—প্রতীকী ছবি।
বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যের প্রভাবে পূর্ব কলকাতা জলাভূমির স্বাস্থ্যক্ষয়ের কথা দীর্ঘদিন আগেই উঠে এসেছিল। কিন্তু সেই স্বাস্থ্যক্ষয় কি নাগরিকদের শরীরেও থাবা বসাচ্ছে? শনিবার আন্তর্জাতিক জলাভূমি দিবসে সেই প্রশ্নটিই জোরালো হয়ে উঠল। অনেকেই বলছেন, ট্যানারি-সহ বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য ওই জলাভূমিতে পড়ছে। সেই জলেই মাছ ও আনাজ চাষ হচ্ছে। সেই খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক ঢুকলে তা নাগরিকদের শরীরেও ঢুকবে।
এই প্রশ্নের গুরুত্ব মেনে নিচ্ছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। তারা জানিয়েছে, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি থেকে আনাজ ও মাছে ক্ষতিকর রাসায়নিক ঢুকছে কি না, তা সমীক্ষা করার ভার দেওয়া হয়েছে শিবপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’-কে। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘ক্ষতিকর রাসায়নিক খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকছে কি না এবং মানুষের শরীরে তা প্রভাব ফেলছে কি না, সেই দু’টি বিষয়ই ওঁরা খতিয়ে দেখবেন।’’
পরিবেশবিজ্ঞানী অনুলিপি আইচ জানাচ্ছেন, এই দূষণের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কিছু গবেষণা হয়েছে। পূর্ব কলকাতা জলাভূমির মাছ ও আনাজ পরীক্ষা করে যে পরিমাণ ভারী ধাতু ও রাসায়নিক মিলেছে, তা গ্রামীণ এলাকার পুকুরের মাছ এবং মাঠের আনাজে থাকা ধাতু ও রাসায়নিকের পরিমাণের প্রায় সমান। অনুলিপি বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, বর্জ্যে থাকা রাসায়নিক প্রাকৃতিক উপায়ে নষ্ট হয়। তা ছাড়া, মাছেরা নিজস্ব কোনও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ধাতুগুলি সয়ে নিচ্ছে।’’ তবে অনুলিপি এ-ও বলছেন, চর্মনগরী থেকে যে দূষিত বর্জ্য জলে মিশছে, সেই প্রমাণও গবেষণায় উঠে এসেছে।
ই এম বাইপাসের পূর্ব প্রান্তের এই বিস্তীর্ণ জলাভূমি কলকাতার কাছে প্রকৃতির দান। নিকাশি ব্যবস্থায় এর ভূমিকা অপরিসীম বলেই পরিবেশবিদেরা মনে করেন। তাঁরা জানান, এই জলাভূমিতে প্রাকৃতিক ভাবে নিকাশি শোধন হয়। পরিবেশগত গুরুত্ব বিচার করে ‘রামসর’-এর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের তালিকায় এর ঠাঁই হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই জলাভূমির দূষণ এবং নাগরিকদের উপরে তার প্রভাব খতিয়ে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পরিবেশবিদেরা।
যদিও পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত প্রশ্ন তুলছেন ওই জলাভূমির অস্তিত্বের সঙ্কট নিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রকৃতির দানকে তিলে তিলে মেরে ফেলা হচ্ছে। এই জলাভূমি আদৌ থাকবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।’’ তাঁর অভিযোগ, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি দখল করে নানা রকম নির্মাণ হচ্ছে। কমে যাচ্ছে জলার পরিমাণ। প্রশাসন সব দেখেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পরিবেশ দফতরের এক কর্তার অবশ্য বক্তব্য, জলাভূমি দখল করে কোনও নির্মাণের অভিযোগ এলেই যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy