Advertisement
E-Paper

মোদীর মার্কিন সফরে ভর করে চাঙ্গা হতে পারে বাজার

গত সপ্তাহের প্রথম চার দিনে ভাল রকম রক্তক্ষরণের পরে শুক্রবার অবস্থা কিছুটা হলেও শুধরেছে। সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৩ সাল থেকে বণ্টন করা অধিকাংশ কয়লা ব্লক বাতিল করার সিদ্ধান্তে বড় আঘাত পৌঁছয় শিল্পমহলে। বিদ্যুৎ, ইস্পাত এবং খনন শিল্প বড় রকমের পতনের মুখে পড়ে। পাশাপাশি, কালো মেঘ দেখা দেয় ব্যাঙ্কিং শিল্পের আকাশেও। আশঙ্কা দেখা দেয় সংশ্লিষ্ট শিল্পে দেওয়া মোটা অঙ্কের ঋণ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬

গত সপ্তাহের প্রথম চার দিনে ভাল রকম রক্তক্ষরণের পরে শুক্রবার অবস্থা কিছুটা হলেও শুধরেছে। সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৩ সাল থেকে বণ্টন করা অধিকাংশ কয়লা ব্লক বাতিল করার সিদ্ধান্তে বড় আঘাত পৌঁছয় শিল্পমহলে। বিদ্যুৎ, ইস্পাত এবং খনন শিল্প বড় রকমের পতনের মুখে পড়ে। পাশাপাশি, কালো মেঘ দেখা দেয় ব্যাঙ্কিং শিল্পের আকাশেও। আশঙ্কা দেখা দেয় সংশ্লিষ্ট শিল্পে দেওয়া মোটা অঙ্কের ঋণ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে।

সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তে বড় রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বিশ্ব বাজারের পতনের প্রভাবে সদ্য নুয়ে পড়া বাজারে। ফলে আরও মেদ ঝরে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্টি-র। সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন শেয়ার বাজারে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ২৭ হাজার ভেঙে সেনসেক্স নেমে আসে ২৬ হাজারের ঘরে। বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করায় চাপ বাড়ে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের উপর। বৃহস্পতিবার ডলারের দাম বেড়ে পৌঁছে যায় ৬১.৩৫ টাকায়।

এই ক্ষতে কিছুটা মলম পড়ে শুক্রবার শেষ বেলায়। খবর আসে, মার্কিন মূল্যায়ন বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এসঅ্যান্ডপি) ভারতের ঋণ ফেরত দেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি (আউটলুক) নেতিবাচক (নেগেটিভ) থেকে স্থিতিশীল (স্টেব্ল)-এ উন্নীত করেছে। খবরটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে বাজারে। চকিতে প্রাণ পায় তলিয়ে যাওয়া শেয়ার সূচক। দিনের শেষে ১৫৮ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স পৌঁছে যায় ২৬,৬২৬ অঙ্কে। কিছুটা স্বস্তি ফেরে লগ্নিকারীদের মনে। রেটিং নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করাটা মোদী সরকারের প্রতি আস্থার প্রকাশ বলেই ধরে নেন লগ্নিকারীরা। বিশেষজ্ঞদের আশা, স্থিতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি বিদেশি লগ্নিকারীদের মনে আস্থা ফেরাবে এবং নতুন করে তাঁদের বিনিয়োগ আসতে শুরু করবে বাজারে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে-ব্যাঙ্কিং শেয়ারগুলি ধরাশায়ী হচ্ছিল, তাদের অনেককেই শুক্রবার শেষ বেলায় কিছুটা উঠতে দেখা গিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শেয়ার বাজারের নজর এ বার পুরোপুরি নিবদ্ধ থাকবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের দিকে। এই সফর ঘিরে বড় আশা শিল্প-বাণিজ্য মহলের। এর আগে বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে চিন ও জাপানের কাছ থেকে। অনেকেই আশা করছেন যে, এদের মিলিত প্রতিশ্রুতিকে ছাপিয়ে যেতে পারে বারাক ওবামার দেশের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রাপ্তি।

সরকার ছাড়াও বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকটি মার্কিন সংস্থা আলোচনায় বসবে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। অনুমান করা হচ্ছে, পরিকাঠামো এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে লগ্নি টানার জন্য সচেষ্ট হবেন নরেন্দ্র মোদী। এর থেকে লাভবান হতে পারে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র-সহ রফতানি প্রধান শিল্পগুলি। শেষ পর্যন্ত সব যদি ঠিকঠাক চলে, তবে তার ভাল প্রভাব শেয়ার বাজারে পড়বে বলে আশা করা যায়।

এ দিকে, আগামী কাল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি পর্যালোচনার দিন। সুদের হার কমানো হবে বলে এই মুহূর্তে কেউই আশা করছেন না। তবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন ঋণের চাহিদা বাড়ানোর জন্য অন্য কী সিদ্ধান্ত নেন, তার দিকেই নজর থাকবে বাজারের। উল্লেখ্য, ঋণের তুলনায় আমানতের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে ওঠায় সম্প্রতি জমার উপর সুদ কমাতে হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ককে।

অন্য দিকে, শেয়ার বিভাজনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক, বিশেষ করে যাদের বাজার দর একটু উপরের দিকে। গত সপ্তাহে প্রতিটি ১০ টাকার শেয়ার ভেঙে ১ টাকার ১০টি শেয়ারে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। এর আগে শেয়ার বিভাজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আরও দু’টি সরকারি ব্যাঙ্ক। বেসরকারি ব্যাঙ্কের মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রতিটি ১০ টাকার শেয়ারকে ৫টি ২ টাকার শেয়ারে ভেঙেছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। নতুন শেয়ার নথিবদ্ধও হয়েছে বাজারে। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক।

শেয়ার বিভাজনের ফলে বাজারে শেয়ারের জোগান ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়বে। দাম নেমে আসবে অনেকেরই নাগালের মধ্যে। ফলে ছোট লগ্নিকারীদের বিনিয়োগের পথ সুগম হবে। যাঁদের হাতে এই সব ব্যাঙ্কের শেয়ার আছে, তাঁদের শেয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। দাম কমলে চাহিদা বাড়বে। ফলে নথিবদ্ধ হওয়ার পরে বিভাজিত শেয়ারের দাম আবার বাড়তে শুরু করবে বলে আশা করা যায়। যাঁদের হাতে ১০০টি ১০ টাকার স্টেট ব্যাঙ্ক শেয়ার ধরা আছে, তাঁরা আর কিছু দিনের মধ্যেই ওই ব্যাঙ্কের ১০০০টি শেয়ারের মালিক হবেন। প্রসঙ্গত, অনেক আগেই ভাঙা হয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের শেয়ার।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নির্ভর সিপিএসই (সেন্ট্রাল পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজেস) ইটিএফ বাজারে ছেড়ে কয়েক মাস আগে মোটা টাকা সংগ্রহ করেছিল আগের ইউপিএ সরকার। লাভবান হয়েছিলেন লগ্নিকারীরাও। এ বার এই ধরনের ইটিএফ দ্বিতীয় বার আনার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রের নতুন সরকার। আইটিসি, এল অ্যান্ড টি, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক এবং কয়েকটি নামী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মোটা শেয়ার আছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থা স্পেসিফায়েড আন্ডারটেকিং অব ইউনিট ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া বা ‘স্যুটি’-তে। তপ্ত বাজারে এই সব শেয়ারের দাম আনুমানিক ৫৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের মাধ্যমে এই সব শেয়ারের একাংশ বাজারে ছেড়ে মোটা টাকা সংগ্রহের কথা ভাবছে মোদী সরকার। সে ক্ষেত্রে জনগণও সুযোগ পাবেন অল্প টাকা লগ্নি করে কিছু ব্লু-চিপ শেয়ার কেনার স্বাদ।

amitabha guha sarkar sensex nifty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy