Advertisement
০১ মে ২০২৪

মৃত্যু হল অ্যাসিড ‘খাওয়া’ বধূর

মৃতার মা অনিমা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এতটাই মত্ত ছিল যে দাঁড়াতে পারছিল না। আবার ঘরে ঢুকে নিজেই গলায় অ্যাসিড ঢেলে নিল

হাসপাতালে তানিয়া সামন্ত। তখনও চলছে লড়াই। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে তানিয়া সামন্ত। তখনও চলছে লড়াই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৬
Share: Save:

চার দিনের লড়াই শেষে বুধবার মৃত্যু হল সিঁথির ‘নির্যাতিতা’ বধূ তানিয়া সামন্তের (৩০)।
অ্যাসিড ‘খাওয়া’র পরে রবিবার গভীর রাতে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তানিয়াকে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এ দিন বিকেলে মৃত্যু হয় তাঁর। মেয়ের এই পরিণতির জন্য তাঁর শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী এবং ননদকে দায়ী করে ইতিমধ্যে সিঁথি থানায় অভিযোগ করেছেন মৃতার বাবা ইন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন ইন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘ওরা পরিকল্পনা করে আমার মেয়েকে জোর করে অ্যাসিড খাইয়েছে।’’ মৃতার স্বামী পৃথ্বীজিতের জেঠিমা চিত্রা সামন্ত এবং বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক যা জানিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই এই অভিযোগ দায়ের করেছেন ইন্দ্রনাথ। এখনও কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না, প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার পরিজনেরা। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
এ দিন মৃতার জেঠিমা জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরে তানিয়ার শাশুড়ি শ্যামলী সামন্ত তাঁকে ফোন করে ৮সি, দমদম রোডের ফ্ল্যাটে আসতে বলেন। দশ মিনিটের মাথায় আবার তানিয়ার ননদ রঞ্জিতা ফোন করে চিত্রাদেবীকে তাঁদের বাড়ি আসার জন্য তাড়া দেন। চিত্রার দাবি, তিনি যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন তখন হন্তদন্ত হয়ে পৃথ্বীজিৎ নীচে নেমে যান। ফ্ল্যাটের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন তানিয়ার শ্বশুর তপন সামন্ত। শাশুড়ি রঞ্জিতার মেয়েকে কোলে নিয়ে রান্নাঘরের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তানিয়া মেঝেয় যে ভাবে পড়েছিলেন, মোবাইলে তার ভিডিয়ো করছিলেন ননদ! চিত্রার কথায়, ‘‘আমি দেখি, মেঝের উপরে উপুড় হয়ে পড়ে তানিয়া। চুল সরাতেই দেখি বমির মধ্যে মেয়েটা ও ভাবে পড়ে। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। কী হয়েছে জানতে চাওয়ায় ওরা বলল, অ্যাসিড খেয়েছে।’’ চিত্রাদেবীর কথায়, ‘‘আমাকে যখন ফোন করেছে তখন ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এত ক্ষণ মেয়েটাকে ফেলে রাখল কেন? আগে তো হাসপাতালে নিয়ে যাবে!’’
পুলিশ সূত্রের খবর, তানিয়ার স্বামীর দাবি, মত্ত অবস্থায় স্ত্রী নিজে অ্যাসিড খেয়েছেন। এ দিন মৃতার মেসোমশাই জানান, পৃথ্বীজিতের দাবি অনুযায়ী, তানিয়া বাইরে থেকে ঘরের দরজা আটকে মত্ত অবস্থায় দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর কোনও হুঁশ ছিল না। শ্বশুর তপনবাবু বাইরে থেকে এসে দরজা খুলে তানিয়াকে ঘরে ঢোকান। ঘরে ঢুকেই অ্যাসিডের বোতল নিয়ে তিনি গলায় ঢালেন। মৃতার মা অনিমা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এতটাই মত্ত ছিল যে দাঁড়াতে পারছিল না। আবার ঘরে ঢুকে নিজেই গলায় অ্যাসিড ঢেলে নিল! বাকিদের তো হুঁশ ছিল। তাঁরা কেউ আটকালেন না? ছ’বছর ধরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে ওরা। মৃত্যুর পরেও মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।’’ বাবা ইন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘ওরা যদি দোষী না হয়, তা হলে আমার মেয়েকে হাসপাতালে ফেলে পালাল কেন? সকলেই তো পালিয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, তানিয়ার শারীরিক অবস্থার কারণে তাঁর বয়ান রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁকে যে মারধর করা হয়েছে, সে কথা তানিয়া চিকিৎসকদের বলেছেন। তা ছাড়া যে পরিমাণ অ্যাসিডের কারণে তানিয়ার খাদ্যনালী-সহ শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটাও বিবেচনাধীন। আত্মহত্যা করতে চাইলেও এক জনের পক্ষে এতখানি অ্যাসিড গলায় ঢালা সম্ভব কি না, প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার বয়ান যেহেতু নথিভুক্ত হয়নি, তাই ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ও তথ্যপ্রমাণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তদন্তপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Crime Domestic Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE