নিউটন আবিষ্কৃত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যে শেয়ার বাজারেও কাজ করে, তা আরও একবার প্রমাণিত হল। আপেলের মতো অবশেষে পড়ল সূচকও।
এতটা ওঠার পরে নামার জন্য বাজার একটি কারণ খুঁজছিল। পেয়েও গেল শুক্রবার। ইরাক সঙ্কট এবং তার দরুন বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি সেনসেক্সকে এক ঝটকায় টেনে নামাল ৩৪৮ পয়েন্ট। একই দিনে নিফ্টি পড়েছে ১০৭ অঙ্ক। এর জেরে অস্বাভাবিক উচ্চতায় উঠে আসা কিছু শেয়ার আবার খানিকটা স্বাভাবিক জায়গায় ফিরে এসেছে। এই পতন লগ্নিকারীদের কিছুটা কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগ করে দেবে। চড়া দামে শেয়ার বিক্রি করে যাঁরা পতনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাঁরা এ বার আবার মাঠে নামার কথা ভাবতে পারেন। কারণ, এই পতন আরও কিছুটা বিস্তৃত হলেও হতে পারে। ইরাক ছাড়াও অপ্রতুল বর্ষার সম্ভাবনা ভাবাচ্ছে বাজারকে।
ইরাকের খবর না-এলে বাজারের আরও ওঠার কথা ছিল শুক্রবার। কারণ, ওই দিনই বাজার খবর পায়, মে মাসে রফতানি ১১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আরও নেমে আসে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ। এ ছাড়া মে মাসে গাড়ি বিক্রি বাড়ার খবরও বাজারে পৌঁছয়। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বাড়তে শুরু করেছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই)। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন করেছে ভারতে ওয়াল-মার্ট ডিজনির ১১০০ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব। মোট ২৬টি এ
ধরনের বিদেশি লগ্নি প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে ভারত সরকারের। দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এটি অবশ্যই বড় খবর। এতগুলি সদর্থক খবরও শুক্রবার বাজারের পতন রোধ করতে পারেনি। আসলে, রফতানি বাড়ায় যে-অতিরিক্ত বিদেশি মুদ্রা আয় হবে, তার থেকে বেশি হয়তো বেরিয়ে যাবে অশোধিত তেলের দাম বেড়ে ওঠায়। কারণ, দেশের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ৮০ শতাংশই আমদানি করে মেটাতে হয়। বর্ধিত তেলের দাম অর্থনীতির অগ্রগতির পথ পিচ্ছিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইনফোসিসের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আবার কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ারগুলি। বাজারে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ওষুধ সংস্থার শেয়ারগুলিও। চলতি উত্থানে এই দুই শিল্প কিন্তু ততটা সামিল হয়নি। বাজার এতটা উঠলেও কিছু নামী শেয়ারের দাম ও আয়ের অনুপাত বা পি ই রেশিও এখনও ১০ বছরের গড় পি ই রেশিও-র থেকে বেশ নীচে আছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এই সব শেয়ারের দাম আরও ওঠার সম্ভাবনা থাকবে। এই শ্রেণির শেয়ারগুলির মধ্যে আছে টাটা স্টিল, কেয়ার্ন ইন্ডিয়া, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আই ডি এফ সি ইত্যাদি। সাময়িক পতন হলেও বাজার যে আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং অনেকটা উপরে যাবে, এই মত পোষণ করছেন দেশি-বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞই। প্রশ্ন -চিহ্ন একটাই এবং তা হল বৃষ্টির সম্ভাব্য পরিমাণ।
তবে শেয়ার বাজারের কাছে আগামী দিনের আর একটি বড় ঘটনা হল বাজেট। এ বারের বাজেট দিশা দেবে ভারতীয় অর্থনীতি, বিভিন্ন শিল্প এবং শেয়ার বাজারকে। সাধারণ মানুষেরও আশা অনেক। শোনা যাচ্ছে, ৮০সি ধারায় কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে লগ্নির সীমা ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১.৫০ লক্ষ টাকা করা হতে পারে। বাড়ানো হতে পারে করমুক্ত আয়ের সীমাও। গত দু’বছরে যে-পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধি ও টাকার মূল্যহ্রাস হয়েছে, তাতে এই সীমা অন্ততপক্ষে ৫০% বাড়ানো খুবই যুক্তিযুক্ত হবে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র নির্বাচনী প্রচারেও এ ধরনের প্রতিশ্রুতি ছিল। এই প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায়িত্ব এখন অরুণ জেটলির। একই সঙ্গে তাঁকে দেখতে হবে, কেন্দ্রের আয়-ব্যয়ের মধ্যে যেন সামঞ্জস্য থাকে। ভারতের মতো সমস্যা-জর্জরিত দেশে সবাইকে খুশি রেখে সরকার চালানো অত্যন্ত কঠিন কাজ।
মোদী সরকার যে-সব ভাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তার মধ্যে আছে অবসরের দিনেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের পেনশন বই (পি পি ও) হাতে দেওয়া। রাজ্য সরকারগুলিও এই ব্যবস্থা নিলে বহু মানুষ সময় মতো পেনশন পেতে পারেন। এ দিকে, কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ)-এ ২০১৪-’১৫ সালে সুদ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতেও উপকৃত হবেন অসংখ্য মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy