Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
NRS Hospital

পরিবহ-নিগ্রহের পুলিশি তদন্তে ‘অসহযোগিতা’ চিকিৎসকদের

পরিবহ মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

পরিবহ মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৩২
Share: Save:

বারবার নোটিস পাঠিয়েও চিকিৎসকদের সাড়া মেলেনি। পুলিশের অভিযোগ, ‘সহযোগিতা’ করছেন না আক্রান্ত তথা মূল অভিযোগকারী চিকিৎসক নিজেই। তাই ঘটনার আট মাস পরেও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায় নিগ্রহ মামলার চার্জশিটই জমা করতে পারেনি পুলিশ। সম্প্রতি একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর জেরে চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ করায় সামনে এসেছে এই তথ্য। সূত্রের খবর, তদন্তের স্বার্থে চিকিৎসকদের সাহায্য পেতে এ বার আদালতের শরণাপন্ন হওয়ারও ভাবনাচিন্তা করছে কলকাতা পুলিশ।

গত জুনে এক বৃদ্ধের মৃত্যুতে কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসককে মারধর করার অভিযোগ ওঠে রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। তাঁদের ছোড়া ইটের আঘাতে পরিবহ মাথায় চোট পান বলে দাবি করা হয়। আহত চিকিৎসককে মল্লিকবাজারের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর প্রতিবাদে এবং চিকিৎসক নিগ্রহ বন্ধের দাবিতে রাজ্য জুড়ে শুরু হয় ডাক্তারদের কর্মবিরতি। হাসপাতালে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে হস্তক্ষেপ করতে হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত আট মাসে পরিবহকে বেশ কয়েক বার নোটিস পাঠানো হয়েছে। এই মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর বয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ে পরিবহ অসুস্থ থাকায় তাঁর সঙ্গে সে ভাবে কথা বলা যায়নি। তবে সুস্থ হয়ে পরিবহ চিকিৎসক হিসেবে কাজে যোগ দিলেও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেননি। পুলিশের দাবি, পরিবহকে পাঠানো একটিও নোটিসের উত্তর আসেনি। একই অবস্থা হয়েছে পরিবহ ছাড়াও অন্য চার জন জুনিয়র চিকিৎসককে পাঠানো নোটিসের ক্ষেত্রেও। নিজেদের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ওই চার জন দাবি করেছিলেন।

এনআরএস হাসপাতাল এন্টালি থানা এলাকার অন্তর্গত হওয়ায় মামলাটি আপাতত ওই থানায় রয়েছে। শনিবার এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘কোনও জুনিয়র চিকিৎসকের থেকেই সাড়া পাচ্ছি না। এতেই চার্জশিট দিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ নোটিসটি পাঠানো হয়েছে এই সপ্তাহেই। এ-ও বলেছি, তাঁদের যেখানে সুবিধা সেখানে গিয়েই কথা বলা হবে। তবু ওঁদের কী সমস্যা জানি না।’’

তদন্তে সাহায্য করতে সমস্যা কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি পরিবহর সঙ্গে। তিনি ছাড়া যে চার জনকে পুলিশ নোটিস পাঠিয়েছে তাঁদের এক জন এনআরএস হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক ইন্দ্রজিৎ মালিক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নই, এমন ব্যাপার নয়। গত কয়েক মাসে সত্যিই ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। এ সপ্তাহেই আমরা চার জন পুলিশের সঙ্গে কথা বলব ঠিক করেছি। তবে শুধু চিকিৎসকদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, ওই ঘটনার অন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও পুলিশ কথা বলুক।’’

আর পরিবহ? ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘পরিবহর এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে। ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলবে কি না, তা নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলিনি। যদি এ সব তুললে ওর মানসিক চাপ হয়!’’

জুনিয়র চিকিৎসকদের অনেকেই অবশ্য বলছেন, প্রথমে তাঁদের মনে হয়েছিল পরিবহ কোনও দিনই দেখতে পারবেন না। সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর মতো কাজও পারবেন না তিনি। সেই সময়ে এ-ও বলা হয়, ‘এক জন ভাল শল্য চিকিৎসককে হারাল দেশ।’ কিন্তু সুস্থ হয়ে মাস কয়েক আগেই কাজে যোগ দিয়েছেন পরিবহ। মানসিক ভাবে সুস্থ না থাকলে যা অসম্ভব। আদতে সেই সময়ে তৈরি ‘সেভ দ্য সেভিয়ার্স’ নামের সংগঠনটি এখন ভাঙার মুখে। আন্দোলনের যাঁরা মুখ ছিলেন অনেকেই চাকরি-সহ নানা কারণে সরে গিয়েছেন। যাঁরা আছেন, তাঁরাও আর থানা-পুলিশে ঢুকতে চান না।

‘সেভ দ্য সেভিয়ার্স’-এর অন্যতম সদস্য চিকিৎসক অনির্বাণ নাথ অবশ্য বললেন, ‘‘আমার ইন্টার্নশিপ সদ্য শেষ হল। সামনের মাস থেকে চিকিৎসক হিসেবে কাজে যোগ দিচ্ছি। অনেকেই এখন আর নেই। তবু আমি যাঁদের চিনি তাঁরা পুলিশকে সাহায্য করতেই চান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE