বাবা-মায়েদের অবসর জীবন ছিল সম্ভবত অনেক বেশি নিশ্চিন্তির। কিন্তু কর্মজীবন থেকে ছুটি নেওয়ার পরে নিজেদের অবসর ততটা শান্তির হবে বলে মনে করছেন না ছেলে-মেয়েরা। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রায় ৫৬% কর্মী। আর এই চিন্তা করতে গিয়েই মার খাচ্ছে তাঁদের দক্ষতা। অবসরের কড়ি নিয়ে লাগাতার চিন্তা ছাপ ফেলছে রোজকার কাজে।
অবসর ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার দু’হাজারেরও বেশি কর্মীকে নিয়ে সমীক্ষাটি চালিয়েছিল উপদেষ্টা সংস্থা উইলিস টাওয়ার্স ওয়াটসন। সেখানে অবসর জীবন নিয়ে নিজেদের দুশ্চিন্তার কথা তুলে ধরেছেন কর্মীদের একটা বড় অংশ। যার প্রভাব অনেক সময় কাজের ক্ষেত্রেও পড়ছে বলে মনে করছে উপদেষ্টা সংস্থাটি। আর তাই কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে এবং তাঁদের পাশে থাকতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকেও এগিয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছে তারা। যাতে কর্মজীবনের শেষে নিশ্চিন্ত অবসর কাটানোর সুযোগ পান কর্মীরা। আবার তাঁদের দক্ষতা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারে সংস্থাগুলিও।
কী বলছে সমীক্ষা?
দেখা যাচ্ছে, বর্তমান আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে সন্তুষ্টি বেড়েছে। ২০১৩ সালের পরে ৯%। কিন্তু তাঁরা উদ্বিগ্ন অবসর জীবন নিয়ে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের তাড়া করে ফিরছে বাবা-মায়েদের থেকে পিছিয়ে থাকার আশঙ্কা। ৫২% কর্মী জানাচ্ছেন, আর্থিক চিন্তা তাঁদের কাজের উপর প্রভাব ফেলছে। কমছে দক্ষতা। ৩৫% কর্মী মনে করছেন, এই সমস্যা তাঁদের পুরো জীবনের উপরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ৬০ বছরের পরেও কাজ চালানোর কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এবং এ ধরনের কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত।
সমীক্ষা অনুযায়ী, স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি, উভয় উদ্বেগই যাঁদের মধ্যে রয়েছে, তাঁদের প্রায় ৭৫% জানাচ্ছেন, এর ফলে তাঁরা ঘোর দুশ্চিন্তায় ভোগেন। ফলে অন্যদের চেয়ে তাঁরা দেড়গুণ বেশি খারাপ স্বাস্থ্যের কথা বলেন। অন্যদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি বদল করেন চাকরিও।
এ অবস্থা সামলাতেই সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসার কথা বলছে উপদেষ্টা সংস্থাটি। ডিরেক্টর কুলিন পটেল বলেন, ‘‘দীর্ঘ মেয়াদি আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকা এ রকম নিরাপত্তাহীনতা কমাতে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দরকার।’’ তবে উৎপাদনশীলতার সঙ্গে কর্মীদের ভাল থাকার বিষয়টি যে ওতঃপ্রত ভাবে জড়িয়ে, তা সংস্থাগুলিও এখন বুঝতে পারছে বলেই মনে করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, এ জন্য সংস্থার মুনাফায় কী প্রভাব পড়তে পারে সেটাও তারা বুঝছে। তাই কর্মীদের সার্বিক ভাবে ভালো রাখার জন্য উদ্যোগী হচ্ছে তারা।
অবসর জীবনের পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে সংস্থা কর্তৃপক্ষকে পাশে পাওয়া যে তাঁদের জন্য সহায়ক হবে, সে কথা জানিয়েছেন কর্মীরাও। সমীক্ষার ৫৭% কর্মী এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে ৩২% বলেছেন, তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ ধরনের বার্তা পেতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না। উপদেষ্টা সংস্থাটির মতে, পুরো বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করা দরকার।
দীর্ঘ মেয়াদি সঞ্চয়ের পরিকল্পনার অভাব নিশ্চিন্ত অবসর যাপনের পথে অন্তরায়। একই মত উঠে এসেছে সমীক্ষাতেও। তাই কর্মীদের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদের সঞ্চয় পরিকল্পনায় সাহায্য করতে সংস্থাগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে উইলিস টাওয়ার্স।
সমীক্ষা বলছে, কর্মীদের বার্তা দেওয়ার কাজ ১৩% সংস্থা শুরুও করে দিয়েছে। আগামী তিন বছরে লক্ষ্য ধরে বার্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে ৫০% সংস্থা। যেখানে বাজেট, বড় কেনাকাটার আগাম পরিকল্পনা, ঋণ পুনর্গঠন, সম্পদ তৈরি, বিমার সুরক্ষা, কর সংক্রান্ত পরামর্শ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা-সহ সার্বিক সহায়তার কথা ভাবছে তারা। উপদেষ্টা সংস্থাটির মতে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বেতনের প্যাকেজ নতুন ভাবে তৈরি করা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy