Advertisement
E-Paper

কৃষিতে অনাদায়ী ঋণের বহর বাড়ছে এ রাজ্যে

কৃষি ক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গে। এমনিতেই বড় শিল্পে অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধির ফলে ব্যাঙ্কগুলির মুনাফায় টান পড়েছে। তার উপর কৃষিতে মোটা অঙ্কের ঋণ অনুৎপাদক সম্পদ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়ানোয় কপালে ভাঁজ ব্যাঙ্ককর্তাদের। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, কৃষি ক্ষেত্রে দেওয়া মোট বকেয়া ঋণের অর্ধেকই অনাদায়ী হয়ে পড়ে আছে। পাশাপাশি সার্বিক ভাবে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে (প্রায়রিটি সেক্টর) বকেয়া ঋণের হালও তথৈবচ।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৮

কৃষি ক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গে। এমনিতেই বড় শিল্পে অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধির ফলে ব্যাঙ্কগুলির মুনাফায় টান পড়েছে। তার উপর কৃষিতে মোটা অঙ্কের ঋণ অনুৎপাদক সম্পদ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়ানোয় কপালে ভাঁজ ব্যাঙ্ককর্তাদের। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, কৃষি ক্ষেত্রে দেওয়া মোট বকেয়া ঋণের অর্ধেকই অনাদায়ী হয়ে পড়ে আছে। পাশাপাশি সার্বিক ভাবে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে (প্রায়রিটি সেক্টর) বকেয়া ঋণের হালও তথৈবচ।

রাজ্যে কৃষি ক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণের বহর কয়েক বছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৪-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখান থেকে ব্যাঙ্কগুলির মোট পাওনা ছিল ৯,১০০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে তার ৪৮০০ কোটি। অর্থাৎ প্রায় ৪৭% বাকি। এর আগে ২০১৩-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষিতে দেওয়া ঋণের মধ্যে ব্যাঙ্কগুলির পাওনা ছিল ৭৮০০ কোটি টাকা। আদায় হয় ৪৩০০ কোটি। অর্থাৎ অনাদায়ী ঋণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৪৫%।

অনাদায়ী ঋণের বহর বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি-সহ অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে নতুন ঋণ দেওয়ার সুযোগ কমার উপক্রম হয়েছে। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী যে-সব গ্রহীতা ঋণ নিয়ে তা শোধ করছেন না, তাঁদের ব্যাঙ্ক ফের ঋণ দিতে পারবে না। ফলে ব্যাঙ্কগুলিকে নয়া গ্রাহকের সন্ধান করতে হবে। সেটাও বহু ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে ব্যাঙ্ককর্তাদের আশঙ্কা। নিয়ম আনুযায়ী ব্যাঙ্কগুলি মোট যত ঋণ দেয়, তার ৪০ শতাংশ কৃষি-সহ অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে দেওয়া বাধ্যতামূলক।

কলকাতায় সদর দফতর আছে এমন এক ব্যাঙ্কের জনৈক কর্তা বলেন, “হিসাবে আমরা পরের বছরেও প্রায়রিটি সেক্টরে ৪০% ঋণ দেখিয়ে দেব। কিন্তু তার পুরোটা নতুন ঋণ হবে না। বিধি মাফিক অনাদায়ী হয়ে পড়ে থাকা ঋণ ধরে ওই ৪০% হিসাব হবে।”

কী কারণে রাজ্যে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে? এক ব্যাঙ্ককর্তা বলেন, “২০০৮-’০৯ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম লোকসভা নির্বাচনের আগে কৃষি ঋণ মকুবের এক প্রকল্প চালু করেন। তার পর থেকেই কৃষকদের মধ্যে ভোট এলেই ঋণ মকুব প্রকল্পের আশায় বসে থাকার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ বছর লোকসভা ভোটের ক’মাস আগেও অনেক কৃষকই আমাদের বলেছেন, এখন আর ঋণ শোধ করব না। কেন্দ্র ঋণ মকুব করে কি না, তা আগে দেখে নেব।” ওই ব্যাঙ্ককর্তার মতে, এক বার ঋণ বাকি পড়ে গেলে পরে তা শোধ করায় কৃষকদের সমস্যা হয়। ওই সব কৃষক তখন আর ব্যাঙ্ক মুখোই হন না।

কৃষিঋণ সাধারণত দেওয়া হয় কিসান ক্রেডিট কার্ড মারফত। তিন শ্রেণির কৃষক এই কার্ড পাওয়ার যোগ্য: যে-সব কৃষক নিজের জমিতেই চাষ করেন, ভাগ চাষি এবং পাট্টাহোল্ডার।

কিসান ক্রেডিট কার্ডে ব্যাঙ্কগুলি বেশ কিছু নতুন সুবিধা চালু করেছে। পুরনো ঋণ পরিশোধ না-করায় তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। আগে এক জন চাষি এক বছরের জন্য যতটা ঋণ পাওয়ার যোগ্য, ততটাই মঞ্জুর করা হত। পরের বছরগুলিতেও ঋণের পরিমাণ একই থাকত। নতুন ব্যবস্থায় প্রতি বছর ১০% করে ঋণ বৃ্দ্ধির ব্যবস্থা চালু হয়েছে। শুধু তাই নয়, পাঁচ বছরের ঋণ প্রথমেই মঞ্জুর করা হয়। কৃষক আগের বছরের ঋণ শোধ করলেই চটজলদি পরের বছরের ঋণ পেয়ে যান।

এ ছাড়া মঞ্জুর হওয়া মূল ঋণের ১০% কৃষক অতিরিক্ত পান তাঁর সংসার খরচ মেটাতে। উপরন্তু মূল ঋণের ২০% পান কৃষি যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। নতুন ব্যবস্থায় প্রতি বছর যে-ঋণ বাড়ে, তার ধরেই হিসাব করা হয় ওই ১০ ও ২০% ঋণ। পুরনো ব্যবস্থায় শুধু মূল ঋণের ভিত্তিতে বাড়তি ঋণ মিলত।

কৃষিঋণে সুদে বড় মাপের ছাড়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুদ ৯%। এর ২% ভর্তুকি হিসাবে দেয় কেন্দ্র। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে শোধ করলে আরও ৩% সুদ ছাড়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। অর্থাৎ সঠিক ভাবে মেটালে কৃষিঋণে সুদ কার্যত বছরে ৪%। কিন্তু পুরনো ঋণ শোধ না-করায় তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন রাজ্যের বহু কৃষক। সাধারণত ঋণ শোধ করতে দুটি ফসল ফলানোর সময় দেওয়া হয় কৃষককে। অর্থাৎ এক বছর হাতে পান কৃষক। ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার মানস ধর বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কারণে যাঁরা ঋণ মেটাতে পারছেন না, তাঁরা আমাদের কাছে এলে কিছুটা সহজ পথ বাতলাতে পারি। বকেয়া এক সঙ্গে শোধ করলে কিছু ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।”

pragyananda chowdhury agricultural loan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy