E-Paper

চোর, খুনি ধরতেও গাড়ির অপেক্ষা! মহিলা থানা নামেই

যাবেন কী করে? ভরসা তখন অটো বা বাস। খুব বেশি হলে ট্যাক্সি। ওসি ডিউটি করতে যাচ্ছেন অটো বা ট্যাক্সিতে! কলকাতার কোনও সাধারণ থানার ক্ষেত্রে এ ঘটনা ভাবা যায়? প্রশ্ন বাহিনীর অন্দরে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৮

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

ধর্ষণের ঘটনায় ফেরার থাকা অভিযুক্তের খোঁজ মিলেছে বহু চেষ্টার পরে। এই মুহূর্তে সে ঠিক কোথায় রয়েছে, সেই তথ্যও থানায় চলে এসেছে। কিন্তু সব জেনেও অভিযুক্তকে ধরতে যেতে পারছে না পুলিশ। কারণ, থানায় কোনও গাড়িই নেই। সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে শুধু ওসি-র (অফিসার ইন-চার্জ) জন্য বরাদ্দ একটি গাড়ি। কখনও গাড়ির প্রয়োজন হলে জানাতে বলা হয়েছে ঊর্ধ্বতন পুলিশকর্তাকে। সেই কর্তা অনুমতি দিলে তার পরে দেখা হবে পাঠানোর মতো গাড়ি কোথাও আছে কিনা! থাকলে হাতের কাজ সেরে সেই গাড়ি পৌঁছবে থানায়। তার পরে সেটি নিয়ে বেরোনো যাবে অভিযুক্তকে ধরতে!

কিন্তু তত ক্ষণ কি অপরাধী এক জায়গায় বসে থাকবে? পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে নিজের জন্য বরাদ্দ গাড়িটি নিয়ে বেরোতে বলেছিলেন এক মহিলা থানার ওসি। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফোন আসে তাঁর কাছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে জানিয়ে তাঁকে দ্রুত এক জায়গায় যেতে বলা হয় ঊর্ধ্বতন কর্তাদের তরফে। হেলমেট, লাঠি-সহ সমস্ত কিছু নিয়ে তৈরি সেই ইনস্পেক্টর। কিন্তু যাবেন কী করে? ভরসা তখন অটো বা বাস। খুব বেশি হলে ট্যাক্সি। ওসি ডিউটি করতে যাচ্ছেন অটো বা ট্যাক্সিতে! কলকাতার কোনও সাধারণ থানার ক্ষেত্রে এ ঘটনা ভাবা যায়? প্রশ্ন বাহিনীর অন্দরে।

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কলকাতা পুলিশ এলাকার মহিলা থানাগুলিতে দিনের পর দিন এ ভাবেই কাজ চলছে বলে খবর। কলকাতা পুলিশের ১০টি ডিভিশনের মধ্যে ভাঙড় ছাড়া সব ক’টিতে একটি করে মোট ন’টি মহিলা থানা তৈরি করা হলেও সেগুলির পরিকাঠামো নিয়ে তেমন কোনও ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে বাহিনীর মহিলা পুলিশকর্মীদের মধ্যে। তাঁদের দাবি, চোর, খুনি ধরতে যাওয়ার গাড়ি তো নেই-ই, তার উপরে মহিলা থানার জন্য মাসে বরাদ্দ হচ্ছে সাধারণ থানার চেয়ে অনেক কম টাকা। যা জরুরি জিনিসপত্র কিনতে বা বড় কর্তারা এলে চা-শিঙাড়া আনাতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে! কোনও মহিলা থানায় কাজ চালানোর জন্য মাসে দেওয়া হচ্ছে মাত্র পাঁচ হাজার, কোথাও আবার আরও কম টাকা। মহিলা থানার জন্য কোথাওই কোনও অতিরিক্ত ওসি নেই। ফলে, কাজ চলছে এক জন ইনস্পেক্টরের ভরসাতেই। তিনি ছুটিতে গেলে বা অন্য কোনও কারণে আসতে না পারলে কাজ চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

মধ্য কলকাতার একটি মহিলা থানার পুলিশকর্মী আবার বললেন, ‘‘মহিলা থানাগুলিকে মহিলা সংক্রান্ত বিষয়গুলিই শুধু দেওয়া হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রেই অন্য থানার মহিলা সংক্রান্ত মামলা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে তদন্তের জন্য। নতুন অভিযোগ এলে আগে ডেপুটি কমিশনারের অফিসে জানিয়ে কাজ করতে বলা হচ্ছে। মহিলা সংক্রান্ত বিষয় না হলে পাশের থানায় পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসছে।’’ সেখানকারই আর এক মহিলা পুলিশকর্মীর ক্ষোভ, ‘‘শুধু মহিলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তদন্ত করার জন্য তো কেউ থানার কাজে আসেন না!’’

পূর্ব কলকাতার একটি মহিলা থানার অফিসারের দাবি, কাউকে ধরতে গেলে লোকবলের জন্যও নির্ভর করতে হয় পাশের থানার দাক্ষিণ্যের উপরে। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলা থানায় কোনও পুরুষ পুলিশকর্মী থাকেন না। ফলে, কাউকে ধরতে গেলে পাশের থানা থেকে লোক দিতে বলতে হয়। এ জন্য মহিলা থানার অভিযানে বেরোনো কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’ দক্ষিণ শহরতলির একটি মহিলা থানার অফিসারের মন্তব্য, ‘‘লোক পেতে রিকুইজ়িশন দিতে হয়। কবে সেই লোক আসবেন, তার জন্য তো অপরাধী বসে থাকবে না! তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার ডেপুটি কমিশনারকে ফোন করে লোক পাঠাতে অনুরোধ করতে হয়। কিন্তু ওই অফিসার হয়তো ব্যস্ত রইলেন, ফোনে পাওয়া গেল না বা হয়তো সাধারণ থানার অফিসার জানিয়ে দিলেন, তাঁর কাছেও লোকবল কম। তখন মহিলা থানার কাজ আটকেই থাকে!’’

কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। লালবাজারের অন্য এক পুলিশকর্তার দাবি, ‘‘বাহিনীর লোকবল, পরিস্থিতি বুঝেই কাজ ভাগ করা হয়। মহিলা থানার পরিকাঠামো নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। দ্রুত বেশ কিছু কাজ হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Women Police Kolkata Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy