Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মহিলাদের নিয়ে গাড়ি ছোটালেন শাট্‌লের ‘মত্ত’ চালক

আর্তনাদ কানে যেতেই মোটরবাইক নিয়ে গাড়িটির পিছু নিলেন জনা কুড়ি যুবক। প্রায় দু’কিলোমিটার পথ ধাওয়া করার পরে শেষে এক জায়গায় গাড়ি থামাতে বাধ্য হলেন চালক।

আহত: ডান পা ভেঙে গিয়েছে সামনে বসা মহিলার। নিজস্ব চিত্র

আহত: ডান পা ভেঙে গিয়েছে সামনে বসা মহিলার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৪
Share: Save:

রাতের শহরে চলন্ত গা়ড়ি থেকে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন দুই মহিলা। মারাত্মক গতিতে চলা সেই গাড়ির বাঁ দিকের দরজা খুলে বারবার ঝাঁপ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন তাঁদের এক জন। আর্তনাদ কানে যেতেই মোটরবাইক নিয়ে গাড়িটির পিছু নিলেন জনা কুড়ি যুবক। প্রায় দু’কিলোমিটার পথ ধাওয়া করার পরে শেষে এক জায়গায় গাড়ি থামাতে বাধ্য হলেন চালক। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হল তাঁকে। শনিবার রাতে এমনই ঘটেছে হরিদেবপুর এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই রাতে সাড়ে আটটা নাগাদ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড থেকে ওই শাট্ল গাড়িতে করে অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন হরিদেবপুর থানা এলাকার বাসিন্দা, বছর পঁয়ত্রিশের দুই মহিলা। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি ওই জায়গায় একটি শপিং মলের সামনে থেকে ছেড়ে হরিদেবপুরে যাচ্ছিল।

মোট ন’জন যাত্রী ছিলেন তাতে। হরিদেবপুর থানার বেশ কিছুটা আগে গাড়ি থেকে সাত যাত্রী নেমে যান। গাড়ির সামনে চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন হরিদেবপুরের বাসিন্দা এক মহিলা। পিছনে ছিলেন আরও এক তরুণী। গাড়ির সামনের আসনে বসা মহিলার কথায়, ‘‘রাত তখন সাড়ে ন’টা। আমি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিলাম। থানার কিছুটা আগে বেশির ভাগ যাত্রী নেমে যেতে আচমকাই দেখি, চালক আমাকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, ঝামেলায় না গিয়ে বাড়ির কাছাকাছি নেমে যাব। কিন্তু চালক ক্রমাগত এমন অশ্রাব্য গালিগালাজ করছিল, তাতে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘থানার কাছাকাছি আসা মাত্রই চিৎকার করে প্রতিবাদ জানিয়ে গাড়ি দাঁড় করাতে বলি। কিন্তু চালক গা়ড়ি না থামিয়ে উল্টে গতি বাড়িয়ে দেয়। তখন পিছনে বসা আর এক মহিলা যাত্রী ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। চালক

গাড়ি না থামানোয় আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকি।’’

ওই মহিলা জানান, হরিদেবপুর থানা পেরোতেই তাঁদের চিৎকার শুনে কবরডাঙা মো়ড় থেকে বেশ কয়েক জন যুবক বিষয়টি বুঝতে পারেন। তাঁরাই গাড়িটির পিছু নেন। কিন্তু তাঁরা চিৎকার করতেই চালক গাড়ির গতি দ্বিগুণ করে দেন বলে অভিযোগ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেশ কিছু যুবক ধাওয়া করছেন বুঝে মত্ত চালক গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকেন। যুবকদের চিৎকারে তত ক্ষণে আশপাশের বাসিন্দারাও জড়ো হয়ে যান। পুলিশ জানিয়েছে, কবরডাঙা মো়ড় পেরিয়ে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে ঘোলপাড়ার দড়িরচকের কাছে অবশেষে গাড়িটি ঘিরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চালককে আটক করে বেধড়ক মারধর করা হয়। ক্ষুব্ধ জনতা গাড়িটিও ভাঙচুর করেন।

গাড়ি থামতেই তড়িঘড়ি নামতে গিয়ে দরজার ধাক্কায় ডান পা ভেঙে গিয়েছে সামনের আসনে বসা মহিলার। স্থানীয় বাসিন্দারাই দুই মহিলাকে প্রথমে এম আর বাঙুর হাসপাতাল ও পরে ঠাকুরপুকুর ই এস আই হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতেই দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছে়ড়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা ১০০ ডায়ালে ফোন করে হরিদেবপুর থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ পৌঁছে গাড়িচালক কানাই দাসকে গ্রেফতার করে। গাড়িটিও আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, ওই চালকের বাড়ি বাঁশদ্রোণীতে। অপহরণ, শ্লীলতাহানি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে ধৃত চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। রবিবার আদালতে তোলা হলে ৯ তারিখ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

এ দিন সকালে গাড়ির সামনে বসা মহিলার বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, বিছানা ছেড়ে বিশেষ উঠতে পারছেন না তিনি। শনিবার রাতের ঘটনার আতঙ্ক কাটেনি বলে তেমন কথা বলার অবস্থাতেও ছিলেন না। হরিদেবপুরে স্বামী, সন্তান নিয়ে বসবাস পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী ওই মহিলার। তাঁর কথায়, ‘‘বহু বছর ধরে শা়ট্‌লে করে অফিস থেকে ফিরছি। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি।’’ তাঁর অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় ছিলেন ওই চালক। পিছনের সিটে যে আরও এক মহিলা বসে আছেন, সেটা বুঝতে পারেননি চালক। তাই তাঁকে অপহরণ করার উদ্দেশেই গোলমাল পাকান চালক। মহিলার দাবি, ‘‘ধৃতের কঠোর সাজা হোক, এটাই চাই।’’ পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির পিছনে বসা মহিলাও নিয়মিত যাতায়াত করেন ওই পথেই। তাঁর স্বামী নেই, সন্তানকে নিয়ে থাকেন। শনিবার রাতের ঘটনার পর থেকে তিনিও প্রচণ্ড আতঙ্কে রয়েছেন। চিকিৎসকেরা তাঁকে বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime হরিদেবপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE