Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
টাকার সংস্থান নিয়ে চিন্তায় শিল্প

রাজ্য বাজেটে কমলো ভ্যাটের বোঝা

কেন্দ্রীয় বাজেটের ঠিক আগের দিন, শুক্রবার রাজ্য বাজেট পেশ করতে গিয়ে যথারীতি তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালের একগুচ্ছ সাফল্যের খতিয়ান দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। দিয়েছেন সামাজিক ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের কিছু প্রস্তাবও। যেগুলিকে সাধারাণ ভাবে স্বাগত জানালেও শিল্পায়নের ছবিটা বদলাতে রাজ্যের উদ্যোগ কতটা সদর্থক, কী ভাবেই বা বিপুল ব্যয় বরাদ্দে অর্থ সঙ্কুলান হবে, সে সব নিয়ে শিল্পমহলের সংশয় অবশ্য একেবারে মুছে দিতে পারেননি।

বাজেট পেশের সময়ে অমিত মিত্র। —নিজস্ব চিত্র

বাজেট পেশের সময়ে অমিত মিত্র। —নিজস্ব চিত্র

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩১
Share: Save:

কেন্দ্রীয় বাজেটের ঠিক আগের দিন, শুক্রবার রাজ্য বাজেট পেশ করতে গিয়ে যথারীতি তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালের একগুচ্ছ সাফল্যের খতিয়ান দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। দিয়েছেন সামাজিক ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের কিছু প্রস্তাবও। যেগুলিকে সাধারাণ ভাবে স্বাগত জানালেও শিল্পায়নের ছবিটা বদলাতে রাজ্যের উদ্যোগ কতটা সদর্থক, কী ভাবেই বা বিপুল ব্যয় বরাদ্দে অর্থ সঙ্কুলান হবে, সে সব নিয়ে শিল্পমহলের সংশয় অবশ্য একেবারে মুছে দিতে পারেননি। কারণ, ২০১৫-’১৬-র বাজেটে সব ক্ষেত্রেই ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

কর কাঠামোর সংস্কারের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী মূলত ছোট -মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসায়ীদেরই বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে করছেন শিল্পমহলের অনেকে।

প্রথমত, বাজেটে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব, যে-সব সংস্থার বার্ষিক ব্যবসার সীমা ১০ লক্ষ টাকা, তাদের ভ্যাট বা যুক্তমূল্য কর দিতে হবে না। এখন এই সীমা ৫ লক্ষ। ফলে ২০ হাজারেরও বেশি ছোট ব্যবসায়ী ভ্যাটের বোঝা এড়াতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, যে-সব সংস্থার বার্ষিক ব্যবসার অঙ্ক ১০ কোটি টাকার কম তাদের ‘সেলফ অডিট স্টেটমেন্ট’ আর দিতে হবে না।

তৃতীয়ত, যে-সব ব্যবসায়ী ভ্যাটে নথিভুক্ত হননি, তাঁদের এর আওতায় আনতে বিশেষ ‘অ্যামনেস্টি’ প্রকল্প আনবে রাজ্য, যাতে সুদ ও জরিমানা ছাড়াই আগের বছরগুলির জন্য কম কর দিয়ে নথিভুক্ত হওয়া যাবে।

চতুর্থত, বকেয়া কর নিয়ে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাপেলেট অ্যান্ড রিভিশনাল বোর্ড’-এর অধীনে থাকা এক কোটি টাকা পর্যন্ত দাবির মামলাগুলিকে ‘ফাস্ট ট্র্যাক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অথরিটি’-র কাছে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।

পঞ্চমত, ভ্যাট অ্যাসেসমেন্টের নির্দেশ প্রকাশের এক মাসের মধ্যে তার রিফান্ড অনুমোদিত হবে ও ২০১৫-র সেপ্টেম্বরের মধ্যে বকেয়া মামলা মেটানো হবে।

অন্য দিকে, কর কাঠামোর কিছু সংস্কারের কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। যেমন কর বসানোর পদ্ধতি সরল করা, সহজে ও দ্রুত বৃত্তিকর রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু করা, বৃত্তিকরের সঙ্গে বাণিজ্য কর বিভাগকে মিশিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।

সামাজিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি বা ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য ভ্যাট-এর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার যে-প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, তাকে সাধারণ ভাবে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন বণিকসভা— সিআইআই, বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার, এমসিসি চেম্বার, ভারত চেম্বার, ইন্ডিয়ান চেম্বার, ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন্স-সহ সকলেই। ভ্যাট-সহ বেশ কিছু ছাড় পাওয়ায় খুশি ছোট-মাঝারি শিল্পের সংগঠন ফসমি ও ফ্যাক্সি।

বেঙ্গল চেম্বারের কর্তা অম্বরীশ দাশগুপ্তের বক্তব্য, এই বাজেট জনমুখী। অ্যামনেস্টি প্রকল্প-সহ বেশ কিছু প্রস্তাব তাঁরা আগেই অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন বলে দাবি বণিকসভার অন্যতম কর্তা তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায়ের। কর বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি দাশগুপ্তর বক্তব্য, পণ্য-পরিষেবা করের দিকে এগোতে সাহায্য করবে অ্যামনেস্টি প্রকল্প।

তবে অম্বরীশবাবুর বক্তব্য, সব দফতরে ব্যয় বরাদ্দ বাড়লেও প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকার বাড়তি অর্থের সঙ্কুলান কোথা থেকে হবে তার স্পষ্ট দিশা মেলেনি বাজেট বক্তৃতায়। ছোট-মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দেওয়ায় খুশি হলেও তা আখেরে রাজ্যের শিল্পায়নে কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে তিমিরবরণবাবুর মতোই সংশয় রয়েছে এমসিসি চেম্বারের কর্তা অরুণ সরাফের মনেও। জমি-সহ রাজ্যে শিল্পায়নের বেশ কিছু সমস্যার জন্য অরুণবাবুর আশা ছিল, বাড়তি কিছু সুবিধা মিলবে।

তিমিরবরণবাবুর বক্তব্য, ছোট ও মাঝারি শিল্পের প্রায় ৭০%-ই বড় শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তাই বড় শিল্প রাজ্যে না-থাকলে শুধু ভ্যাটের ছাড় দিলে ছোট ও মাঝারি শিল্পের কতটা উপকার হবে? তাঁর সঙ্গে সহমত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছোট-মাঝারি শিল্পের অনেকেই। এ ছাড়া, তাঁদের মতে, অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে করের হার বেশ চড়া।

রাজ্য প্রবেশ কর না-তোলায় হতাশ ভারত চেম্বার। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের শিল্পকে কাঁচামালের জন্য মূলত ভিন্ রাজ্যের উপরই নির্ভর করতে হয়। অন্য দিকে, গত বছর কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণে রাজ্যের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছে ইন্ডিয়ান চেম্বার। বস্তুত, ২০১৩-’১৪-এর পরে চলতি অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে যে-সংশয় রয়েছে তা স্পষ্ট বাজেটেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পকর্তার বক্তব্য, এটাই স্পষ্ট করছে রাজ্যের সার্বিক শিল্পায়নের করুণ দশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE