কংগ্রেসের দাবি মেনে পণ্য-পরিষেবা করের (জিএসটি) হার ১৮ শতাংশের মধ্যে বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয় বলে ফের স্পষ্ট করে দিলেন অরুণ জেটলি।
অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, জিএসটি কার্যকর করতে হবে সংবিধান সংশোধনের রাস্তায় হেঁটে। তাই সেই বিলে লিখিত ভাবে করের হার বেঁধে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। বরং তা ঠিক করার কথা জিএসটি কাউন্সিলের। কারণ তা না-হলে, ভবিষ্যতে কোনও জরুরি কারণে করের হার বাড়াতে গেলেই সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে। নতুন করে বিল পাশ করাতে হবে সংসদ ও অন্তত অর্ধেক বিধানসভায়। যা যথেষ্ট ঝক্কির।
যুক্তি পুরনো হলেও, বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির অনুষ্ঠানে নতুন করে অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে শিল্পমহল। তাঁদের সংশয়, বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বেও রাজনৈতিক আকচা-আকচিতে যদি রাজ্যসভায় জিএসটি বিল আটকে যায়, তা হলে নিজেদের মেয়াদে আর তা পাশ করাতে মোদী সরকারের একই রকম আগ্রহ আদৌ থাকবে তো?
এ দিন জেটলি দাবি করেন, প্রতিটি রাজ্য (এমনকী কংগ্রেসশাসিতগুলিও) জিএসটি চালুর পক্ষপাতী। এই বিলকে সমর্থন জানাতে তৈরি কংগ্রেস ছাড়া বাকি সমস্ত রাজনৈতিক দলও। এ নিয়ে যে-সমস্ত মতানৈক্য ছিল, তার প্রায় সবই দূর করা সম্ভব হয়েছে। গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে শুধু কংগ্রেসের একটি শর্ত। তা হল, জিএসটির ঊর্ধ্বসীমা ১৮ শতাংশে বাঁধা।
গত বছরের শেষ দিকে সনিয়া ও রাহুল গাঁধী জানিয়েছিলেন, জিএসটি নিয়ে কংগ্রেসের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল—(১) জিএসটি-র হার ১৮ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখা। (২) জিএসটি বিলে লিখিত ভাবে তার উল্লেখ। কংগ্রেসের দাবি ছিল, বিল পাশ করাতে এগুলি মানতেই হবে মোদী সরকারকে। তখনও অর্থ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছিল, ১৮ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা যদি বা স্থির করা যায়, বিলের অংশ হিসেবে তা পেশ করা শক্ত। করের হার বদলকে সংবিধান সংশোধনের আওতায় রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না অর্থমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনও।
এই রাজনৈতিক দড়ি টানাটানিতে আজ দীর্ঘ দিন ধরেই তীরে এসে তরী আটকে আছে জিএসটি বিলের। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিল্পমহল। এ বিষয়ে আশঙ্কার কথা এ দিন ঘুরপাক খেয়েছে কলকাতায় সিআইআইয়ের অনুষ্ঠানেও। দেশের শিল্পপতিদের এক বড় অংশ মনে করেন, সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে রাজনীতির লড়াই এমন তেতো না-হলে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিল পাশের রাস্তা এত দিনে হয়তো খোলা যেত। তাঁদের আক্ষেপ, সংসদের প্রতিটি অধিবেশনের আগেই কোনও না-কোনও বিষয় নিয়ে ঝড় উঠছে। আর তাতে সমূলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জিএসটি নিয়ে আলোচনা ও ঐকমত্য তৈরির পরিবেশ। ললিত মোদী কাণ্ড, ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্ক থেকে শুরু করে রোহিত ভেমূলা-জেএনইউ নিয়ে ঝড়। কিছু-না-কিছু নিয়ে প্রবল রাজনৈতিক তিক্ততা বিল পাশের সম্ভাবনা নষ্ট করে দিয়েছে অঙ্কুরেই।
একই সঙ্গে শিল্পমহলের আশঙ্কা, এর পর অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বেও যদি জিএসটি বিল পাশ না-হয়, তবে তা নিয়ে আগ্রহ হারাতে পারে মোদী সরকারই। তাঁদের যুক্তি, সংসদে এবং দেশের অন্তত অর্ধেক বিধানসভায় ওই বিল উতরে যাওয়ার পরে তার সুফল ঘরে তুলতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত বছর দুয়েক। সুতরাং তা পাশ করাতেই যদি ২০১৭ গড়িয়ে যায়, তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তার লাভ তোলা বিজেপির পক্ষে শক্ত হবে। তাই আগামী অধিবেশনেই তা রাজ্যসভার গণ্ডি না-টপকালে, বিলটি নিয়ে এনডিএ সরকারেরও আগ্রহ কমার সম্ভাবনা।
অবশ্য এ দিন জেটলির আশ্বাস, ‘‘বিল পাশ করানোর উপযুক্ত সংখ্যা এখন রাজ্যসভায় মজুত।’’ আপাতত সেই আশাতেই বুক বাঁধছে শিল্পমহল। কিন্তু অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বও ফস্কালে জিএসটি গভীর গাড্ডায় পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy