Advertisement
E-Paper

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি

১৭৭৮ সাল বাংলা হরফ বা অক্ষরের মুদ্রণে প্রথম গ্রন্থরূপের নিরিখে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিকাল। চার দশক পর ১৮১৮-তে প্রথম বাংলা সাময়িকপত্র ‘দিগ্‌দর্শন’ প্রকাশ, ওই বছরেই প্রথম সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশিত হয়।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০৮

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, খণ্ড ১-২
বিনয় ঘোষ
৪৫০.০০ প্রতি খণ্ড

দীপ প্রকাশন

১৯৫৭ সালে ‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’ প্রথম প্রকাশিত হয়। সেটি ছিল অখণ্ড সংস্করণ। প্রকাশের মাস তিনেক পরে সংস্কৃত কলেজের এক বিশিষ্ট পণ্ডিত বিনয় ঘোষকে বলেন, ‘‘বড্ড বেশি ‘ছোটলোকদের’ কথা বলেছেন, মানে বাগদি বাউরি হাড়ি ডোম সাঁওতাল, যেন সংস্কৃতিটা তাদের।... আরও একটা bias আপনার আছে। মুসলমান-প্রীতিটা আপনার অত্যধিক। সেটা কি ঠিক? মানে সংস্কৃতির দিক দিয়ে মুসলমানদের সম্বন্ধে অত কথা বলার দরকার কি?’’ ১৯৭৬ সালের নতুন সংস্করণের ভূমিকায় বিনয় ঘোষ এই গল্পটি উল্লেখ করে লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’ নামক গ্রন্থের লেখক মনে করেন যে ‘বঙ্গসংস্কৃতি’ মানে মোটেই ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি নয় এবং তার স্তরে স্তরে আদিজনগোষ্ঠীর এবং অনুচ্চবর্ণের সংস্কৃতি, বৌদ্ধ-জৈন সংস্কৃতির দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ নৃতত্ত্ব ও ইতিহাসের গভীর যোগসূত্রকে কাজে লাগিয়ে, ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫, টানা পাঁচ বছর জেলায় জেলায় অন্তত ছ’শো গ্রামে নিবিড় তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে বঙ্গসংস্কৃতির যে কাঠামো তৈরি করেন বিনয় ঘোষ, প্রথম প্রকাশের ছয় দশক, এমনকি পরিবর্ধিত সংস্করণের প্রথম খণ্ড প্রকাশের পর ৪৩ বছর পেরিয়েও তার গুরুত্ব আজও অটুট। অথচ এই সময়ে, বিশেষ করে গত তিন দশকে বাংলার ভূগোল বিপুল ভাবে বদলেছে। ‘‘নদী হারিয়ে গিয়েছে, সড়কপথ বেড়েছে অনেক, রেলপথ কিছুটা। নদীবাঁধ ধরে হেঁটে হেঁটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাবার দিন আর নেই। অনেক পালটে গিয়েছে সমাজচিত্র— বর্ণ আর বৃত্তি নির্ভর গঠন আজ বিরল। হারিয়ে গিয়েছে বহু উৎসব পার্বণ, ক্ষীণ হয়েছে লোকপরবের ধারা। বিনষ্ট হয়েছে বহু মন্দির মসজিদ উপাসনাস্থল।... শহর গিলেছে গ্রামকে বা নগর সংস্কৃতির মোহে আক্রান্ত হয়েছে গ্রামজীবন।... সেই বাংলা আর নেই।’’ লেখা হয়েছে আলোচ্য সংস্করণের সম্পাদকীয় মন্তব্যে। ঠিকই। কিন্তু এই বই তো সময়ের নিগড়ে বাঁধা কিছু তথ্যপঞ্জি মাত্র নয়। নয় পুরাকীর্তি বা অন্য কোনও সাংস্কৃতিক উপাদানের ধারাবাহিক বৃত্তান্ত। প্রত্যক্ষদৃষ্ট তথ্যের সঙ্গে আছে সমাজবিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ। তাই এর আকর্ষণ আজও অম্লান।

নতুন সংস্করণের জন্য ১৯৬০-৭৬ পর্বে বিনয় ঘোষ আবার নতুন করে বাংলার বিভিন্ন জেলায় পরিভ্রমণ করেন। পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত ‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৭৬-এ। ১৯৮০ সালে লেখক মাত্র ৬৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন, তাঁর বইয়ের চতুর্থ তথা শেষ খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৮৬-তে। এ বার বইটির সুমুদ্রিত পরিমার্জিত সংস্করণ খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে দু’টি খণ্ড প্রকাশিত। পূর্ববর্তী প্রচলিত সংস্করণের তুলনায় প্রকাশনা-মান উন্নত হয়েছে, পুরনো ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ছবি ও বিষয়ানুগ অলঙ্করণ। এমন আকরগ্রন্থের এমন সংস্করণ প্রয়োজন ছিল।

বাংলা লোকসংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস: সংবাদ-সাময়িকপত্রে, খণ্ড ১
পবিত্র চক্রবর্তী
৭৫০.০০
অক্ষর পাবলিকেশনস

১৭৭৮ সাল বাংলা হরফ বা অক্ষরের মুদ্রণে প্রথম গ্রন্থরূপের নিরিখে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিকাল। চার দশক পর ১৮১৮-তে প্রথম বাংলা সাময়িকপত্র ‘দিগ্‌দর্শন’ প্রকাশ, ওই বছরেই প্রথম সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশিত হয়। এই সব উদ্যোগে জ্ঞানচর্চার যে বিকাশলাভ তাতে বঙ্গজীবন ও সংস্কৃতির বিশেষ উজ্জীবন ঘটল। এই পটভূমিকে ভিত্তি করে পবিত্র চক্রবর্তী এক স্বতন্ত্র ও পরিশ্রমী গবেষণাকাজ করেছেন। লোকসংস্কৃতি চর্চার বিষয়বিন্যাসকে শ্রেণিবদ্ধ এই চর্চা-আলোচনায় এনেছেন। প্রবন্ধ, গ্রন্থ আলোচনা, সংবাদ প্রতিবেদন, ফিচার, চিঠিপত্র ইত্যাদির বহুবিধ ধারার তথ্য উঠে এসেছে। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিক যে প্রয়াস তা হাল আমলে হলেও, সেটি সুদীর্ঘকালের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই উন্মেষ পর্ব থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ১৮৮৩ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল অনুধ্যান মূলক প্রসারণ পর্ব। এই পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতী’ পত্রিকায় গ্রন্থ সমালোচনা করেছেন এবং লালবিহারী দে গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। পরবর্তী পর্বে ১৯৬০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত শিক্ষাগত শৃঙ্খলা নির্ভর সমৃদ্ধির মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের পাঠ্যক্রমে লোকসাহিত্যের অন্তর্ভুক্তি একটি উল্লেখ্য পদক্ষেপ। অজস্র তথ্য উল্লেখে যেমন জানা যায় উনিশ শতকের মেলা-উৎসবের কথা। আবার ১৯৭০ থেকে পরবর্তী ৪০ বছরে আনন্দবাজার পত্রিকায় লোকসংস্কৃতি বিষয়ক বহুবিচিত্র গ্রন্থ আলোচনার ধারা।

লোকসংস্কৃতির তথ্য ও তত্ত্ব পর্যালোচনায় এবং বিবর্তনের ধারা-বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধানে যে যুগবিভাগের প্রয়াস নেওয়া হয়, তা একাধারে শৃঙ্খলাবদ্ধ চর্চার অন্যতম দিক। এই প্রেক্ষিতে পবিত্র চক্রবর্তী লোককথা, উপকথা, নীতিকথা, রূপকথা, পুরাকাহিনি ও ব্রতকথা চর্চার ধারা জানিয়েছেন (বাক্ধর্মী বাংলা লোকসংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস, অমর ভারতী, ৫৯৫.০০)। বিষয়ের পরিচিতি উল্লেখে আলোচনায় বাংলা সংবাদ-সাময়িকপত্র, জেলা বিবরণী, জনগণনা এমনকি ইংরেজি পত্রিকারও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। লোকভাষা ও বাংলা গীতিকা চর্চার ইতিহাসও লেখকের একনিষ্ঠ প্রয়াসে নথিবদ্ধ হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy