Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: ভক্তপ্রবর বলরাম বসু

তিনি কেন ভিতরে যাননি সে কথা জানতে চাইলে বলরাম বলেছিলেন, তিনি তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে বিরক্ত করতে চাননি। বলরাম ছিলেন সেই ক’জন ভক্তের এক জন, যাঁর জ্যোতিপূর্ণ স্নিগ্ধোজ্জ্বল মুখ চির-অঙ্কিত থাকত শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতিতে।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বলরাম বসু এক দিন দাঁড়িয়ে আছেন বিদ্যাসাগরের বাড়ির সামনে, শ্রীরামকৃষ্ণ এসেছেন সেখানে। ১৮৮২-র অগস্ট। বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনের পর দক্ষিণেশ্বর ফেরার জন্য ভক্তদের সঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে নেমে মূল ফটকের দিকে এগোচ্ছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। কৃষ্ণপক্ষ, চাঁদ ওঠেনি, ফটকের কাছে দেখা গেল বাঙালির পোশাকে এক গৌরবর্ণ শ্মশ্রূধারী পুরুষ, বয়স আন্দাজ ছত্রিশ-সাঁইত্রিশ, মাথায় শিখদের মতো সাদা পাগড়ি... শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখামাত্রই মাটিতে মাথা নুইয়ে প্রণাম করলেন, শ্রীরামকৃষ্ণ শুধোলেন ‘‘বলরাম, তুমি এত রাতে?’’ বলরাম স্মিতহাস্যে জানালেন ‘‘আমি অনেকক্ষণ এসেছি, এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’’ তিনি কেন ভিতরে যাননি সে কথা জানতে চাইলে বলরাম বলেছিলেন, তিনি তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে বিরক্ত করতে চাননি। বলরাম ছিলেন সেই ক’জন ভক্তের এক জন, যাঁর জ্যোতিপূর্ণ স্নিগ্ধোজ্জ্বল মুখ চির-অঙ্কিত থাকত শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতিতে। তিনি যে দিন কলকাতায় আসতেন সে দিন মধ্যাহ্ন-ভোজন বলরামের বাড়িতেই করতেন। বলতেন ‘‘ওদের পুরুষানুক্রমে ঠাকুর-সেবা ও অতিথি-ফকিরের সেবা... ওর অন্ন আমি খুব খেতে পারি, মুখে দিলেই যেন আপনা হতে নেমে যায়।’’ পরম বৈষ্ণব বলরাম বসুর জন্ম ১৮৪২-এর ডিসেম্বর মাসে। তাঁর পিতা রাধামোহন প্রায়শই বৃন্দাবনে থাকতেন, সাধনভজন করতেন। বলরামের অন্যতম ভাই, ওকালতি ছিল যাঁর পেশা, সেই হরিবল্লভ বসু কলকাতার রমাকান্ত বোস স্ট্রিটে যে ৫৭ নং বাড়িটি কিনেছিলেন, সেখানেই নিত্য সাধুসঙ্গ ও ভগবৎসেবায় নিয়োজিত থাকতেন বলরাম। শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যদের সেখানে ছিল অবাধ গতি। এখানেই স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৭-এর ১ মে রামকৃষ্ণ মিশনের গোড়াপত্তন করেন, তার আগেই অবশ্য প্রয়াত হয়েছেন বলরাম বসু, ১৮৯০-এর এপ্রিলে। সেই বাড়িই এখন ৭ গিরিশ অ্যাভিনিউয়ের রামকৃষ্ণ মঠ— শ্রীরামকৃষ্ণ-ভাবতীর্থ বলরাম মন্দির। সেখানেই এই ভক্তপ্রবরের জন্মের ১৭৫ বর্ষপূর্তি পালিত হবে সূত্রধর-এর সার্বিক সহযোগিতায়। ২১ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টেয়। বলরাম বসুর রামকৃষ্ণ-সাধনা ও রামকৃষ্ণ ভাবপরিবারে তাঁর স্থান নিয়ে দুই পর্যায়ে আলোচনা করবেন স্বামী সুপর্ণানন্দ স্বামী নিত্যমুক্তানন্দ স্বামী তত্ত্বসারানন্দ স্বরাজ মজুমদার। স্বাগত ভাষণে স্বামী অকল্মষানন্দ, সভাপতির ভাষণে স্বামী সুবীরানন্দ। আর স্বামী শুদ্ধিদানন্দ রচিত ভক্তপ্রবর বলরাম বসু গ্রন্থটি প্রকাশ করবে সূত্রধর।

সখারাম ১৫০

১৯০৪-৮, এই চার বছরে দেশের কথা বইটি দশ হাজার কপি বিক্রি হয়, ‘‘তাহার পর সরকার ইহার প্রচার বন্ধ করিয়া দেন।’’ এই বইতেই সখারাম গণেশ দেউস্কর ‘স্বরাজ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। দারিদ্রের কারণে প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হয়ে তাঁকে দেওঘরের একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ নিতে হয়। সেখানকার ম্যাজিস্ট্রেট হার্ডির নানা অন্যায় আচরণ নিয়ে ‘হিতবাদী’ পত্রিকার প্রতিবেদনের লেখক সখারাম— এমন সন্দেহে হার্ডি তাঁকে কর্মচ্যুত করলে তিনি কলকাতায় এসে ‘হিতবাদী’তে প্রুফপাঠক পদে যোগ দিয়ে পরে সহ-সম্পাদক হন। ১৯০৭-এ সুরাট কংগ্রেসের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লোকমান্য তিলকের বিরুদ্ধে লিখতে রাজি না হয়ে ইস্তফা দেন। তিলকের আদর্শেই সখারাম বাংলায় ‘শিবাজী উৎসব’ শুরু করেন। তাঁর লেখা মহামতি রানাডে, ঝাঁসীর রাজকুমার, বাজীরাও, আনন্দীবাঈ প্রভৃতি গ্রন্থ যেমন মহারাষ্ট্র ও বাংলার মধ্যে দেশাত্মবোধের সেতুবন্ধন, তেমন এক অবাঙালির বাংলা ভাষায় ব্যুৎপত্তিরও প্রমাণ। আদি নিবাস মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি হলেও সখারামের জন্ম বীরভূমের করোঁ গ্রামে, ১৮৬৯-এর ১৭ ডিসেম্বর। মৃত্যু ১৯১২-তে। আজ শুরু তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষের। ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে অশোকনগরে তারই উদ্‌যাপনে ‘অহর্নিশ’।

বিপ্লবী সুনীতি

১৯৩০ সাল। কুমিল্লায় চলছিল আইন অমান্য আন্দোলন। কিশোরীরাও গড়ে তোলেন ‘ছাত্রীসঙ্ঘ’। সম্পাদিকা শান্তি দাস, ক্যাপ্টেন সুনীতি চৌধুরী। দু’জনেই অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। লাঠি-ছোরায় দক্ষ দুই কিশোরী ময়নামতি পাহাড়ে গিয়ে রিভলভার চালানোও অভ্যাস করলেন। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৩১, দু’জনে চাদর গায়ে হাজির হলেন ম্যাজিস্ট্রেটের বাংলোয়। স্মারকলিপি দেওয়ার অছিলায় ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সের ঘরে ঢুকে চাদরের ভিতর থেকে রিভলভার বার করে সোজা গুলি। স্টিভেন্স তৎক্ষণাৎ মারা যান। নাবালিকা বলে ফাঁসির বদলে ওঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। গাঁধীজির উদ্যোগে ১৯৩৯-এ কারামুক্ত হন তাঁরা। সুনীতি পরে ডাক্তারি পাশ করে চন্দননগর হাসপাতালে যুক্ত হন, তাঁর প্রয়াণ ১৯৮৮-তে (জন্ম ১৯১৭)। আজ, ১৭ ডিসেম্বর সন্ধে ৬টায় রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের শিবানন্দ হলে ‘বিপ্লবী সুনীতি: কাছে থেকে দেখা’ শীর্ষকে বলবেন তাঁর কন্যা ভারতী সেন, যিনি ইংরেজিতে মায়ের জীবনীও লিখেছেন। সঙ্গে চৌদ্দ বছরের সুনীতির ছবি, পুলিশের নথিতে।

বাঁড়ুজ্যেদের আড্ডা

তখন সময়টা ছিল অন্য রকম... কলকাতার বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবন সম্পৃক্ত হয়ে থাকত রাজনীতি, ভাষা, সাহিত্য, থিয়েটার, সিনেমা, এমনকী অনুবাদ নিয়েও নিত্য নতুন আড্ডায়। বন্ধুত্বের এই আড্ডাগুলো ছিল পরস্পরের পরিপূরক, ‘ওভারল্যাপ করত’, বলছিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। নব্বইয়ের দশকের পর থেকেই তাতে ভাটা... বাঙালির সেই বিস্মৃত ঐতিহ্যকে স্মৃতিধার্য করে তুলতেই থীমা বইঘরে ২২ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মার্ক্স থেকে সমকালীন ভারত, হালফিল সংস্কৃতির দিকদিগন্ত, নতুন বইয়ের জগৎ, অনুবাদের রাজনীতি ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে আড্ডা দেবেন শম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। সুমন্তর পূর্বপ্রকাশিত ভুতুড়ে মোলাকাৎ বইটি শম্পার অনুবাদ ও সুমন্তর দীর্ঘ সংযোজন-সহ থীমা প্রকাশ করবে সে সন্ধ্যায়— স্পুকি এনকাউন্টার্স: গসিপ অ্যান্ড ব্যান্টার উইথ মার্ক্স। শ্রোতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বা মত বিনিময়ে এই আসন্ন আলাপন-সন্ধ্যাটিকে ‘বাঁড়ুজ্যেদের আড্ডা’ বলাই যায়।

পঁচাত্তরে গণনাট্য

১৯৪৩-এ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে (সম্পাদক ছিলেন পি সি জোশী) সাংস্কৃতিক নবচেতনার আহ্বান স্পন্দিত হয়েছিল ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা ও পথচলার মধ্যে দিয়ে। অনেক স্বপ্ন, আশাভঙ্গ, দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝে গণনাট্য’র চলন ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে। ১৯৫৭-৫৮’র দিল্লি সম্মেলনের পরে কার্যত গণনাট্য সঙ্ঘের সর্বভারতীয় চেহারা বিলুপ্ত হয়। এর পর এল কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙন। তবু আজও এ দেশের ধর্মীয় উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে রুখতে প্রতিরোধের সংস্কৃতি পালন করে চলেছে গণনাট্য সঙ্ঘ। পঁচাত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে দু’দিন ব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে গণনাট্য সঙ্ঘ কলকাতা জেলা কমিটি। সুজাতা সদনে ২১-২২ ডিসেম্বর। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, সলিল চৌধুরী, বিনয় রায় প্রমুখের গণনাট্যের গান গাওয়ার সঙ্গে অভিনীত হবে ব্রেখটের ‘ফিয়ার অ্যান্ড মিজ়ারি অব থার্ড রাইখ’, প্রযোজনায় স্পন্দন, নির্দেশনায় সমুদ্র গুহ।

বঙ্গমহিলা

‘‘চোরবাগান-বালিকা-বিদ্যালয় তাঁহার দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত, এবং তাঁহারই যত্নে উহা এক্ষণে একটী উৎকৃষ্ট বিদ্যালয় হইয়া উঠিয়াছে।’’ ‘ফার্স্ট বুক’-খ্যাত প্যারীচরণ সরকারের (১৮২৩-৭৫) প্রয়াণের পর লিখেছিল ‘বঙ্গমহিলা’ পত্রিকা। ১৮৬৮-তে চোরবাগানে নিজের বাড়িতে মেয়েদের জন্য স্কুল তৈরি করলেন প্যারীচরণ, ১৮৭৫-এ শুরু হল ‘বঙ্গমহিলা’— কোনও বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত মেয়েদের জন্য প্রথম পত্রিকা। মেয়েদের সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে এ ছিল খুবই সদর্থক প্রয়াস। বর্তমান প্যারীচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সার্ধশতবর্ষ উদ্‌যাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান ২৩ ডিসেম্বর বিকেল ৪টেয় স্কুল প্রাঙ্গণে। প্রকাশিত হবে দুর্লভ ‘বঙ্গমহিলা’র সামগ্রিক প্রতিলিপি সংস্করণ (পরি: পুস্তক বিপণি), প্রধান শিক্ষিকা মণিমেখলা মাইতির ভূমিকা-সহ।

লাদাখ-চিত্র

আইসিসিআর-এর বেঙ্গল গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সন্দীপন মুখোপাধ্যায়ের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘অন ব্রোকেন ট্রেলস’। বিষয় লাদাখের নুব্রা উপত্যকার ভূপ্রকৃতি এবং মানুষ। ২২ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় উদ্বোধন— একই সঙ্গে প্রকাশিত হবে সন্দীপনের বই ‘অন ব্রোকেন ট্রেলস’। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ফসল এই বইয়ের লেখা-ছবিতে ধরা পড়েছে নুব্রার ইতিহাস, ভূগোল, ধর্ম, সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানা দিক। প্রদর্শনী চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত (৩-৮টা)।

ভূমানন্দ

‘‘তাহাকে কি শিখাইয়াছি বলিতে পারি না, তবে তাহার কাছে শিখিয়াছি অনেক’’, বলেছিলেন ইংরেজির খ্যাতকীর্তি অধ্যাপক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত। লিখেছিলেন ‘সদানন্দ চক্রবর্তী: টিচার অ্যান্ড স্কলার’ নামে বইও। শঙ্খ ঘোষ ‘এখন সব অলীক’ বইয়ে তাঁর এই শিক্ষকের স্মৃতিচারণ করেছেন। শিক্ষক-ছাত্র-সহকর্মী সকলের স্মৃতিতেই তাঁর মেধা, পাণ্ডিত্য ও মূল্যবোধ উজ্জ্বল। ১৯১৮ সালের ৯ অগস্ট ফরিদপুরের কাছে চলন্ত ট্রেনে জন্ম সদানন্দ চক্রবর্তীর। ইংরেজির অধ্যাপনা বিভিন্ন কলেজে, অবসর নেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শ্রীসীতারামদাস ওঙ্কারনাথ তাঁকে ‘ভূমানন্দ’ অভিধা দেন। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ২২ ডিসেম্বর রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের বিবেকানন্দ হলে ইনস্টিটিউট ও অখিল ভারত জয়গুরু সম্প্রদায়ের আয়োজনে বিকেল সাড়ে ৫টায় স্মারক বক্তৃতা দেবেন দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী, বিষয়: কবির্মনীষী: দ্য পোয়েটিক্স অ্যান্ড মেটাফিজ়িক্স অব ‘আওয়ার মাস্টার’।

বিস্মৃত লেখক

গত শতকের পঞ্চাশ থেকে আশির দশক বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যকে অনুবাদ-ভাবানুবাদ, মৌলিক গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে কতটা সমৃদ্ধ করেছিলেন সুধীন্দ্রনাথ রাহা (১৮৯৬-১৯৮৬), তা সেই প্রজন্মের বাইরে খুব কেউ মনে রাখেননি। ছোটদের জন্য তাঁর লেখা মূলত প্রকাশিত হয়েছিল দেব সাহিত্য কুটীর থেকে, এ ছাড়া লিখেছেন শরৎ সাহিত্য ভবন ও সুনির্মল সাহিত্য মন্দির প্রকাশিত বইয়ে। শুকতারায় ‘সব্যসাচী’ ছদ্মনামে চার দশক লিখেছেন টারজ়ানের অ্যাডভেঞ্চার। ‘শ্রীবৈজ্ঞানিক’ ছদ্মনামে লিখেছেন বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প। আর স্বনামে অনুবাদ গল্পের তো কথাই নেই। এ বার তাঁর যাবতীয় অলৌকিক গল্প দুই মলাটে— ‘ভয় সমগ্র’ (বুকফার্ম, সম্পা: ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়)। ২২ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ৫টায় রিড বেঙ্গলি বুকস্টোরে বইপ্রকাশ, সঙ্গে তাঁর পরিবারের স্মৃতিচারণ।

প্রবাসে বঙ্গসাহিত্য

‘‘এই প্রবাসে বঙ্গসাহিত্যের যে বিশেষ প্রতিষ্ঠানের সূত্রপাত হল তার প্রধান আকাঙ্ক্ষাটি কী। তা হচ্ছে এই যে, বঙ্গ সাহিত্যের ফল যেন ভারতবর্ষের অন্যান্য সকল প্রদেশের হস্তে সহজে নিবেদন করে দেওয়া যেতে পারে।...’’— রবীন্দ্রনাথ এই সভাপতির অভিভাষণ দেন বারাণসীর ‘উত্তর-ভারতীয়-বঙ্গ-সাহিত্য-সম্মিলন’-এর প্রথম অধিবেশনে, ১৯২৩-এ। পরে ‘প্রবাসী-বঙ্গ-সাহিত্য-সম্মিলন’, আর ১৯৫৩ থেকে এর নাম ‘নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন’। সম্মেলনের সভাপতির অভিভাষণগুলি সঙ্কলন করেছেন অমরনাথ করণ। সভাপতির অভিভাষণ (লালমাটি) প্রকাশ পাবে সম্মেলনের ৯০তম অধিবেশনে, ২৩-২৫ ডিসেম্বর রাজারহাটে ভগিনী নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।

পটশিল্পী

ছবি: দীপঙ্কর ঘোষ

বিষ্ণুপুরে মল্ল রাজপরিবারে ‘মৃন্ময়ী’ দেবীর নিয়মিত পুজোর সঙ্গে দুর্গাপুজোর সময় পুজো হয় তিনটি ঠাকুরানি পটের। আর গোপনে পূজিতা হন দেবী খচ্চরবাহিনী, তা-ও পটে। একই ভাবে, বাঁকুড়া জেলারই জামকুড়িতে মল্ল রাজপরিবারের শাখায় নিত্যপুজো হয় ‘রাজরাজেশ্বরী’ রূপে দুর্গার। সেখানেও আছে পটের পুজো। তিন ঠাকুরানি ছাড়াও নবমী তিথির গভীর রাতে খচ্চরবাহিনী মহামারি পটপুজো হয় গোপনে। সে পট আঁকতে শিল্পীদের নানা আশঙ্কা, দ্বিধা। তবু জীর্ণ সেই পট বদলে নতুন করে তৈরিতে সাহস করে এগিয়ে এলেন শিল্পী পরিবারের গৃহবধূ কৃপাময়ী কর্মকার। জামকুড়ির তিনটি ঠাকুরানি পট অবশ্য আঠারো বছর ধরে তিনিই আঁকছেন। পরম্পরাগত অনুশীলন ও শিক্ষা শ্বশুর নিতাই কর্মকারের কাছে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র এলাকার বনবীরসিংহ গ্রামের এই মহিলাশিল্পী তিনটি দুর্গাপট ছাড়া নিজের গ্রামের কালীপুজোয় হরহরি পট ও অন্য দুর্গাপটও তৈরি করেন প্রতি বছর। পূজার্চনাকেন্দ্রিক পট ছাড়াও অন্য বিষয় ভাবনায় বছর কয়েক ধরে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আঁকছেন শ্রীরাধার বারোমাস্যা, দশাবতার, রাসলীলা, সত্যপিরের জন্মকাহিনি, নবনারীকুঞ্জর ইত্যাদি নানা পট। স্বামী গোপাল কর্মকার এই শিল্পধারায় ওয়াকিবহাল হলেও পেশা ভিন্ন। তাই আদি মল্লভূমের বিষ্ণুপুরের পটচিত্রধারার বাইরে স্বতন্ত্র রূপ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বিয়াল্লিশ বছরের কৃপাময়ী। দিল্লি, মহীশূর, ভুবনেশ্বরের প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কলকাতায় এলেন এই প্রথম। ক্রাফ্‌টস কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের সুবর্ণজয়ন্তীতে কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটির গ্যালারিতে পট-বিষয়ক প্রদর্শন-কর্মশালায়। বাংলার পটের দুর্গার শিল্পবৈশিষ্ট্য আর বিষয়ভিত্তি প্রসঙ্গে পটের কাঠামো, প্রাকৃতিক রং দেখিয়ে নিজের শিল্পসৃজন নিয়ে মতবিনিময়ও করলেন স্বচ্ছন্দে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE