Advertisement
E-Paper

ক্ষমতার স্বরকে প্রশ্ন করে

‘‘ঘুম ভাঙতে চোখ মেলল। চোখ মেলে শুয়ে থাকল। আবার চোখ বুজল। আবার ঘুমোতে লাগল। আবার ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙতে চোখ মেলল। চোখ মেলে শুয়ে থাকল। শুয়ে থেকে উঠে পড়ল। উঠে পড়ে চোখ রগড়াল।...’’— এ রকমই ছাঁচভাঙা গল্প লিখে গিয়েছেন অমল চন্দ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১

গ্যোথে/ সাহিত্য পরিচয়
সোমা বসু
২০০.০০, আনন্দ পাবলিশার্স

জার্মানির রঙ্গমঞ্চে সব থেকে বেশি বার মঞ্চস্থ হয়েছে ইয়োহান ভল্ফগাং ভন গ্যোথের লেখা বিয়োগান্ত নাটক ‘ফাউস্ট’। দুটি পর্বে লেখা এই নাটক প্রায় তাঁর সারা জীবনের কাজ। ‘ফাউস্ট’-এর প্রথম পর্ব বাংলায় একাধিক বার অনূদিত হয়েছে। আবার গ্যোথের সব থেকে জনপ্রিয় গাথা ‘জাদুবিদ্যা শিক্ষানবিশ’ কারও কারও মতে আসলে ফরাসি বিপ্লবের ফলে জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি তাঁর সতর্কবাণী। আজও এটি জার্মানির স্কুলে স্কুলে পাঠ্য। ১৭৭৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল গ্যোথের ছোট্ট পত্রোপন্যাস ‘দি লাইডেন দেস য়ুয়েনগন ভেয়ার্থার’। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এক তরুণ সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছে, তারই লেখা বেশ কিছু চিঠি যেন জনৈক সম্পাদক প্রকাশ করছেন। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ‘ভেয়ার্থার’ সারা ইউরোপে এত জনপ্রিয়তা পায় যে প্রায় সব ক’টি ভাষাতেই এর অনুবাদ হয়। এমনকি ভেয়ার্থারের মতো পোশাক বাজারে চালু হয় আর ব্যর্থ প্রেমিকের ওই পোশাক পরে আত্মহত্যার এমনই হিড়িক পড়ে যায় যে বইটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। গ্যোথের বিশাল রচনাসম্ভার থেকে বেছে নিয়ে জনপ্রিয় কিছু ব্যালাডধর্মী কবিতা, নাটক, উপন্যাসের অংশের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করে পাঠকের সামনে পরিচিতি-সহ তুলে ধরেছেন সোমা বসু। জার্মান থেকে সরাসরি অনুবাদের ফলে মূল রচনার স্বাদ পাওয়া যাবে এই বইয়ে। আবার সে অনুবাদ আক্ষরিকও নয়, তাই পড়তে কোনও অসুবিধা হয় না। সব মিলিয়ে বিশ্বসাহিত্যের এক অনুপম সম্পদ হাতের নাগালে এনে দিয়েছেন অনুবাদক।

পোড়োজমির কবিতা
বিশ্বজিৎ রায়
২০০.০০, ঋত প্রকাশন

মণীন্দ্র গুপ্তের ‘গান্ধী মহারাজ’ কবিতার শেষ তিন পঙ্‌ক্তিতে যে আক্ষেপ ‘‘চৈতন্যের কাঁথার মতো বৃদ্ধবয়সের এই অম্লান চামড়াখানি/ ফল জল ব্রহ্মচর্য এবং চন্দ্রসূর্যের আশীর্বাদে তৈরি হয়েও/ কিন্তু বুলেটপ্রুফ হল না।’’— তা পাঠকের স্মৃতিতে ফিরিয়ে এনে বিশ্বজিৎ লিখছেন ‘‘মণীন্দ্র গান্ধীর ব্রহ্মচর্যকে এখানে অহিংসাধর্মের অবলম্বন হিসেবেই বুঝতে চাইছেন। পুরুষের যৌনতা রাষ্ট্রের মতোই আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে সময়ে-সময়ে... পুরুষমানুষের যৌনতার মধ্যে যে তীব্র হিংসা থাকে তা গান্ধী বরাবর খেয়াল করিয়ে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রযন্ত্র যে যুদ্ধের সময় ধর্ষণ করে বিপক্ষের নারী ও প্রকৃতিকে তা হিংসারই বহিঃপ্রকাশ।’’ এই কবিতা-আলোচনার বইটিতে বিভাগগুলির নাম: পোড়োজমি, ঝান্ডাবাজি, কবিতাযাপন। আর নিজের ‘লেখাগুলি রাজনৈতিক বলেই মনে করি’ এমন মতপ্রকাশের পর জানান লেখক: ‘‘গোলকায়নের ফলে যে পুঁজি ও প্রযুক্তির দাপট ক্রমব্যাপ্ত, ত্রিধাবিভক্ত বইটি তার বিরোধিতা করছে। ক্ষমতার স্বরকে একরকম ভাবে প্রশ্ন করা লেখাগুলির উদ্দেশ্য... ।’’ যেমন ‘জয়দেব বসুর কবিতা সম্বন্ধে দুটো-একটা কথা’-য় বিশ্বজিতের বিশ্লেষণ: ‘‘ক্ষমতার স্বরূপ যে কত জটিল ও আবহমান তা ধরা পড়েছিল ‘জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়’ বইটিতে।’’ সর্বোপরি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখাটিতে তাঁর মন্তব্য ‘‘মানুষকে ভালবাসার টানেই যে কমিউনিস্ট হওয়া, অন্ধ পার্টিলাইন মেনে চলার জন্য যে কমিউনিস্ট হওয়া নয়... ।’’

গল্পসংগ্রহ/ অমল চন্দ
সম্পাদক: সুদীপ বসু
২২৫.০০, ধানসিড়ি

‘‘ঘুম ভাঙতে চোখ মেলল। চোখ মেলে শুয়ে থাকল। আবার চোখ বুজল। আবার ঘুমোতে লাগল। আবার ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙতে চোখ মেলল। চোখ মেলে শুয়ে থাকল। শুয়ে থেকে উঠে পড়ল। উঠে পড়ে চোখ রগড়াল।...’’— এ রকমই ছাঁচভাঙা গল্প লিখে গিয়েছেন অমল চন্দ। তাঁর লেখাকে ঘিরে যথেষ্ট উন্মাদনা থাকলেও লেখার থেকে তাঁর কোনও গগনচুম্বী প্রত্যাশা ছিল না। তাই তিনি ‘লেখার আগে’ নিবন্ধে জানাচ্ছেন— ‘‘আমার গল্প সার্থক হবে এমন গ্যারান্টি দেওয়া মূর্খতা মাত্র, আমি যখন মানুষ তখন আমার মতো করে আমার কথা বললেই যথোচিত মানুষের কথা বলা হবে, আশাবাদ বা নৈরাশ্যবাদ বলে গল্পে কিছু থাকতে পারে না... লিখে আমি যা পাব সেটা আমি লেখার আগে পাচ্ছি এবং লেখার মাহেন্দ্রক্ষণে চরম ভাবে পেয়ে যাব। এর বাইরে কিছু পাওয়া না পাওয়া আমার হাতে নয়।’’ সঙ্কলক ও সম্পাদকের কথায়, বাংলা গদ্যরীতির কান ধরে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার বাজি ধরেছিলেন অমল চন্দ।

অমল চন্দের গল্পের বই সাকুল্যে দু’টি— ‘বারান্দা’ (১৯৬৯) আর ‘শান্ত পড়ে যাচ্ছে’ (১৯৭৯)। উপন্যাস তিনটি— ‘অভিযোগ’ (১৯৭২), ‘ফাজিল নগরী’ (১৯৮৬), এবং ‘ঘরে বাইরে বিনয়’ (১৯৯২)। তাঁকে নিয়ে আলোচনা, ১৯৬০-এর দশকের ‘শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন’-এর থেকে আলাদা করা যায় না। শাস্ত্রবিরোধিতার তুমুল সৈনিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন স্বল্পবাক আত্মগত নির্জন মানুষ। তাঁর সমস্ত লেখালিখি আত্মমুখীনতায় অবসিত। তাঁর চরিত্ররা কেউই রাজাউজির কেউকেটা নয়। তারা সমাজের সীমান্তপ্রদেশের বাসিন্দা প্যাঁচপয়জারহীন অবসন্ন নিরালম্ব মানুষ। তারা আদতে তিনিই।

Book Review Literature Book
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy