Advertisement
E-Paper

গ্রামীণ ও শহুরে শিল্পের সহাবস্থানে বর্ণময়

সম্প্রতি আর্টস একর-এ অনুষ্ঠিত ‘আর্ট-হাট’ প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষ।চার দিকে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। দিগন্ত পর্যন্ত দৃষ্টি যায়। এই প্রান্তর ভেদ করে চলে গেছে পথ। কংক্রিটের চওড়া রাস্তা। সেখানে বিভিন্ন যানবাহন নিয়মিত চলাচল করে, যদিও তা শহরের মতো নিরবচ্ছিন্ন হয়নি এখনও। গ্রামের মুক্ত প্রান্তর ক্রমে শহরে উন্নীত হচ্ছে। আর কিছু দিন পরেই হয়তো প্রান্তর মুছে যাবে এখান থেকে।

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫০

চার দিকে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। দিগন্ত পর্যন্ত দৃষ্টি যায়। এই প্রান্তর ভেদ করে চলে গেছে পথ। কংক্রিটের চওড়া রাস্তা। সেখানে বিভিন্ন যানবাহন নিয়মিত চলাচল করে, যদিও তা শহরের মতো নিরবচ্ছিন্ন হয়নি এখনও। গ্রামের মুক্ত প্রান্তর ক্রমে শহরে উন্নীত হচ্ছে। আর কিছু দিন পরেই হয়তো প্রান্তর মুছে যাবে এখান থেকে।

নিউ টাউনের এ রকম এক জনবিরল মুক্ত পরিবেশে রাজপথের পাশে গড়ে উঠেছে আর্টস একর-এর বিপুল মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য। দৃশ্যকলার এই সংগ্রহালয় ও শিল্পের নানা প্রকল্প ও বহুবিধ কর্মকাণ্ডের এই কেন্দ্রটি প্রখ্যাত শিল্পী শুভাপ্রসন্ন-র দীর্ঘলালিত স্বপ্নের ফসল। ২০১৪-র ৬ মার্চ এর উদ্বোধন হয়েছিল। তার পর থেকে এর কর্মকাণ্ড নানা দিকে প্রসারিত হচ্ছে।

এখানে রয়েছে বাংলার আধুনিক চিত্রকলার বিরাট সংগ্রহালয়, চিত্রকলা রক্ষণাবেক্ষণের গবেষণাগার, আধুনিক প্রযুক্তির প্রেক্ষাগৃহ, শিল্পীদের নিয়মিত কাজ করার জন্য স্টুডিও ও ওয়র্কশপ, গ্যালারি রয়েছে – যেখানে নিয়মিত প্রদর্শনী হতে পারে, আছে অ্যাম্ফিথিয়েটার ও সভাকক্ষ, অতিথিদের থাকার জন্য উচ্চমানের আবাসকক্ষ ইত্যাদি আরও অনেক ব্যবস্থা। মূল অট্টালিকার চার পাশে অজস্র সুশোভিত শূণ্য পরিসর। শুধু দৃশ্যকলা নয়— চলচ্চিত্র, সঙ্গীত ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কলাচর্চার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এ রকম আন্তর্জাতিক মানের সংগ্রহালয় ও গবেষণা কেন্দ্র আমাদের দেশে কমই আছে।

এই আর্টস একরে এমামি চিজের আর্টের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল একটি কলা-মেলা— যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আর্ট-হাট’। অনেক ব্যক্তিশিল্পী ও প্রতিষ্ঠান স্টল করেছেন মুক্তাঙ্গনে। শহরের শিল্পীদের কাজ ছাড়াও ছিল গ্রামীণ ও আদিবাসী শিল্পীদের কাজের সম্ভার। সেগুলোই দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রথমে।

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্তি গ্রামের কাঠের মুখোশের স্টলটি যেমন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুখোশ-শিল্প এখনও খুব সজীব। এর মধ্যে কুশমণ্ডি গ্রামের মহিশবাথানে এই শিল্প এখনও প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ করে সঞ্জীবিত হয়ে আছে। এখানকার চর্চা প্রায় ৫০০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন চলে আসছে। এই গ্রামে আজও কাজ করে যাচ্ছেন ২৫০-জন মুখশিল্পী।

এই মুখোশগুলি তৈরি হয় গামার, শাল, আম, পাকুড় এবং মেহগনি কাঠ দিয়ে। এখানকার গম্ভীরা নাচের নানান পালায় এই মুখোশ যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনই স্বতন্ত্র শিল্প হিসাবেও শিল্পানুরাগীর কাছে এগুলি খুবই আকর্ষক। এর মধ্যে মিশে থাকে আদিম মানুষের গভীর চেতনায় স্থিত শঙ্কা এবং তা থেকে উত্তরণের সন্ধান। কোথাও কোথাও আদিমতার সঙ্গে ধ্রুপদী বোধও মিশে গেছে— যেমন শিবের মুখ নিয়ে করা একটি মুখোশে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের বিড়লা গ্রামের পটচিত্রশিল্পীরা এসেছিলেন তাঁদের পটচিত্রের সম্ভার নিয়ে। বর্ধমানের নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের স্টলও ছিল।

একটি রাধাকৃষ্ণের যুগল-মূর্তি ছিল সেখানে একই কাঠ কেটে গড়া। কৃষ্ণ বাঁশি বাজাচ্ছে। দুজনের দীঘল চোখের দৃষ্টিতে শুধু বাংলা নয়, ওড়িশার লোককলার ধ্যানও এসে মেশে। এ ছাড়া ডোকরা-র ছোট ছোট ধাতব মূর্তিগুলো সারল্য ও সুষমায় মুগ্ধ করেছে দর্শককে।

শহরের শিল্পসম্ভারের মধ্যে শৌনক চক্রবর্তীর ‘সেনসোরিয়াম’ স্টলটি উল্লেখযোগ্য এ কারণে যে, সেখানে দেখার সুযোগ হয় শানু লাহিড়ী, রবীন মণ্ডল, সনৎ কর, শুভাপ্রসন্ন, বিশ্বপতি মাইতি প্রমুখ শিল্পীর ছবি।

তনুশ্রী চক্রবর্তীর শিশু কোলে মায়ের ছবিটিতে আদিম ও লৌকিক আধুনিকতায় সমন্বিত হয়।

প্রবাল বড়াল ও তাঁর সঙ্গীদের স্টলে প্রবালের করা একটি মুখাবয়ব ও মা ও শিশুর ব্রোঞ্জে আদিমতা সম্পৃক্ত হয়ে থাকে। মনীষা সাহার নিসর্গগুলি তাঁর স্বকীয় রূপরীতিতে উজ্জ্বল। কয়েকটি পটে জলরঙে প্রস্ফুটিত পলাশের ছবিগুলি এই হেমন্তে বসন্তের আবেশ আনছিল।

কেতকী রায়চৌধুরী-র স্টলে তাঁর করা নিসর্গের বিমূর্তায়নের ভিতর আজকের সভ্যতার সংকটের প্রচ্ছন্ন আভাস যেন উন্মীলিত হচ্ছিল।

‘হরাইজন’ গ্রুপের চন্দন দাস, ‘বেঙ্গল পেইন্টার্স’ দলের অভিজিৎ ভট্টাচার্য, বিপুল বিকাশ মণ্ডল, সুব্রত বারিক ও চৈতালী চন্দের এবং কন্টেম্পোরারি নাইনস’ দলের শিল্পীদের অনেক কাজই ছিল যথেষ্ট সমৃদ্ধ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy