হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের বিশেষ অডিট রিপোর্ট অনুমোদন করেছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা সিএজি।
সংশ্লিষ্ট মহলের ইঙ্গিত, এই রিপোর্টের হাত ধরেই ব্যাঙ্কগুলির কাছে নতুন ঋণ পাওয়ার দরজা খুলতে পারে। আর তা হলে বন্ধ কারখানার দরজা খোলার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি, পেট্রোকেম কর্তৃপক্ষ শনিবার ইন্ডিয়ান প্লাস্টিক্স ফেডারেশনের সদস্যদের জানিয়েছেন, “সময় এলেই কারখানা খুলবে। কাঁচামালের অভাবও দূর হবে। মূলধন জোগাড় করা নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।”
এ দিনই রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে হলদিয়া পেট্রোকেমের পরিচালন পর্ষদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সংস্থার অন্যতম অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, সি এ জি অডিট রিপোর্ট অনুমোদন করেছে। সব কিছু ভালর দিকেই চলছে। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষে কেউ মুখ খোলেননি। এ দিনের বৈঠকে পূর্ণেন্দুবাবু ছাড়াও শিল্প সচিব চঞ্চলমল বাচাওয়াত, নিগমের এমডি কৃষ্ণ গুপ্ত এবং সংস্থার এমডি উত্তম বসু উপস্থিত ছিলেন।
ঠিক দু’মাস বন্ধ পেট্রোকেমের কারখানা। গত ৬ জুলাই ন্যাপথা ক্র্যাকারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কারখানা বন্ধ করা হয় বলে জানিয়েছিল সংস্থা। এ দিন পূর্ণেন্দুবাবুর কথায় অবশ্য যান্ত্রিক ত্রুটির যুক্তি নস্যাৎ হয়ে যায়। আর্থিক সঙ্কট না কি যান্ত্রিক গোলযোগ, কোনটা কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আসল কারণ, তা নিয়ে রাজ্য সরকার বা সংস্থা কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ মুখ খোলেননি। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কার্যকরী মূলধনের অভাবেই উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে সংস্থা। পুরোদস্তুর উৎপাদন না-করতে পারলে দৈনিক প্রায় দেড় কোটি টাকা লোকসান হয়।
পেট্রোকেমের প্রধান কাঁচামাল ন্যাপথার দর বিশ্ব বাজারে এই মূহূর্তে পড়তির দিকে। পেট্রোরসায়ন শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের বাজারও এখন ভাল। তাই সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ভাল সময়ের সুযোগ নিতে মূল ত্রুটি তাড়াতাড়ি সারিয়ে কারখানা খুলতে পারত পেট্রোকেম।
কিন্তু সংস্থা সূত্রে খবর, সেই পথে এখনও বাধা কার্যকরী মূলধনের অভাব। কারণ, বন্ধ হওয়ার আগে প্রতি ঘণ্টায় টেনেটুনে ১১০-১২০ টন ন্যাপথা ব্যবহৃত হচ্ছিল কারখানায়। কিন্তু নগদ লাভের মুখ দেখতে ওই পরিমাণ হতে হবে অন্তত ১৮০ টন। অথচ এই বাড়তি কাঁচামাল কিনতে যে-টাকা (কার্যকরী মূলধন) চাই, তা পেট্রোকেমের নেই। মালিকানা-সমস্যা না-মেটা পর্যন্ত ওই টাকা ধার দিতেও রাজি নয় ঋণদাতা সংস্থাগুলি।
ঘণ্টায় ২৬০ টন ন্যাপথা চূর্ণ করার ক্ষমতা রাখে পেট্রোকেমের ক্র্যাকার। কিন্তু বন্ধের আগে ন্যাপথা ব্যবহৃত হচ্ছিল বড়জোর ১১০-১২০ টন। ১১০ হোক বা ১৮০ টন ক্র্যাকারে তা চূর্ণ করার অন্যান্য খরচ প্রায় একই। বাড়তি বলতে শুধু ওই ৭০ টন ন্যাপথার দাম। ফলে তা জুগিয়ে ক্র্যাকারকে ঘণ্টা পিছু অন্তত ১৮০ টন ন্যাপথা জোগাতে পারলে, তবে উৎপাদন খরচে পড়তা পড়ে। সম্ভব হয় নগদ লাভের মুখ দেখা। কিন্তু প্রশ্ন হল, বন্ধের আগে যেখানে ঘণ্টায় ১১০-১২০ টন ন্যাপথা জোগাতেই পেট্রোকেম হিমসিম খাচ্ছিল, সেখানে ১৮০ টনের খরচ তারা জোগাবে কোথা থেকে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy