Advertisement
E-Paper

পেট্রোকেমে টাকা ঢালতে রাজি আর্থিক সংস্থাগুলি

শেষ পর্যন্ত হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে টাকা ঢালতে রাজি হল আর্থিক সংস্থাগুলি। শনিবার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে সংস্থাটিতে এখনই ১০০ কোটি টাকা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। আর তারপরেই তা মেনে নিয়ে ধুঁকতে থাকা পেট্রোকেমে লগ্নির কথা জানিয়েছে আর্থিক সংস্থাগুলি। প্রাথমিক ভাবে ৭০০ কোটি টাকা ঢালার দায় নিয়েছে তারা। এর ফলে চলতি মাসেই সংস্থা খোলার রাস্তাও পরিষ্কার হয়ে গেল।

সুপর্ণ পাঠক ও দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০২
নতুন অধ্যায়। হলদিয়া পেট্রোকেম ও পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নতুন অধ্যায়। হলদিয়া পেট্রোকেম ও পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

শেষ পর্যন্ত হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে টাকা ঢালতে রাজি হল আর্থিক সংস্থাগুলি। শনিবার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে সংস্থাটিতে এখনই ১০০ কোটি টাকা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। আর তারপরেই তা মেনে নিয়ে ধুঁকতে থাকা পেট্রোকেমে লগ্নির কথা জানিয়েছে আর্থিক সংস্থাগুলি। প্রাথমিক ভাবে ৭০০ কোটি টাকা ঢালার দায় নিয়েছে তারা। এর ফলে চলতি মাসেই সংস্থা খোলার রাস্তাও পরিষ্কার হয়ে গেল।

সব মিলিয়ে আর্থিক সংস্থাগুলির কাছে অন্তত ২,০০০ কোটি টাকা চেয়েছে পেট্রোকেম। কিন্তু আর্থিক সংস্থাগুলি এক লপ্তে তা ঢালবে না। চুক্তি অনুযায়ী, তারা প্রথম কিস্তিতে দেবে ৭০০ কোটি টাকা। তার সঙ্গে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর ১০০ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ৮০০ কোটি পুঁজি করে কারখানা চালু হবে। তারপরে বরং সংস্থার কাজ যাচাই করে বাকি টাকা বিভিন্ন কিস্তিতে দেওয়ার কথা ঠিক হয়েছে।

পেট্রোকেমে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ন্যাপথার দাম এই মুহূর্তে বাজারে বেশ কম। আবার একই সঙ্গে, তা ব্যবহার করে সংস্থাটি যে সব পণ্য তৈরি করে, তাদের বাজার বেশ ভাল। শুধু তা-ই নয়। পেট্রোকেমের পণ্যের গুণমান নিয়ে যথেষ্ট ভাল ধারণাও রয়েছে বাজারে। ফলে সব মিলিয়ে আর্থিক সংস্থাগুলির আশা, এই সমস্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে, পেট্রোকেমের ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা অনেকটাই মসৃণ হবে।

রাজ্যের অন্যতম ‘শো-পিস’ এই কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে গত বছর যান্ত্রিক ত্রুটির তত্ত্ব খাড়া করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি ছিল, মূলত কার্যকরী মূলধনের অভাবেই আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে পেট্রোকেম। আর সেই কারণেই কারখানা বন্ধের ওই সিদ্ধান্ত। এ দিন রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে সংস্থাটির পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে কয়েকটি ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয় যে, পেট্রোকেমে টাকা ঢালতে সায় দিয়েছে তাদের পরিচালন পর্ষদ।

নতুন বছরের গোড়ায় হলদিয়া পেট্রোকেমের দরজা খোলার ব্যাপারে অবশ্য ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। আনন্দবাজারকে এক সাক্ষাৎকারে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, এই অর্থবর্ষের মধ্যেই তিনি পেট্রোকেম খোলা নিয়ে আশাবাদী। কারণ, সংস্থা বন্ধ থাকলে, আখেরে সব পক্ষেরই ক্ষতি বলে মনে করেন তাঁরা। যদিও তখন পেট্রোকেম খোলার দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলতে রাজি হননি তিনি।

বর্তমান অবস্থায় কারখানাটিকে ফের চালু করে সেখানে উৎপাদন জারি রাখতে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে আর্থিক সংস্থাগুলিকে জানিয়েছিল হলদিয়া পেট্রোকেম। যার মধ্যে এখনই প্রয়োজন ১,০০০ কোটি টাকা। আর্থিক সংস্থাগুলি চেয়েছিল, এই হাজার কোটির মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ (১০০ কোটি টাকা) ঢালুক চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীও জানিয়েছিল, কারখানা চালাতে সব মিলিয়ে ৭৫০ কোটি টাকা আনতে পারবে তারা। এ দিন বৈঠকে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর তরফে প্রাথমিক ভাবে ১০০ কোটি টাকা ঢালার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রমাণ দাখিল করা হয়।

হলদিয়া পেট্রোকেমের দরজা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছিল রাজ্যের অনুসারী শিল্পও। বিশেষত প্রবল সঙ্কটে পড়তে হয়েছে প্লাস্টিক শিল্পকে। এমনকী কাঁচমালের সঙ্কট কাটাতে চিন-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে তা আমদানির পরিমাণ বাড়াতে বাধ্য হয়েছিল প্লাস্টিক সংস্থাগুলি।

আজ দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা পেট্রোকেমের শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়টিও পেশ হয়েছে এ দিন পর্ষদের বৈঠকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এই সংক্রান্ত চুক্তি আগেই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা পর্ষদের বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পেশ করা হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিল্প সচিব সি এম বাচোয়াত, নিগমের এমডি কৃষ্ণ গুপ্ত, চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দুই কর্তা পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় ও সুভাষিন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। তবে শিল্প মন্ত্রী অমিত মিত্র সেখানে ছিলেন না।

এ দিন নিগমের অফিসে ছিল নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী। সাংবাদিকরা যাতে কোনও ভাবে বৈঠকস্থলে (এমনকী নিগমের অফিসেই) ঘেঁষতে না-পারেন, সে জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। হঠাৎ এমন বজ্র আঁটুনির কারণ জিজ্ঞাসা করলে নিরাপত্তারক্ষীদের উত্তর, তাঁরা উপর তলার নির্দেশ পালন করছেন মাত্র।

purnandu chattopadhyay haldia petrochem debopriya sengupta suparna pathak
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy