Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পুঁজি জোগাড়ে বিকল্প পথ খোঁজার সুপারিশ

সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে নিজেদের অংশীদারি ধাপে ধাপে ৫২ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্র। কিন্তু শুধু তা দিয়ে বাসেল-থ্রি বিধি মানার উপযুক্ত পুঁজি জোগাড় করা সম্ভব না-ও হতে পারে বলে মনে করেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর রাম সুব্রহ্মণ্যন গাঁধী। আর সেই কারণেই ওই ব্যাঙ্কগুলিকে বাজার থেকে টাকা তোলার বিভিন্ন বিকল্প পথ ভেবে রাখার পরামর্শ দিলেন তিনি। একই সঙ্গে আর্জি জানালেন, সময়ের দাবি মেনে ব্যাঙ্কের পরিচালন কাঠামো, কর্মপদ্ধতি এবং ঝুঁকি কমানোর রাস্তা বাছাইকে ঢেলে সাজতেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪০
শনিবারের অনুষ্ঠানে গাঁধীকে (বাঁ দিকে) স্বাগত জানাচ্ছেন বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট অলোক রায়। ছবি: পিটিআই

শনিবারের অনুষ্ঠানে গাঁধীকে (বাঁ দিকে) স্বাগত জানাচ্ছেন বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট অলোক রায়। ছবি: পিটিআই

সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে নিজেদের অংশীদারি ধাপে ধাপে ৫২ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্র। কিন্তু শুধু তা দিয়ে বাসেল-থ্রি বিধি মানার উপযুক্ত পুঁজি জোগাড় করা সম্ভব না-ও হতে পারে বলে মনে করেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর রাম সুব্রহ্মণ্যন গাঁধী। আর সেই কারণেই ওই ব্যাঙ্কগুলিকে বাজার থেকে টাকা তোলার বিভিন্ন বিকল্প পথ ভেবে রাখার পরামর্শ দিলেন তিনি। একই সঙ্গে আর্জি জানালেন, সময়ের দাবি মেনে ব্যাঙ্কের পরিচালন কাঠামো, কর্মপদ্ধতি এবং ঝুঁকি কমানোর রাস্তা বাছাইকে ঢেলে সাজতেও।

শনিবার কলকাতায় বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক আলোচনা -সভায় গাঁধী বলেন, বাসেল-থ্রি বিধি মানতে গেলে, দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকার টিয়ার-ওয়ান পুঁজি লাগবে সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে। যার মধ্যে ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকাই শেয়ার মূলধন। কেন্দ্রীয় সরকার ওই ব্যাঙ্কগুলিতে নিজেদের অংশীদারি ৫২ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছে ঠিকই। কিন্তু শুধু ওই শেয়ার বেচে অত টাকার সংস্থান হওয়া শক্ত। তাই আগামী পাঁচ বছরে সেই বাড়তি পুঁজি পাওয়ার জন্য বিকল্প পথ ভাবতে হবে ব্যাঙ্কগুলিকে। ভেবে দেখতে হবে, বিভিন্ন রকম ভোটাধিকার-যুক্ত শেয়ার ছাড়ার কথা।

ডেপুটি গভর্নর জানান, ২০১৪-র মার্চ পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার ৭২.১% এখনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির দখলে। আমানত ও ঋণের যথাক্রমে ৭৭.২২% ৭৫.৭৪ শতাংশও রয়েছে তাদের ঝুলিতে। কিন্তু তেমনই তাদের অনুত্‌পাদক সম্পদ ৪.৩৬%। যেখানে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির তা ১.৭৩%। একই ভাবে পরিচালন দক্ষতা এবং ঝুঁকি মেপে তার জন্য টাকার সংস্থান করার মতো কিছু ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। এই সমস্ত সমস্যা কাটিয়ে এই তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন গাঁধী। যার মধ্যে রয়েছে

• বাসেল-থ্রি বিধি মানার জন্য পর্যাপ্ত পুঁজি আনতে কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে না-থেকে বিকল্প রাস্তা ভেবে রাখা।

• হোল্ডিং সংস্থার কাঠামো আঁকড়ে ধরার কথা বিবেচনা করা।

• ব্যাঙ্কে দক্ষ কর্মী ও ম্যানেজারদের টানতে মেধা, দক্ষতা এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অভিজ্ঞতার উপর জোর দেওয়া। দক্ষতা অনুযায়ী বেতনের বন্দোবস্তকে ঢেলে সাজা।

• মূলধনী বাজারে আরও বেশি করে যোগদান। বিশেষত সেই সমস্ত ডেরিভেটিভের লেনদেনে, যা দিয়ে ঝুঁকি অনেকখানি ছেঁটে ফেলা যায়।

• বর্তমানে কৃষি, শিল্প, পরিষেবা, খুচরো এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৩.৯০%, ৪৬.৩২%, ২০.৯৩%, ১৫.৭৪% এবং ৩.১১% ঋণ দেয় ব্যাঙ্কগুলি। এই বাটোয়ারার মধ্যে আরও বেশি ভারসাম্য আনা।

• খুচরো ঋণের বিভিন্ন প্রকল্প এবং তা দেওয়ার পদ্ধতি ঢেলে সাজা।

• দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিতে উদ্যোগ। তার জন্য শুধু ইট-কাঠের দেওয়াল ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা ব্যবহার।

• ব্যাঙ্ক পরিচালনায় কোনও সরকারি হস্তক্ষেপ না-করার যে-প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার।

• ব্যাঙ্ক পরিচালনায় আরও পেশাদারিত্ব আনা।

• আগামী দিনে তীব্র প্রতিযোগিতা যুঝেও টিকে থাকতে তৈরি হওয়া।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি পুণেতে দু’দিনের ‘ব্যাঙ্কিং রিট্রিট’-এ অংশ নিয়েছিলেন দেশের সমস্ত সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তারা। সেখানে সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে কেন্দ্রের অংশীদারি ধাপে ধাপে ৫১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে আর্জি জানিয়েছিল ওই ব্যাঙ্কগুলিই। কেন্দ্রীয় আর্থিক পরিষেবা সচিব হাসমুখ আধিয়া জানিয়েছিলেন, “বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকেই ওই প্রস্তাব পেয়েছি।” তাঁদের পরামর্শ, এ জন্য বিনিয়োগ কমিটি তৈরি করে প্রথমে সরকারি লগ্নিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক সেখানে। আধিয়ার দাবি ছিল, “বিষয়টি খতিয়ে দেখবে কেন্দ্র।”

ওই মঞ্চ থেকেই ব্যাঙ্ক পরিচালনায় কোনও রকম হস্তক্ষেপ না-করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরামর্শ দিয়েছিলেন, সফটওয়্যার ব্যবহার, বিজ্ঞাপন দেওয়ার মতো ক্ষেত্রে জোট বেঁধে কাজ করার। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের প্রস্তাব ছিল, অর্থনীতিকে ছন্দে ফেরাতে এক বছরের মধ্যে অনুত্‌পাদক সম্পদের সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনে নিয়ম সংশোধন করুক কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে আমূল সংস্কারেরও।

দেশের সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে ঢেলে সাজার কথা এ দিন বলে গেলেন গাঁধীও।

state-owned bank funding alternative way-out
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy