Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Covid

দেড় লক্ষ কেজি কোভিড-বর্জ্য গেল কোথায়, উত্তর নেই

প্রশাসন সূত্রের খবর, কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং তা নষ্টের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে গত জুলাইয়ে একটি কমিটি তৈরি করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

বিপজ্জনক: রেস কোর্সের ধারে পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত পিপিই। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বিপজ্জনক: রেস কোর্সের ধারে পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত পিপিই। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০১:০৬
Share: Save:

ন্যূনতম প্রায় দেড় লক্ষ কিলোগ্রাম। আর সর্বাধিক ধরলে প্রায় দু’লক্ষ ৬৩ হাজার কিলোগ্রাম! সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, শহরের এই বিপুল পরিমাণ কোভিড-বর্জ্য কোথায় গেল, সেগুলির কী হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। এমনকি কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং তা নষ্টের জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে যে কমিটি গড়া হয়েছিল, তারাও বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে।

এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কেন?

প্রশাসন সূত্রের খবর, কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং তা নষ্টের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে গত জুলাইয়ে একটি কমিটি তৈরি করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে কোভিড বর্জ্যের পরিস্থিতি দেখেছিল ওই কমিটি। পাশাপাশি, কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহে রাজ্যে যে ছ’টি ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটিজ়’ (সিবিডব্লিউটিএফ) কাজ করছে, তাদের সঙ্গেও কথা বলেছিল তারা। তখনই জানা যায়, হোম কোয়রান্টিনে থাকা রোগীদের কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব কলকাতা পুরসভা দিয়েছিল একটি সিবিডব্লিউটিএফ-কে। ঠিক হয়েছিল, এই কাজের জন্য বাড়িপিছু অথবা ট্রিপপিছু ৫০০ টাকা নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট সিবিডব্লিউটিএফ।

আরও পড়ুন: এটিএম লুট রুখতে বাইরেও ক্যামেরা লাগানোর পরামর্শ

কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের গড়ে দেওয়া কমিটিকে সংশ্লিষ্ট সিবিডব্লিউটিএফ জানিয়েছি‌ল, হোম কোয়রান্টিনে থাকা রোগীদের অন্তত ৫০ শতাংশই টাকা দিতে অস্বীকার করছেন। অথচ তথ্য বলছে, আক্রান্তপিছু দৈনিক কোভিড-বর্জ্যের পরিমাণ ৩০০-৫০০ গ্রাম। অন্য দিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু জুলাই মাসেই হোম কোয়রান্টিনে থাকা রোগীর গড় সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। এর অর্ধেকও যদি কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে টাকা দিতে অস্বীকার করেন, তা হলে পড়ে থাকা বর্জ্যের মোট পরিমাণ হওয়ার কথা প্রায় দেড় লক্ষ কিলোগ্রাম। আর বর্জ্যের পরিমাণ মাথাপিছু দৈনিক ৫০০ গ্রাম ধরলে সেই পরিমাণ আরও বেশি! পুরসভার অবশ্য দাবি, কোভিড-বর্জ্য ফেলার জন্য তারা মাঝ-অগস্ট থেকেই ওয়ার্ডপিছু ১০০টি করে হলুদ বিন সরবরাহ করেছে।

বিপদের বর্জ্য

• জুলাইয়ে শহরে হোম কোয়রান্টিনে: গড়ে প্রায় ৩৫০০০ রোগী
•কোভিড-বর্জ্যের জন্য টাকা দিতে চাননি: গড়ে প্রায়
১৭০০০ রোগী
•মাথাপিছু দৈনিক কোভিড-বর্জ্য: ৩০০-৫০০ গ্রাম
• মাসে রোগীপিছু কোভিড-বর্জ্য: ৯.৩-১৫.৫ কেজি
• গড়ে ১৭০০০ রোগীর বর্জ্য: প্রায় ১ লক্ষ ৫৮ হাজার-২ লক্ষ ৬৩ হাজার কেজি

কিন্তু পর্ষদ গঠিত কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘ধরে নেওয়া হল, অগস্টের পর থেকে হোম কোয়রান্টিনে থাকা সকলে হলুদ বিনেই কোভিড-বর্জ্য ফেলেছেন। কিন্তু তার আগে হোম কোয়রান্টিনে থাকা সংক্রমিতদের অর্ধেক সংখ্যকই যে বর্জ্য তোলার জন্য টাকা দিতে চাননি, সেই বর্জ্য গেল কোথায়?’’ কমিটির আর এক সদস্য বলেন, ‘‘হয় ওই বিপুল পরিমাণ কোভিড-বর্জ্য রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে অথবা অন্য বর্জ্যের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখা‌ন থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে কে বলতে পারবেন? কোভিড-বর্জ্য থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকলে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এ নিয়ে আলাদা নির্দেশিকাই জারি করত না।’’

যদিও কলকাতা পুর এলাকায় কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা সিবিডব্লিউটিএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রমাকান্ত বর্মণ বলেন, ‘‘হলুদ বিন যত দিন বসানো হয়নি, তত দিন কোয়রান্টিনে থাকা বহু রোগী টাকা দিতে অস্বীকার করতেন। তার পরে সেই বর্জ্য রাস্তায় বা অন্যত্র ফেলে দিতেন। বাধ্য হয়ে আমরাই তা সংগ্রহ করতাম। তবে এখন আর সেই সমস্যা নেই।’’ কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘হোম কোয়রান্টিনে থাকা রোগীরা টাকা দিতে চাইছেন না, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। কিন্তু অধিকাংশ রোগী সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে কোভিড-বর্জ্য ফেলছেন, সেই অভিযোগ পেয়েছি।’’

আরও পড়ুন: ভুয়ো পরিচয়ে সিম সক্রিয় করে প্রতারণা শহরে

পর্ষদ গঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নব দত্ত বলেন, ‘‘পড়ে থাকা কোভিড-বর্জ্য যাচ্ছে কোথায়, সেগুলি কোথায় ফেলা হচ্ছে, তার প্রক্রিয়াকরণ ঠিক মতো হচ্ছে কি না— সেই সংক্রান্ত তথ্যাবলী রাজ্য সরকারের তরফে অবিলম্বে প্রকাশ্যে আনা দরকার। কারণ এর সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার বিষয়টি জড়িত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Covid Waste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE