স্বস্তির দেওয়ালি, শান্তির দেওয়ালি, আনন্দের দেওয়ালি। আশা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর দেওয়ালি। ২৩ তারিখের সন্ধ্যার সুরটা অনেকটা এই রকমই ছিল। আগের কয়েক দিনের লেনদেনের পরে দেওয়ালির দিন মুরত পর্বেও সূচক এগিয়েছে উপরের দিকে।
এর থেকেও বড় কথা, বাজার আশা করছেআর্থিক সংস্কার এবং অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোয় উপর ভর করে আগামী দিনে বাজার আরও এগোবে। কেউ কেউ মনে করছেন, আগামী সম্বতে আমরা সূচককে খুব সম্ভবত ২০ শতাংশ উপরে দেখতে পাব।
গত এক বছরেও বাজার উঠেছে বেশ অনেকটাই। আগের সম্বতে (৩ নভেম্বর ২০১৩) সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ২১,১৯৭ অঙ্কে। সেখান থেকে সূচক এ বারের সম্বতে উঠে এসেছে ২৬,৭৮৭ অঙ্কে। অর্থাৎ এই সময়ে সেনসেক্স বেড়েছে ৫৫৯০ পয়েন্টশতাংশের হিসেবে ২৬.৩৭ শতাংশ। মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ সূচক বেড়েছে আরও বেশি হারে।
এতটা বৃদ্ধির পরে আগামী এক বছরেও একই হারে বাজার বাড়বে এমন আশা সবাই করছেন না। তবে সূচক যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তে পারে, সে ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষই একমত। গত কয়েক মাসে বাজার বেড়েছে নতুন সরকারের উপর আশা এবং আস্থায় ভর করে। আগামী এক বছরে এই সব আশা পূর্ণ করার পালা।
অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হলে বাজার যে-আরও উঠবে তাতে কারও সন্দেহ নেই। পাশাপাশি বিশ্ব বাজারের সমর্থনও চাই এই উত্থানে। বর্তমান জায়গা থেকে ২০ শতাংশ বাড়ার অর্থ সেনসেক্সের ৩২ হাজারে পৌঁছে যাওয়া। ১৫ শতাংশ উত্থান ধরলে সেনসেক্স পৌঁছতে পারে ৩০,৪০০ অঙ্কে। বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে আশায় বুক বাঁধা যেতেই পারে।
বর্তমান জায়গা থেকে বাজারের বড় উত্থানের জন্য যে-সব শর্ত অনুকূলে থাকা প্রয়োজন, এবং লক্ষ্যের দিকে কতটা এগোনো সম্ভব হয়েছে, তার একটি খতিয়ান দেওয়া হল:
• মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ
কিছুটা হয়েছে। এখন প্রয়োজন, দীর্ঘ মেয়াদে তা নীচের দিকে ধরে রাখা।
• সুদের হার কমানো
সম্ভব। মূল্যবৃদ্ধি পাকাপাকি ভাবে নামলে।
• বিদেশি লগ্নি-প্রবাহ অব্যাহত থাকা
উদীয়মান অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারতের আকর্ষণ এখন সবথেকে বেশি। তবে মার্কিন মুলুকে সুদ বাড়তে শুরু করলে লগ্নিতে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে।
• আর্থিক সংস্কারের গতি বাড়া
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই ব্যাপারটি আরও স্পষ্ট হবে। আশা করা হচ্ছে বিমা, পণ্য- পরিষেবা কর, শ্রম আইন সংশোধন ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল আগামী অধিবেশনে পেশ করা হবে। প্রত্যক্ষ কর বিধির ব্যাপারেও সরকার কয়েক ধাপ এগোবে বলে মনে করা হচ্ছে।
• কোম্পানি ফলাফলে উন্নয়নের প্রতিফলন
জাতীয় উৎপাদন উঁচু হারে বাড়লে, অর্থাৎ আর্থিক বৃদ্ধি দ্রুতগতিতে এগোলে তার প্রতিফলন অবশ্যই পড়া উচিত কোম্পানি ফলাফলে। শেয়ার পিছু আয় বাড়লে তবেই তো শেয়ারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হবে। জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার ভাল হলেও সব শিল্প কিন্তু সমান ভাবে উপকৃত হবে না। অর্থাৎ উত্থানমুখী বাজারেও শেয়ার বাছতে হবে বেশ সাবধানে।
• বিশ্ব বাজারের অনুকূল অবস্থা
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক (এবং রাজনৈতিক) পরিস্থিতি যদি অনুকূলে না-থাকে, তবে ভারতীয় অর্থনীতি যতই ভাল করুক, শেয়ার বাজার কিন্তু উঠতে ভরসা পাবে না। বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধ এবং ইবোলা ছড়িয়ে পড়া কিন্তু ভারতের শেয়ার ও সাধারণ ভাবে মূলধনী বাজারের কাছে বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
সব ভালমন্দ মাথায় রেখেও মানুষ কিন্তু আশাবাদী। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের বড় রকমের মূল্যহ্রাস একটি ভাল লক্ষণ। এতে ভারত সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমবে। কম ক্ষয়প্রাপ্ত হবে বিদেশি মুদ্রার তহবিল। অবশেষে পেট্রোল ও ডিজেল দু’টি জ্বালানির দরেই সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়ায় ভর্তুকি বাবদ সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ অর্থ। দেশে ডিজেল, পেট্রোলের দাম কমায় মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে রাখা সহজ হবে। ভর্তুকির বোঝা কমবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলির।
সব দিক বিচার করে বলা যায় পরিস্থিতি ভালর দিকেই এগোচ্ছে। তবে এরই মধ্যে বাজারের নিয়ম অনুযায়ী মাঝেমধ্যে সংশোধন হবে, যা সুযোগ করে দেবে নতুন লগ্নির। সুদ কমার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ায় ইকুইটির পাশাপাশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে বন্ড ফান্ডে লগ্নিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy