Advertisement
E-Paper

বাজেটকে এক কথায় ‘ভাল’ বা ‘মন্দ’ তকমা দেওয়া কঠিন

অবশেষে শেষ হল বাজেট উৎসব। অনেকটা দুর্গাপুজোর মতো। বৃহস্পতিবার রেল বাজেট, শুক্রবার রাজ্য বাজেট এবং সবশেষে শনিবার মোদী-জেটলির কেন্দ্রীয় বাজেট। শেষ দিনে ছিল ফাইনাল ম্যাচের উত্তেজনা। বিরাট কোহলির ঢঙে জেটলি ব্যাট করেছেন ক্যাপ্টেন মোদীর নির্দেশ অনুযায়ী। এক-দুইয়ের ফাঁকে মাঝেমধ্যেই চার মেরেছেন। ছয় অবশ্য কম দেখা গিয়েছে। ডট বল হলেই চাঞ্চল্য দেখা গিয়েছে পাঁচ শতাধিক ফিল্ডারের মধ্যে। বাইরে একশো কোটি দর্শকের চাপ নিয়ে ব্যাট করা সহজ কাজ ছিল না।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০২:২৪
বাজেটের দিন অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই।

বাজেটের দিন অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই।

অবশেষে শেষ হল বাজেট উৎসব। অনেকটা দুর্গাপুজোর মতো। বৃহস্পতিবার রেল বাজেট, শুক্রবার রাজ্য বাজেট এবং সবশেষে শনিবার মোদী-জেটলির কেন্দ্রীয় বাজেট। শেষ দিনে ছিল ফাইনাল ম্যাচের উত্তেজনা। বিরাট কোহলির ঢঙে জেটলি ব্যাট করেছেন ক্যাপ্টেন মোদীর নির্দেশ অনুযায়ী। এক-দুইয়ের ফাঁকে মাঝেমধ্যেই চার মেরেছেন। ছয় অবশ্য কম দেখা গিয়েছে। ডট বল হলেই চাঞ্চল্য দেখা গিয়েছে পাঁচ শতাধিক ফিল্ডারের মধ্যে। বাইরে একশো কোটি দর্শকের চাপ নিয়ে ব্যাট করা সহজ কাজ ছিল না।

রেল বাজেট মোটের ওপর মন্দ নয়। ভাড়া বাড়েনি। আম আদমি খুশি। তবে কিছু পণ্যের উপর মাশুল বাড়ায় কপালে একটু ভাঁজ অবশ্যই পড়েছে। কলকাতার মেট্রো প্রভুর থেকে প্রসাদ পেয়েছে কণিকা মাত্র।

রাজ্য বাজেট ছিল বিশ্বকাপের আগে অনেকটা রঞ্জি ম্যাচের মতো। ভোটের মুখে প্রাপ্তি কিন্তু খারাপ হয়নি। ভ্যাট নিয়ে নানা ছাড় খুশি করেছে ছোট ব্যবসায়ীদের। স্ট্যাম্প ডিউটিতে ১% ছাড় মিলবে ৩০ লক্ষের জায়গায় ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সম্পত্তি হস্তান্তরেও। উপকৃত হবেন মধ্যবিত্তরা। চাহিদা বাড়বে কম দামি ফ্ল্যাটের।

আসা যাক ফাইনাল ম্যাচ বিশ্লেষণে। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেট কেমন হল? এর উত্তর এক কথায় ‘ভাল’ বা ‘মন্দ’ বলা শক্ত। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যেমন মধ্যবিত্ত, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, শেয়ার বাজারের লগ্নিকারী প্রত্যেকেই মনে করেন, বাজেট তাঁদের জন্যই রচিত হয়। তৈরি করেন নিজস্ব ‘উইশ লিস্ট’। বেশির ভাগ মিললেই তাঁদের কাছে বাজেট ভাল। না-মিললে মুখ ভার। সামগ্রিক ভাবে দেশের কথা অনেকেই ভাবেন না। এই সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটে জেটলির উপর ছিল ৪০০ রানের উইশ লিস্টের চাপ। রাজনীতির খাতিরে ছিল বাউন্সারের চাপ। চাপ ছিল দলের রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের দৃষ্টিকোণ থেকেও। এত সব চাপ সামলে জেটলি কেমন বাজেট করলেন, দেখব এক নজরে।

মধ্যবিত্ত

আশা ছিল পাতে ঘি পড়বে। পড়েনি। করমুক্ত আয়ের স্তর বাড়েনি। বাড়েনি ৮০সি ধারায় ছাড়। পেনশন প্রকল্পে লগ্নিতে ছাড় মিললেও একটু বয়স্ক মানুষেরা এই সুবিধা পাবেন না। স্বাস্থ্য -বিমায় বাড়তি ১০ হাজার টাকা খরচ হয়তো কম আয়ের মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। অন্য দিকে বাড়তি পরিষেবা কর শুষে নেবে লাভের গুড়। যাঁরা করের আওতায় নেই, তাঁদেরও গুনতে হবে এই কর। পরিবহণ ভাতা বাবদ ছাড় পাবেন শুধু চাকরিজীবীরাই। নিজের বসবাসের জন্য গৃহঋণের প্রয়োজন অনেকেরই থাকে না। অর্থাৎ সরকারের হিসেব মতো ৪,৪৪,২০০ টাকা ছাড় অনেকেই নিতে পারবেন না। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত মধ্যম মান দিচ্ছে এই বাজেটকে।

করদাতা

উঁচু হারে করদাতারা খুশি করমুক্ত বন্ড পুনরায় চালু হওয়ার আশ্বাসে। যাঁরা চলতি বছরে অবসর নেবেন, তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ। সম্পদ কর বিলোপ করাও ভাল খবর অনেকের কাছে। অতি ধনীরা ২ শতাংশ অতিরিক্ত সারচার্জ দিতে আপত্তি করবেন না, কারণ তাঁদের সম্পদ কর দিতে হচ্ছে না। সব মিলিয়ে উচ্চবিত্ত মানুষেরা অখুশি নন।

গৃহিণী

পরিষেবা কর বাড়ায় উদ্বিগ্ন। বিনোদন, বিউটি পার্লারে কোপ। উৎপাদন শুল্ক বাড়ায় দাম বাড়বে বেশ কিছু পণ্যের। অর্থাৎ হাতে টাকা কমবে। অন্য দিকে অবশ্য লকারে পড়ে থাকা সোনা জমা রেখে সুদ পাওয়া যেতে পারে এই খবরে তাঁরা উৎসাহিত। কিনতে পাওয়া যাবে গোল্ড বন্ড। মিলবে অশোকস্তম্ভ মার্কা ভারতীয় স্বর্ণমুদ্রা। উপহার হিসেবে মন্দ হবে না।

আমজনতা

সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা। নামমাত্র খরচে দুর্ঘটনা বিমা। জীবনবিমা এবং ন্যূনতম পেনশনের ব্যবস্থা একদম নিচুতলার মানুষের জন্য বড় পদক্ষেপ। জাতীয় উৎপাদন আরও বেশি হারে বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন জেটলি। দেখতে হবে জাতীয় আয়ের কত শতাংশ ছাঁকনি গলে নিচুতলায় পৌঁছয়।

শিল্প-বাণিজ্য মহল

কোম্পানি কর ধাপে ধাপে ৫ শতাংশ কমানো বড় সুখবর। অন্য দিকে অবশ্য কয়েকটি ছাড় তুলেও নেওয়া হবে। পদক্ষেপটি ভাল, কারণ ছাড় নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এখন ব্যাপারটি সরল হল। পরিকাঠামো শিল্পে অতিরিক্ত ৭০ হাজার কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব খুবই যুক্তিযুক্ত। এর ফলে বিভিন্ন শিল্প উপকৃত হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্যও বেশ কিছু ব্যবস্থা আছে জেটলির বাজেটে। শিল্পপতিরা এই বাজেটকে দশে ৭ থেকে ৯.৫ নম্বর দিয়েছেন। তবে বাজেট সবে পেশ করা হয়েছে। পুরো বিশ্লেষণ হতে আরও কয়েক দিন লাগবে। চুলচেরা বিশ্লেষণ হলে কষা যাবে ভাল-মন্দের অঙ্ক।

লগ্নিকারী

কোম্পানি কর কমায় শেয়ার বাজার খুশি। তবে শনিবার বাজার বাজেটকে পুরো বুঝে উঠতে পারেনি। তাই সূচক উত্তাল ছিল দিনভর। দিনের শেষে অবশ্য সেনসেক্স বন্ধ হয়েছে ১৪১ পয়েন্ট উপরে। ডিভিডেন্ড বণ্টন-করে হাত দেওয়া হয়নি। বন্ড-বাজারকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বাজেটে। বাজেটে বাজার বেজায় খুশি না-হলেও আর্থিক বৃদ্ধির গতি বাড়বে এই আশ্বাসে ভর করে বাজার আগামী দিনে তেজীই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার বাজার খুললে বাজেটের প্রকৃত প্রতিফলন দেখা যাবে সূচকের ওঠা-নামার তালে।

দেশ

বাজেটে বড় কোনও বোমা ফাটেনি। বেশ কিছু নতুন সড়ক নির্মাণের কথা বলা হলেও অনেকটা চিদম্বরমের পথেই হেঁটেছেন জেটলি। তবে বাজেটে কোনও নতুন দিশা নেই, তা নয়। আসলে এত বড় দেশের এত সমস্যা একটি বাজেটের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়।

প্রতিশ্রুতি অবশ্য ছিল অনেক। এর একটি বড় অংশ এ বারও অধরা রয়ে গেল। রাজনৈতিক কারণে সংস্কারের পথে বড় পদক্ষেপ করা গেল না। সব মিলিয়ে এ বারের বাজেট আলোকপাত করেছে বহু বিষয়ের উপরে। সব ক্ষেত্রে অল্প-বিস্তর উন্নতি হলেও মোট ফল খারাপ হবে না। এমনিতেই অর্থনীতির অনেক শর্ত এখন বেশ অনুকূলে। এর সঙ্গে বাজেটের সুফল যুক্ত হয়ে বুলেট ট্রেনের গতিতে না-হোক রাজধানী এক্সপ্রেসের গতিতে দেশ এগোবে বলে আশা করা যেতেই পারে।

union budget arun jaitley amitabha guha sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy