Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পচা খাবার নিয়ে চার্জশিট দেবে ইবি

এ সব যেখানে পাওয়া গিয়েছিল, দমদমের মতিঝিল রোডের সেই রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আজ, বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর আদালতে রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি)-র চার্জশিট পেশ করার কথা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

এক জনের উচ্ছিষ্ট মাংসের টুকরো ফেলে না দিয়ে সেটা পর দিন অন্যের পাতে দেওয়া হচ্ছে। কিছু খাবারে পড়ে রয়েছে মরা মাছি ও আরশোলা। রেফ্রিজারেটরে মজুত আনাজ ও উচ্ছিষ্ট মাংসে গজিয়েছে ছত্রাক। তা দেখা যাচ্ছে খালি চোখেই। এ সব যেখানে পাওয়া গিয়েছিল, দমদমের মতিঝিল রোডের সেই রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আজ, বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর আদালতে রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি)-র চার্জশিট পেশ করার কথা।

ওই রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে গত ১৯ মে অভিযান চালান ইবি ও দক্ষিণ দমদম পুরসভার কর্তারা।

বুধবার ইবি-র ডিজি বিজয় কুমার বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া লর্ড নামে ওই রেস্তোরাঁর মালিক বরুণ চৌধুরী, চিফ ম্যানেজার তরুণ ঘটক ও ম্যানেজার প্রদীপ রায়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার চার্জশিট পেশ করব।’’ এঁদের মধ্যে দুই ম্যানেজারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে রেস্তোরাঁর মালিক এখনও ফিনল্যান্ডে। অভিযানের কথা জেনেই তিনি দেশে ফিরছেন না বলে ইবি-র দাবি। ডিজি-র কথায়, ‘‘বরুণের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও রেড কর্নার নোটিস জারি় করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’ দক্ষিণ দমদম পুরসভাকে ওই রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করতেও বলেছে ইবি।

ইবি সূত্রের খবর, তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে ন্যূনতম শাস্তি তিন মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর কারাবাস। সেই সঙ্গে জরিমানা। তা ছাড়া, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, ভেজাল বা বিষাক্ত খাবার বিক্রি, জালিয়াতি ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগও চার্জশিটে থাকছে তিন জনের বিরুদ্ধে।

মামলা রুজু হওয়ার দু’মাসের মধ্যেই অভিযুক্ত রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার নজির সাম্প্রতিক কালে নেই বলে পুলিশ সূত্রের খবর। দক্ষিণ দমদমের ওই রেস্তোরাঁ এখন বন্ধ। ফের খোলার জন্য আবেদন করা হলেও ব্যারাকপুর আদালতে তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

ইবি-র বক্তব্য, ইদানীং ভেজাল, পচা, বাসি খাবার সাজিয়ে-গুছিয়ে বিক্রির প্রবণতা মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছে। আড়াই মাস পরে পুজো। সেই সময়ে কয়েক লক্ষ মানুষ কার্যত বাড়ির বাইরেই খান। সে ক্ষেত্রে ভেজাল বা বাসি-পচা খাবারের বিষক্রিয়া থেকে বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা। তাই, এই ধরনের কড়া ব্যবস্থা নিয়ে সমস্ত খাবারের দোকান, রেস্তোরাঁকে সতর্ক করা হচ্ছে বলে ইবি-র বক্তব্য।

‘‘প্রাথমিক ভাবে কলকাতার পাঁচটি নামী রেস্তোরাঁ সম্পর্কে আমরা নেতিবাচক খবর পেয়েছি। যে কোনও দিন আমরা হঠাৎ অভিযান চালাব,’’ বলছেন ইবি-র এক কর্তা।

দমদমের ওই রেস্তোরাঁর মুরগির ঠ্যাঙে কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া ও খোয়া ক্ষীরে ফর্মালিন থাকার কথা স্বাস্থ্য দফতরের পরীক্ষাগারে ধরা পড়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়, ওই খাবার অস্বাস্থ্যকর তো বটেই, বিপজ্জনকও।

তবে রেস্তোরাঁটি যেখান থেকে মুরগি ও খোয়া ক্ষীর কিনেছে, বিষ তো সেখানেও মিশতে পারে!

এক তদন্তকারী অফিসার অবশ্য জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘একটা-দুটো নয়, ওই রেস্তোরাঁর সব খাবারই অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন। বিভিন্ন জায়গা থেকে খাবারের কাঁচামাল এসেছে। তাই, উৎসকে দায়ী করা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE