Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

‘অবহেলায়’ মৃত্যু বৃদ্ধের, দেহ ছুঁলেন না কেউই

বৃদ্ধ আদৌ করোনায় মারা গিয়েছেন কি না, সেটা না-জেনেই সংক্রমণের আশঙ্কায় তাঁকে ছুঁয়ে দেখলেন না কেউ।

অমানবিক: মেডিক্যালে পড়ে বৃদ্ধের দেহ। নিজস্ব চিত্র

অমানবিক: মেডিক্যালে পড়ে বৃদ্ধের দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০৪:১২
Share: Save:

ট্রলি না-পেয়ে সঙ্কটজনক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ বা চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ প্রায়ই ওঠে শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু করোনা অতিমারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সদ্য কোভিড হাসপাতাল হিসেবে কাজ শুরু করা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বৃহস্পতিবার দুপুরে যা ঘটল, সাম্প্রতিক অতীতে তার নজির খুঁজে পাচ্ছেন না স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। শ্বাসকষ্টের রোগী এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়ের কাছে ঘণ্টাখানেক পড়ে রইল তাঁর দেহ। বৃদ্ধ আদৌ করোনায় মারা গিয়েছেন কি না, সেটা না-জেনেই সংক্রমণের আশঙ্কায় তাঁকে ছুঁয়ে দেখলেন না কেউ। করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে এম আর বাঙুরে এমন অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছিল। তা থেকে স্বাস্থ্য ভবন কোনও শিক্ষা নিয়েছে কি না, এ দিনের ঘটনায় সেই গুরুতর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

বৃদ্ধের ছেলের আরও প্রশ্ন, কলকাতা মেডিক্যাল যে হেতু কোভিড হাসপাতাল, তাই কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেও তো পরিষেবা পাওয়ার কথা। সেখানে কেন সংক্রমণের আশঙ্কায় কেউ রোগীকে ছুঁয়ে দেখবেন না?

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রের খবর, ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়ায় এ দিন বৃদ্ধকে প্রথমে বেলেঘাটা আইডি-তে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতা মেডিক্যালে। হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বাবাকে নিয়ে প্রথমে সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের (এসএসবি) ফিভার ক্লিনিকে যান ছেলে। সেখান থেকে রোগীকে জরুরি বিভাগে ভর্তির টিকিট করার জন্য বলা হয়। সেই পর্ব মিটিয়ে ‘সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস’ (সারি) থাকা রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট গ্রিন বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান বৃদ্ধ।

আরও পড়ুন: বাস-ট্যাক্সি-অটো, স্বাভাবিক হওয়ার পথে সব পরিবহণ

আরও পড়ুন: বাজার-বিলাসে যে লুকিয়ে বিপদ, বুঝেও বুঝছে না শহর

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এসএসবি ব্লক থেকে জরুরি বিভাগে বাবাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাচ্ছিলেন ছেলে। আবার জরুরি বিভাগ থেকে গ্রিন বিল্ডিংয়ের পথেও ওই ভাবে যাচ্ছিলেন। গ্রিন বিল্ডিংয়ে যাওয়ার পথে প্রশাসনিক কার্যালয় এবং ইডেন বিল্ডিংয়ের মাঝের রাস্তায় বৃদ্ধকে নামিয়ে ছেলে যখন জিরোচ্ছিলেন, সেই সময়েই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। সূত্রের খবর, ইডেন বিল্ডিং লাগোয়া ফুটপাতে প্রায় ঘণ্টাখানেক পড়ে ছিল বৃদ্ধের দেহ। হাসপাতালের একাধিক কর্মী এলেও কেউই মরদেহের কাছে যাওয়ার সাহস করেননি।

কিন্তু কেন অসুস্থ রোগীকে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যেতে হবে, কেনই বা কোভিড হাসপাতাল চত্বরে এ ভাবে মৃতদেহ পড়ে থাকবে এবং সর্বোপরি হাসপাতাল কর্মীদের একাংশ কী ভাবে এত ‘অমানবিক’ হতে পারেন— সেই সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি
কর্তৃপক্ষের তরফে।

হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকদের বক্তব্য, সমস্যা আরও রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মৃতদেহ প্যাকিং করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসাধীন রোগীদের খাবার দেওয়া, তাঁদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে পরিজনেদের অবহিত করা, এ সব প্রশ্নে পরিজনেদের অভিযোগের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে।

ইন্ডিয়ান পাবলিক হেল্‌থ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সম্পাদক, চিকিৎসক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনা-ভীতি কাটাতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বার বার প্রশিক্ষণ জরুরি। আমরা একে বলি ট্রেনিং অ্যান্ড রিট্রেনিং। এম আর বাঙুরেও এই সমস্যা ছিল। প্রশিক্ষণে জোর না-দিলে সমস্যা মিটবে না।’’

এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই রোগীর পরিচয় এবং তিনি কোন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন, বিশদে জানতে চেয়েছি। সেই তথ্য না পেলে কিছু বলতে পারব না।’’ তিনি জানিয়েছেন, রোগীর চাপে মুহূর্তে সব শয্যা ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। কোভিড হাসপাতালের ভূমিকায় অভিজ্ঞতা নতুন। তাই পরিষেবা স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Covid 19 Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE