Advertisement
E-Paper

ই-গভর্ন্যান্স নিয়ে রাজ্যের দাবি ভিত্তিহীন

ই-গভর্ন্যান্সে রাজ্যের সাফল্যের যে-খতিয়ান প্রতিটি বণিকসভার মঞ্চ থেকে দেন অর্থমন্ত্রী তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অমিত মিত্র, তার কোনও প্রতিফলন নেই জাতীয় স্তরের তথ্য পরিসংখ্যানে। এই অভিযোগ উঠেছে সরকারি মহলের অন্দরেই। দেশ জুড়ে বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের মাধ্যমে ই-ট্রানজাকশন বা আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ মেপে রাখা কেন্দ্রীয় ওয়েব পোর্টাল ‘ই-তাল’-এর কাজ। আর সেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি তালিকার প্রথমে প্রত্যাশিত ভাবেই উঠে এসেছে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, কর্নাটকের নাম।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৭

ই-গভর্ন্যান্সে রাজ্যের সাফল্যের যে-খতিয়ান প্রতিটি বণিকসভার মঞ্চ থেকে দেন অর্থমন্ত্রী তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অমিত মিত্র, তার কোনও প্রতিফলন নেই জাতীয় স্তরের তথ্য পরিসংখ্যানে। এই অভিযোগ উঠেছে সরকারি মহলের অন্দরেই।

দেশ জুড়ে বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের মাধ্যমে ই-ট্রানজাকশন বা আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ মেপে রাখা কেন্দ্রীয় ওয়েব পোর্টাল ‘ই-তাল’-এর কাজ। আর সেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি তালিকার প্রথমে প্রত্যাশিত ভাবেই উঠে এসেছে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, কর্নাটকের নাম। এমনকী জায়গা করে নিয়েছে তথাকথিত পিছিয়ে পড়া রাজ্য মধ্যপ্রদেশ। কিন্তু প্রথম সারিতে ঠাঁই পায়নি পশ্চিমবঙ্গ।

অনেক পেছন থেকে উঠে আসা মধ্যপ্রদেশে মোট বৈদ্যুতিন লেনদেন বা ই-ট্রানজাকশনের সংখ্যা ২৩ কোটির বেশি। দ্বিতীয় তারা। প্রথম গুজরাত। এ বছরে ইতিমধ্যেই সেখানে ৬৫ কোটির বেশি ই-ট্রানজাকশন হয়েছে। অথচ চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গে ওই সংখ্যা এখনও পর্যন্ত মাত্র তিন কোটির একটু বেশি।

শুধুমাত্র লেনদেনের ক্ষেত্রেই নয়। ই-তালের সাইটে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশের থেকে এ রাজ্য পিছিয়ে রয়েছে ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে দেওয়া পরিষেবার সংখ্যার নিরিখেও। অন্ধ্রপ্রদেশ দেয় ৪০০ বেশি পরিষেবা। গুজরাত ২৩২টি। মধ্যপ্রদেশ ১৮৬টি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে মেলে ১০৬টি পরিষেবা।

অথচ প্রথম ই-গভর্ন্যান্স চালু হয়েছিল এ রাজ্যেই। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিগত সরকারের আমলে ‘বাংলার মুখ’ নামে সেই তথ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলি মুখ থুবড়ে পড়েছিল মূলত সরকারি গাফিলতিতে। কারণ বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের অভাবে সরকারি তথ্য কম্পিউটারে তোলার কাজটাই হয়নি।

কেন্দ্রের চাপে সেই পরিস্থিতি বদলালেও সমন্বয়ের অভাব থেকেই গিয়েছে। খোদ সরকারি মহল থেকেই অভিযোগ উঠেছে, শুধুমাত্র প্রকল্প করতে হবে বলেই প্রকল্প চালু হচ্ছে। কিন্তু তার মাধ্যমে আমজনতা কতটা পরিষেবা পাচ্ছে, তার ওপর নজরদারি নেই। নেই যথাযথ পরিকল্পনাও। তার অন্যতম প্রমাণ রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের অধীন ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ।

আইআইটি খড়্গপুরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এই পরিষদ তৈরি হয়েছে আগেই। বাংলা ভাষায় কম্পিউটার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় প্রযুক্তি তৈরি করেছে পরিষদ। পরিষদের প্রধান আইআইটি-র অধ্যাপক অনুপম বসু জানান, বাংলা ও অলচিকি ভাষায় কি-বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সফটওয়্যার। তাঁর দাবি, ইংরেজি না-জেনেও কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রশাসনিক ও অন্য কাজকর্ম করার উপযোগী প্রযুক্তি তৈরি রয়েছে। কিন্তু এই প্রযুক্তির ব্যবহার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো পরিষদের নেই।

তথ্য পরিসংখ্যানও বলছে, যে-রাজ্যে মাতৃভাষার মাধ্যমে ই-গভর্ন্যান্স সংক্রান্ত কাজ করা যায়, সেখানে তার বাড়বাড়ন্ত ততটাই বেশি। কর্নাটক ও গুজরাত আগেই তা প্রমাণ করেছে। রাজ্য সরকারি সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের কাজ বাংলা ভাষায় করার সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশে এই সুবিধা রাখা বাধ্যতামূলকও। কিন্তু তা তৃণমূল স্তরে কার্যকর করার তাগিদ নেই বলে অভিযোগ সরকারি মহলেই। ফলে পরিকাঠামো তৈরি থাকলেও তার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার তলানিতেই থেকে গিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষোভ, ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের আগ্রহ যে তলানিতে ঠেকেছে, তার প্রমাণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তৈরি বিশেষ সফটওয়্যারের হাল। রাজ্যের প্রকল্পগুলির তথ্য হাতের মুঠোয় রাখার ওই সফটওয়্যার ‘প্রজেক্ট মনিটরিং সিস্টেম’ তৈরি হয়েও ব্যবহার হয়নি স্রেফ উৎসাহের অভাবে। তাই সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিতে তৈরি ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্প রূপায়ণে যে সদিচ্ছা বিশেষ থাকবে না, সেই অভিযোগই উঠেছে সরকারি স্তরে।

gargi guha thakurta ficci amit mitra e-governance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy