। তাহলে কি স্ক্রিপই গ্রিসে আগামীদিনে আপৎকালীন সঙ্গী? আমাদের অপেক্ষায় থাকতেই হবে। স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলা উচিত এ সপ্তাহের শেষেই।

suparna pathak greece crisis greece crisis latest news shrinking economy decreasing income noose debt drachma greece interim currency scrip
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy